‘মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর ঘোষণা আইন বিরুদ্ধ’
২৭ নভেম্বর ২০১৪বলেন, বিশ্বের কোনো দেশে এর নজির নেই৷
মঙ্গলবার চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে ২১ দিনব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ঘোষণা করেন, ‘‘রাজধানী ঢাকার মাটিতে আর কোনো যুদ্ধাপরাধীর জানাজা হবে না৷''
মন্ত্রী বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন অনেক মুক্তিযোদ্ধা মুত্যুবরণ করেছেন, শহিদ হয়েছেন৷ তাঁদের শতকরা এক ভাগও জানাজা পাননি; শকুনে, কুকুরে ও শিয়ালে তাঁদের লাশ খেয়েছে৷ নদীতে, খাল-বিলে বা বাগানে সেই লাশ পচেছে৷ তাই ঢাকায় কোনো যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড হওয়ার পরস জানাজা করতে দেওয়া হবে না৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘আজকে মানবতার কথা আসে, ধর্মের কথা আসে৷ ১৯৭১ সালে আমাদের সহযোদ্ধা মুসলমানরা কেন জানাজা পাননি? তার আগে কৈফিয়ত দেওয়া হোক, বিচার করা হোক৷ তারপর আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়টি বিবেচনা করব, এর আগে নয়৷''এ নিয়ে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত নেতাদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী যুদ্ধাপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ঢাকায় জানাজা পড়তে না দেয়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা বেআইনি৷ তিনি এ কথা বলে আইনের লঙ্ঘন করেছেন৷ বাংলাদেশ কেন, পৃথিবীর কোনো দেশে এ রকম আইন বা নিয়ম নেই৷ তিনি আইন বিরুদ্ধ কথা বলেছেন৷''
তিনি বলেন, ‘‘মন্ত্রীর এ ধরণের কথা উসকানিমূলক৷'' আইন করে যুদ্ধাপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ঢাকায় জানাজা বন্ধ করা যায় কিনা – এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এ ধরণের আইনের কথা হাস্যকর৷ পৃথিবীর কোনো দেশে এ রকম আইন আছে বলে আমার জানা নেই৷'' এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী যে কথা বলেছেন তা সরকারের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করে বলেননি৷ তিনি নিজে থেকেই বলেছেন৷ এর পিছনে সরকাররের আইন প্রণয়নের কোনো উদ্যোগ বা প্রক্রিয়া স্পষ্ট নয়৷
অন্যদিকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক স ম রেজাউল করিম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর কথা আমি সরাসরি শুনিনি, সংবাদমাধ্যম থেকে জেনেছি৷ তিনি কোন প্রেক্ষাপটে এ কথা বলেছেন, কেন বলেছেন, তাঁর ব্যাখ্যা তিনিই দিতে পারবেন৷ তবে বাংলাদেশের আইনে কোনো জায়গায় কারুর জানাজা নিষিদ্ধ বা বন্ধ করার বিধান নেই৷ এছাড়া এ সবের জন্য আইন করা যায় কিনা – তাও প্রশ্ন সাপেক্ষ৷''
উল্লেখ্য, গত ২৫শে অক্টোবর জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের জানাজা হয় ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে৷ সেখানে তাঁর জানাজার বিরোধিতা করেছিল গণজাগরণ মঞ্চসহ আরো কিছু সংগঠন৷ তারা প্রতিবাদও জানিয়েছিল৷ কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে জানাজায় কোনো বাধা দেয়া হয়নি৷ বরং জানাজার নিরপত্তায় ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়৷ জানাজা নির্বিঘ্নে হয়ে যাওয়ার পর, গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহ হিল আমান আযমি সরকারকে ধন্যবাদও জানান৷ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ৯০ বছরের কারাদণ্ড মাথায় নিয়ে বন্দি অবস্থায় গোলাম আযম ২৩শে অক্টোবর রাতে মারা যান৷