অসলো ভাষণ
১৬ জুন ২০১২অনেক সময় লেগেছে৷ প্রায় দুটি যুগ পার হয়ে গিয়েছে এই সময়ের মধ্যে৷ মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সাং সু চি ১৯৯১ সালে যখন নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন, সেদিন তিনি গৃহবন্দি৷ সামরিক শাসনের চাপে ওষ্ঠাগত প্রাণ গোটা দেশের৷ ‘সেই বন্দিত্বের মধ্যেও এই নোবেল পুরস্কার পাওয়ার সংবাদে নিজের একাকীত্ব ভুলে গিয়েছিলাম৷ মনে হয়েছিল, গোটা বিশ্ব আমার পাশে আছে৷ নতুন করে লড়াইয়ের প্রেরণা দিয়েছিল আমায় এই পুরস্কার৷ তাই নোবেল কমিটিকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ৷'
অসলোয় নোবেল পুরস্কারের ভাষণে একুশ বছর পরে সেদিনের অনুভূতির কথা জানিয়েছেন সু চি৷ দাবি তুলেছেন, তাঁর দেশের অভ্যন্তরে জেলখানায় আটক থাকা সব রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির জন্য৷ বলেছেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে, তার মানে এই নয় সামরিক শাসনের অন্ধকার কেটে গিয়েছে৷ গোটা বিশ্বের কাছে এই মহান নেত্রীর আবেদন, মিয়ানমারের দিকে তাকান৷
সু চি-র এই ভাষণ এমন সময়ে শোনা গেল যখন অন্যসব কিছু ছাপিয়ে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে সমস্যা ক্রমশ বেড়ে উঠছে৷ রাখাইন প্রদেশে শুরু হওয়া জাতিগত দাঙ্গার বলি হয়েছেন মোট ৫০ জন, এমন খবর শোনা গেছে শনিবার সকাল থেকেই৷ মিয়ানমারের জাতীয় মিডিয়া স্বয়ং জানিয়েছে এই তথ্য৷ সু চি অবশ্য তাঁর ভাষণের কোথাও রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে সরাসরি কোন কথা বলেন নি৷ কিন্তু মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জাতিগত সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন৷ বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সরকারের চলতি সংঘর্ষের কথা বলেছেন তিনি৷ উত্তর এবং পূর্ব মিয়ানমারের অস্থির আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথাও উল্লেখ করেছেন৷ মিয়ানমারের জন্য শান্তি আর গণতন্ত্রের বার্তা নিজের দেশের সীমানার বাইরে অন্য সকলকে জানাতে পেরে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন সু চি৷
শান্ত কিন্তু দৃঢ় স্বরে সু চির ভাষণ এদিন অসলোর সিটি হলে নোবেল কমিটির আমন্ত্রিত ৬০০ মানুষকে মুগ্ধ করেছে৷ নরওয়ের রাজা হ্যারল্ড, রাণী সোনিয়া সহ শত শত আমন্ত্রিত এদিন মোট দুইবার সু চি কে দাঁড়িয়ে উঠে অভিবাদন জানান৷ আর তাঁর পুরো ভাষণের সময়ে হল জুড়ে বিরাজ করেছে পিনপতন নীরবতা৷
এসইউবি (এএফপি, রয়টার্স) / আরআই