মিশরে বিক্ষোভ দিবস
১৬ আগস্ট ২০১৩গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, বুধবার নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছে ৬৩৮ জন৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় খোদ গণমাধ্যমকে এই পরিসংখ্যান দিলেও রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তা অস্বীকার করেছে৷ বৃহস্পতিবার টুইটারে জুমার নামাজের পর কায়রোর সব মসজিদ থেকে রামসিস স্কয়ারে সবাইকে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানান ব্রাদারহুডের মুখপাত্র গেহাদ আল হাদ্দাদ৷
অন্যদিকে, দলটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রিয়জনদের হারানোয় তাদের মনে যে শোক আর কষ্টের অনুভূতি জন্ম নিয়েছে সেটিকে শক্তিতে পরিণত করে সেনা অভ্যুত্থানের কড়া জবাব দিতে হবে৷
পশ্চিমা বিশ্বের ব্যাপক সমালোচনার পরও মিশরের সেনা সমর্থিত সরকার হুঁশিয়ার করে দিয়েছে, পুলিশ এবং গণ প্রতিষ্ঠানের উপর যারা হামলা চালাবে, তাদের উপর গুলি চালাতে বাধ্য হবে নিরাপত্তাবাহিনী৷ বৃহস্পতিবার কায়রোর একটি সরকারি ভবনে আগুন দেয়ার পর এই হুঁশিয়ারি দেয় তারা৷
এদিকে, এই আন্দোলনের প্রতিবাদে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে নিরপেক্ষ এবং বামপন্থি জোট ন্যাশনাল স্যালভেশন ফ্রন্ট৷ মুসলিম ব্রাদারহুডের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কঠোর জবাব দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা৷
আন্তর্জাতিক নিন্দা
চলমান সহিংসতার কারণে মিশরে দাতা দেশগুলোর অর্থ সহায়তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে৷ সহিংসতার আগে মিশরকে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ সহায়তা দেয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছিল সৌদি আরব, কুয়েত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত৷ তবে, সামরিক মহড়া বাতিল করলেও অর্থ সহায়তা বাতিলের কোন ঘোষণা দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র৷
বেসামরিক নাগরিকদের উপর সেনা অভিযানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ এক বিবৃতিতে তিনি জানান, এই সহিংসতার পর মিশরের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখা কঠিন হবে৷ এ কারণে আগামী মাসে মিশরের সাথে যৌথ সামরিক মহড়া বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি৷
অন্যদিকে, মিশরের প্রেসিডেন্ট এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ওবামার বক্তব্য ঘটনার উপর ভিত্তি করে নয়; তার এই বক্তব্য সন্ত্রাসী দলগুলোকে উস্কে দিতে পারে৷ চলমান সহিংসতার কারণে মিশরে অবস্থিত সব নাগরিককে দেশে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷
এদিকে, মিশরের এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ৷ মহাসচিব বান কি মুন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীদের উপর নিরাপত্তাকর্মীদের বলপ্রয়োগে তিনি মর্মাহত৷
তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রেচেপ তায়িপ এর্দোয়ান মিশরের সহিংসতাকে গণতন্ত্রে ফেরার পথে মারাত্মক প্রতিবন্ধক বলে উল্লেখ করেছেন৷
সহিংসতা চরমে
বুধবার নিরাপত্তাবাহিনী কায়রোয় মুরসি সমর্থকদের দুটি ক্যাম্প উচ্ছেদ করতে গেলে এই সহিংসতার ঘটনা ঘটে৷ পরবর্তীতে এই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য শহরে৷ সরকার মাস জুড়ে জরুরি অবস্থা এবং রাজধানী কায়রো সহ বিভিন্ন শহরে ও প্রদেশে সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত কারফিউ ঘোষণা করেছে৷
মুরসি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তৃতীয়বারের মত এত বড় সহিংসতার ঘটনা ঘটল৷ তবে প্রাণহানির সংখ্যা এবারই বেশি৷ ২০১১ সালের ২৮শে জানুয়ারি হোসনি মুবারকের পতনের দাবিতে ফ্রাইডে অফ অ্যাঙ্গার বা ‘‘ক্রোধের শুক্রবারে'' বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিল মুসলিম ব্রাদারহুড৷ আর ঐ আন্দোলনেই পতন হয় মুবারকের৷
এপিবি/এসবি (ডিপিএ/রয়টার্স)