মিট রমনি বলছেন বটে, পারবেন তো!
১ নভেম্বর ২০১২নির্বাচনি প্রচারনায় খুব ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ওবামা আর রমনি৷ কথা কেউ কম বলছেন না৷ সব বিষয়েই ভোটারদের আশ্বস্ত করার জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন৷ অর্থনীতির পর বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে বোধহয় পররাষ্ট্রনীতি৷ সেখানে রিপাবলিকান প্রার্থী রমনির আশ্বাস, তিনি নির্বাচিত হলে আরেকটা ‘যুক্তরাষ্ট্রের শতক' শুরু হবে৷ কিন্তু কিভাবে? রমনি বলছেন, স্বচ্ছতা আর সংকল্প নিয়ে কাজ করলেই সেটা সম্ভব৷
ওবামা নির্বাচিত হবার পরও প্রায় এমন স্বপ্নই দেখেছিল যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ৷ বরাবরের মতো তখনও তাঁদের আশা ছিল বিশ্বনেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান আরো সুদৃঢ় করবে, সারা বিশ্বে প্রভাব বাড়বে আরো৷ কিন্তু বাস্তবে অনেকটা উল্টো হয়েছে৷ আফগানিস্তানে লেজে-গোবড়ে অবস্থা, ইরাক ইস্যুতেও যা হাল তাতে যুক্তরাষ্ট্রের অনেকেই গর্বের কিছু দেখছেন না৷ এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের মাত্র ২৪ ভাগ মানুষ মনে করেন তাদের দেশ কয়েক দশক আগে বিশ্বজুড়ে যতটা প্রভাব বিস্তার করতো এখন তার ধারে কাছে আছে৷
অর্থাৎ ওবামার পররাষ্ট্রনীতি যে মার খেয়েছে তা প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত জরিপেই৷ তবে কিছু ক্ষেত্রে ওবামার কৌশল যে কাজে এসেছে তা ঠিক৷ কিন্তু বর্তমান প্রেসিডেন্টের জন্য দুঃখজনক হলো, সেগুলোর জন্যও সমালোচিতই হতে হচ্ছে তাঁকে৷ এ প্রসঙ্গে উঠে আসছে লিবিয়া প্রসঙ্গ৷ গাদ্দাফিকে হঠাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি কিছু করেনি৷ কিন্তু আড়াল থেকে যে কলকাঠি নেড়েছে তা এখন সবারই জানা৷ নিউ ইয়র্কার ম্যাগাজিনকে ওবামা প্রশাসনের এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিই বলে ফেলেছিলেন, ‘পুরো ব্যাপারটায় পেছন থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ওবামা৷'
এই পেছন থেকে নেতৃত্ব দেয়াটা একদমই বরদাশত করতে পারেন না যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ৷ ক'দিন আগে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিৎসা রাইস ওবামার পররাষ্ট্রনীতির সমালোচনা করে বলেছেন, ‘নেতৃত্বের ব্যাপারে দোনোমনা হলে চলে না৷ পেছন থেকে তো নেতৃত্ব দেয়া হয় না৷' রমনির মুখে এখন তাই প্রকৃত নেতাসুলভ কথা৷ স্বচ্ছতা আর সংকল্প দিয়ে কাজ করে নতুন এক ‘অ্যামেরিকান সেঞ্চুরি' শুরু করবেন৷ কিন্তু পারবেন তো?
জোসেফ ব্রামল মনে করেন পারা প্রায় অসম্ভব৷ জার্মান কাউন্সিলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত এই ভদ্রলোক বলছেন, দেশটি যখন একই থাকবে, বাস্তবতাও বদলাবেনা, তাই ক্ষমতায় গিয়েই রমনি পরিস্থিতি পাল্টে দেবেন এ আশা করাই বোকামি৷ অর্থনৈতিক মন্দার ধকল সামলাতে হিমশিম খাওয়া দেশটিতে সবচেয়ে বড় সমস্যা নিরব এক অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ৷ প্রেসিডেন্ট ডেমোক্রেট দলের, প্রশাসনেও সেই দলেরই দাপট, কিন্তু হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভে রিপাবলিকানদের প্রাধান্য৷ জোসেফ বামল মনে করেন, দেশের ভেতরে ডেমোক্রেট আর রিপাবলিকানের এই দ্বন্দ্বকে পাশ কাটিয়ে ওবামা বা রমনি কারো পক্ষেই এগিয়ে চলা সম্ভব নয়৷
মোট কথা আশ্বাস, প্রত্যাশা, বাস্তবতা আর প্রাপ্তি সবসময় এক হয় না৷ হয় না যে তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ ওবামা৷ নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট আফগানিস্তানে সৈন্য পাঠিয়েছেন, সম্মতি দিয়েছেন ইয়েমেন আর পাকিস্তানে ড্রোন হামলা চালানোয়৷ ভাবা যায়!
প্রতিবেদন: স্পেন্সার কিমবল/এসিবি
সম্পাদনা: জাহিদুল হক