উত্তর কোরিয়া
১৯ জুলাই ২০১২উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএ বুধবার প্রকাশ করেছে কিম জং-উন'এর মার্শাল পদবি গ্রহণের খবর৷ এতে বলা হয়েছে, ‘‘কোরিয়ান পিপলস আর্মি'র সর্বোচ্চ কমান্ডার কিম জং-উন'কে মার্শাল পদবি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে৷'' দেশটির শীর্ষ প্রশাসনিক এবং সামরিক কর্মকর্তাদের বৈঠকে এবং কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ পরিষদে মঙ্গলবারই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় বলে জানিয়েছে কেসিএনএ৷ জং-উন'এর আগে এই মার্শাল পদবি তাঁর পিতা কিম জং-ইল এবং তাঁর পিতামহ ও উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা এবং জনক কিম ইল-সুং গ্রহণ করেছিলেন৷
কিম ইল-সুং হঠাৎ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু বরণের দু'বছর আগে ১৯৯২ সালে মার্শাল পদবি গ্রহণ করেছিলেন৷ আর কিম জং-ইল'কে এই পদবি দেওয়া হয় তাঁর মৃত্যুর পর গত ফেব্রুয়ারি মাসে৷ ডঙ্গুক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কিম ইয়ং-হিয়ন বলেন, ‘‘সাবেক দুই নেতা যে পদবি ধারণ করেছিলেন, সেই পদবি গ্রহণের মধ্য দিয়ে জং-উন মূলত একজন যোগ্য এবং উপযুক্ত উত্তরসূরি হিসেবে নিজের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করছেন৷''
তবে জং-উন হঠাৎ করেই এই সর্বোচ্চ সামরিক পদবি ধারণ করলেন - এমন নয়৷ বরং গত সাত মাস আগে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে দেশটির সামরিক ও রাজনৈতিক শীর্ষ আসনে অধিষ্ঠিত হচ্ছেন তিনি৷ পরিবর্তন এনেছেন সামরিক বাহিনীর শীর্ষ পদেও৷ সর্বশেষ মাত্র দু'দিন আগে সেনা প্রধান রি ইয়ং-হো'কে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে৷ এর পেছনে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ‘শারীরিক অসুস্থতা'৷ এছাড়া মঙ্গলবার পেছনের সারির সেনা কর্মকর্তা হিয়ন ইয়ং-চো'কে ভাইস-মার্শাল হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে৷ ফলে পরবর্তী সেনা প্রধান হিসেবে হিয়ন ইয়ং চো'র দায়িত্ব গ্রহণের সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷
মার্শাল পদবি গ্রহণের আগে অবশ্য জং-উন চার-তারকা খচিত জেনারেল পদবি গ্রহণ করেন ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে৷ আর কিম জং-ইল'এর মৃত্যুর পর ৩০শে ডিসেম্বর ওয়ার্কার্স পার্টির বৈঠকে ১২ লাখ সদস্য বিশিষ্ট কোরিয়ান পিপলস আর্মি'র সর্বোচ্চ কমান্ডার হিসেবে জং-উন'এর নাম ঘোষণা করা হয়৷ তিন মাস পর ১১ই এপ্রিল ওয়ার্কার্স পার্টির বিশেষ সম্মেলনে জং-উন'কে দলের প্রথম সম্পাদক বানানো হয়৷
একইসাথে দলের রাজনৈতিক শাখার শীর্ষস্থানীয় পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট প্রেসিডিয়াম-এর সদস্য মনোনীত করা হয় তাঁকে৷ এছাড়া একই সম্মেলনে তাঁকে দলের সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বও দেওয়া হয়৷ তবে জং-উন'কে এই কমিশনের ভাইস-চেয়ারম্যান বানানো হয়েছিল ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে৷ এরপর দেশটির সুপ্রিম পিপলস অ্যাসেম্বলি ১৩ই এপ্রিলের বিশেষ অধিবেশনে জং-উন'কে ন্যাশনাল ডিফেন্স কমিশনের প্রথম চেয়ারম্যান মনোনীত করে৷ অধ্যাপক কিম ইয়ং-হিয়ন তাই যথার্থই বলেছেন, ‘‘জং-উন প্রায় সকল সামরিক এবং রাজনৈতিক শীর্ষ পদগুলো দখল করার পর তাঁর জন্য এখন এটিই অর্থাৎ মার্শাল পদবিটিই গ্রহণ করা বাকি ছিল৷''
এদিকে, উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ে পরিবর্তন এবং জং-উন'এর মার্শাল পদবি গ্রহণের প্রেক্ষিতে উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা বৈঠক করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি মিয়ুং-বাক৷ তিনি পরমাণু অস্ত্র সমৃদ্ধ উত্তরের কর্মকাণ্ড নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার নির্দেশ দেন৷
অন্যদিকে, দেশটির শীর্ষ নেতার এই পদবি গ্রহণের খবরে উত্তর কোরিয়ার মানুষ উল্লসিত বলে খবর দিচ্ছে কেসিএনএ৷ সংস্থাটি জানিয়েছে, ‘‘সারাদেশের মানুষ এটিকে একটি জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদাপূর্ণ ঘটনা হিসেবে দেখছেন৷''
এএইচ / ডিজি (এপি, এএফপি)