মিশরে বিরোধীদের উপর হামলা বাড়ছে
২৪ এপ্রিল ২০১৩সহিষ্ণুতার অভাব
মিশরের সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনা করলে তার পরিণাম কঠিন হতে পারে৷ এই মুহূর্তে এমন ঝুঁকি নিতে চাইছে না অনেকেই৷ প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুরসির বিরুদ্ধে একটি বেফাঁস মন্তব্যের জের ধরেই পুলিশের রোষের মুখে পড়তে হতে পারে৷ মিশরের মানবাধিকার সংগঠন ইওএইচআর-এর সূত্র অনুযায়ী মুরসি ক্ষমতায় আসার পর সংবাদ মাধ্যমের বিরুদ্ধে প্রায় ৬০০ অভিযোগ জমা পড়েছে৷ সরকারের কোনো সমালোচনা করলেই মুসলিম ব্রাদারহুড ও তাদের প্রেসিডেন্ট অভিযোগ করেন, যে জনগণকে হিংসায় প্ররোচনা দেওয়া হচ্ছে৷
মিশরে সংবাদ মাধ্যমের অধিকারের জন্য লড়াই করছে ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ফ্রিডম অফ থট অ্যান্ড এক্সপ্রেশন' নামের সংস্থা৷ তাদের প্রতিনিধি নিহাদ আবুদ বললেন, ‘‘রাষ্ট্র যদি প্রতিদিন সবাইকে বলে চলে, যে মিডিয়াই হিংসার ডাক দিচ্ছে, তাহলে মুরসির ভোটাররা সেটা বিশ্বাস করে বৈকি৷'' তাই টেলিভিশনে কোনো অনুষ্ঠানের পরেই প্রায়ই দেখা যায়, যে সরকারের তাঁবেদাররা সঞ্চালক বা অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করে৷
সাংবাদিকদের ঝুঁকি
বিক্ষোভ সমাবেশ বা সরকার-বিরোধী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটলে সাংবাদিকদের বিপদ বেড়েই চলেছে৷ প্রশাসনের প্ররোচনায় অনেক সময় সাধারণ মানুষও সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয় বা তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়৷ গত কয়েক মাসে এমন কিছু হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে৷ সাংবাদিক নিগ্রহ, তাদের মারধর বা গুলি চালানোর প্রায় ২০টি ঘটনার কথা জানেন নিহাদ আবুদ৷
মিশরে সরকার-বিরোধীদের উপরেও নৃশংস হামলার ঘটনা বাড়ছে৷ ‘আহরাম অনলাইন' সংবাদ পোর্টালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্রাদারহুডের সদর দপ্তরের সামনে সংঘর্ষের জের ধরে মুসলিম ব্রাদারহুডের সুপরিচিত আইনজীবী আব্দেল মোনেম আব্দেল মাকসুদ নিজে ১৬৯ জনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন৷ বিরোধী কর্মী-সমর্থকদের হামলা শিকার হতে হচ্ছে৷ তাদের উপর বিশেষ ধরনের শারীরিক নিগ্রহ ঘটছে৷ যেমন ফেসবুকে সরকার-বিরোধী তৎপরতা চালান মহম্মদ এল-গিন্দি৷ আচমকা তিনি নিখোঁজ হয়ে যান৷ অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাঁকে এক হাসপাতালে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়৷ কোমায় চলে গিয়েছিলেন তিনি৷ পুলিশ জানায়, গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল৷ তারপর জানানো হয়, তিনি মারা গেছেন৷
ব্রাদারহুডের গুণ্ডামি
অশান্তি এড়াতে কর্তৃপক্ষ গোটা ঘটনাটিকে আড়াল করার চেষ্টা করেছিল, এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে৷ ব্রাদারহুডের এক প্রাক্তন সমর্থক নিউজউইক পত্রিকার কাছে দাবি করেছেন, তিনি কায়রোর বাইরে এক পুলিশ ক্যাম্পে এল-গিন্দিকে চরম আহত অবস্থায় দেখেছিলেন৷ প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, সেই ক্যাম্পে ব্রাদারহুডের সদস্যরা ‘অপরাধী'দের জেরা ও মারধর করে থাকে৷
এমন ঘটনা বিরল নয়৷ ২০১২ সালের ৫ই ডিসেম্বর প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের সামনে সরকার-বিরোধী বিক্ষোভকারীদের উপর চড়াও হয়েছিল ব্রাদারহুডের সমর্থকরা৷ তখন থেকেই দমন-পীড়নের শুরু৷ ব্রাদারহুডের অনেক তরুণ কর্মী বিরোধীদের গ্রেপ্তার করে৷ তারপর প্রাসাদের ভিতরে প্রাচীরের আড়ালে তাদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন তারেক জাগলুল আসরান৷ এমনকি প্রায়ই সরাসরি কায়রোর মিডিয়া প্রোডাকশন সিটি'র দরজা আটকে দাঁড়িয়ে থাকে ব্রাদারহুড কর্মীরা৷
‘সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা'
তারেক জাগলুল আসরানের মতে, এ সব কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এর মধ্যে স্পষ্ট পরিকল্পনার ছাপ রয়েছে৷ কারণ ব্রাদারহুড অস্থায়ী সংসদে বসে এমন সব আইন অনুমোদন করে চলেছে, যার উদ্দেশ্যই হচ্ছে দমন নীতিকে আরও জোরদার করা৷ ফলে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ থেকে শুরু করে অন্যান্য অনেক অধিকার খর্ব করে বিরোধী ও সমালোচকদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা চলছে৷ আসরান মনে করেন, নতুন নির্বাচনের আগেই তড়িঘড়ি করে এই সব কাজ শেষ করতে চাইছে ব্রাদারহুড৷