‘মিষ্টি নদী’-তে যখন বিষ ছড়ায়
বিষাক্ত কাদা যেভাবে অ্যাটলান্টিকে গিয়ে পড়ছে, তা থেকেই রিও দোসে দুর্ঘটনার নাটকীয়তা বোঝা যায়৷ ব্রাজিলের ইতিহাসে সম্ভবত বৃহত্তম পরিবেশ বিপর্যয়, বলছেন বিশেষজ্ঞরা৷
যখন বাঁধ ভাঙে
তারিখটা ছিল ৫ই নভেম্বর৷ সেদিন রাত্রে মারিয়ানা শহরের কাছে একটি লোহার খনির ময়লা জল ধরার সুবিশাল ট্যাংকটির বাঁধ ভেঙে পাঁচ কোটি টন কাদা রিও দোসে নদীর উপত্যকায় গিয়ে পড়ে৷ সেই কাদায় আর্সেনিক, সিসা, পারদ ও তামা মেশানো ছিল৷
গ্রাম ডুবে গেল
কাদার স্রোতে প্রথমেই ডুবে যায় বেন্তো রদরিগেস নামের একটি গ্রাম৷ লোহার খনির ময়লা জলের ট্যাংকের ঠিক নীচেই এই গ্রাম৷ ১৩ জন মানুষ প্রাণ হারান, দশজন এখনও নিখোঁজ৷ গ্রামের ছ’শো বাসিন্দার প্রায় সকলেই আজ বাস্তুহারা৷
নিখোঁজদের খোঁজে
বাড়িঘর কাদার স্রোতে ডুবে যাবার আগেই অধিকাংশ মানুষ পালিয়ে যেতে পেরেছেন৷ ত্রাণকর্মীরা এখনও নিখোঁজদের খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছেন৷ তবে কাউকে জীবিত খুঁজে পাবার আশা কম৷
খাবার পানি নাই
রিও দোসে নদীর উপত্যকা আয়তনে পর্তুগালের সমান৷ নদীতীরে বাস, এমন প্রায় আড়াই লাখ মানুষের এখন খাবার পানি নাই৷ সেনা আর ত্রাণকর্মীরা প্লাস্টিকের বোতল ও ট্যাংকারে করে জল নিয়ে আসছেন, যদিও অনেক গ্রামে পৌঁছনো শক্ত৷
কাদাজল
কস্টা বলেন, তিনি নাকি আগে রোজ সাঁতার কাটতে যেতেন৷ বাঁধ ভাঙার পরে নদীতীরে তাঁর বাড়ির বারান্দা থেকে যে দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়, তাতে তাঁর আর সাঁতার কাটতে ইচ্ছে করে না৷ স্থানে স্থানে কাদা আর নুড়ি পাথর জমে রয়েছে, পানির কোনো চিহ্ন নেই৷
ধরার মতো আর মাছ নেই
কাদার স্রোতে রিও দোসে নদীর জেলেদের জীবিকা বিপন্ন৷ সর্বত্র মরা মাছ, দুর্গন্ধ৷ পরিবেশ বিপর্যয়ের আগে রিও দোসে তার প্রাণীবৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত ছিল৷
বিষাক্ত কাদা সাগরে পৌঁছেছে
৬৬৬ কিলোমিটার পার হয়ে কাদা গিয়ে পড়ছে অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে৷ ব্রাজিল কর্তৃপক্ষ গোড়ায় নিষ্ক্রিয় থাকেন, এমনকি সে জন্য জাতিসংঘের কাছে সমালোচনাও শুনতে হয়েছে৷ ইতিমধ্যে সরকার নদী পরিষ্কারের জন্য সামার্কো খনিসংস্থার কাছ থেকে পাঁচশো কোটি ইউরো ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন৷
সামার্কো নারাজ
জেলেরা পোভোয়াসাও সৈকতে মরা মাছ, কাঁকড়া ইত্যাদি জড়ো করছেন৷ খনিসংস্থা সামার্কো জেলেদের দিয়ে এ কাজ করাচ্ছে৷ সামার্কো সংস্থাটির মালিক আধা ব্রিটিশ-অস্ট্রেলীয় খনিজ পদার্থের কোম্পানি বিএইচপি ও ব্রাজিলের খনিসংস্থা ভালে৷ ক্ষয়ক্ষতি যতোই হোক, সামার্কো বলছে, নদীর কাদা বিষাক্ত নয়, মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকরও নয়৷
টুরিস্টরা শঙ্কিত
কাদার স্রোত রিজেন্সিয়া সৈকতাবাস পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে৷ রিও দোসে-র মোহানায় অবস্থিত এই গ্রামটি সার্ফিং আর সুবিশাল সাগরের কাছিমদের জন্য বিখ্যাত৷ কাছিমরা তীরেই ডিম পাড়ে৷ ইতিমধ্যে কিছু কিছু টুরিস্ট তাদের বুকিং ক্যানসেল করতে শুরু করেছেন৷
বিপর্যয়ের পরিধি অজ্ঞাত
ব্রাজিলের এক জীববিজ্ঞানী অন্দ্রে রুশচি জার্মান টেলিভিশন-কে বলেছেন যে, পরিবেশে হানিকর পদার্থের রেশ মিটতে অন্তত আরো একশো বছর লেগে যাবে, বলে তাঁর ধারণা৷ আরেকটি বিপদ হল, মিনাস জেরাইস খনি অঞ্চলের অন্তত ১৬টি জলাধার পুরোপুরি সুরক্ষিত নয়, বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন৷ যে কারণে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই অঞ্চলটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ব্রাজিলের ফুকুশিমা’৷