1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহারের পর ইরাকের পরিস্থিতি নিয়ে জল্পনা-কল্পনা

৪ আগস্ট ২০১১

ইরাকে চলতি বছর শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও কি মার্কিন সেনা থাকবে? তার প্রয়োজনীয়তা ঠিক কতটা ? পূর্বের চুক্তি বলছে, এ বছরের শেষেই সব মার্কিন সেনা দেশে ফিরে যাবে৷ এখন শুরু হয়েছে এ নিয়ে বিশদ আলোচনা৷

https://p.dw.com/p/12AMq
ইরাকে মার্কিন সেনাপ্রধান মাইক ম্যুলেন৷ মাঝে৷ছবি: AP

ভবিষ্যতে ওয়াশিংটনের ভূমিকা

২০১১ সালের শেষেই ইরাক থেকে শেষ ৪৬ হাজার মার্কিন বাহিনী ফিরিয়ে নেওয়ার ডেটলাইন ঘোষণা করেছিল ওবামা প্রশাসন৷ সেইমত যদি সব সেনা দেশে ফিরে যায়, তাহলে তারপরেও ইরাকের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বজায় রাখতে এবং ইরাকি নিরাপত্তাবাহিনীকে আরও প্রশিক্ষণ দিতে কি মার্কিন সেনাদের প্রয়োজন? যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য এক্ষেত্রে দরকার হয় ইরাকের, সেই সাহায্য কীভাবে হতে পারে? যেসব সেনা থাকবে, তাদের পরিস্থিতিই বা কী হবে? তারা কী এখনকার মতই আইনের উর্দ্ধে থেকে ইরাকে যথেচ্ছ আচরণ করতে পারবে? যুক্তরাষ্ট্রের তোলা এইসব প্রশ্ন নিয়েই আলোচনায় বসেছিল বাগদাদের প্রশাসন৷ ক্ষমতাসীন দল, বিরোধীরা এবং মুকতাদা আল সদরের তরফেও প্রতিনিধি হাজির ছিলেন বৈঠকে৷ বৈঠকের পৌরোহিত্য করেন প্রেসিডেন্ট জালাল তালাবানি৷

বৈঠকের পর তালাবানি একটি লিখিত বিবৃতি প্রকাশ করেছেন৷ যাতে তিনি বলেছেন, ইরাক থেকে মার্কিন সেনা ফিরিয়ে নেওয়ার পর ইরাকের প্রয়োজনে সেদেশে মার্কিন বাহিনীর উপস্থিতি থাকবে কি না, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা শুরু করার বিষয়ে সর্বদলীয় সম্মতি মিলেছে৷ শুধুমাত্র মুকতাদা আল সদরের পক্ষে এ বিষয়ে সহমত পোষণ করা হয়নি৷

কিন্তু ইরাকে নবপর্যায়ে মার্কিন সেনা রাখা হলে, তাদের সংখ্যা কত হবে? ২০১১ সালের পর আরও কতদিন তাদের প্রয়োজন পড়বে এসব প্রশ্নের জবাব চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ যে কারণে তারা বেশ কিছুদিন ধরে এ বিষয়ে আলাপ আলোচনা শুরু করতে ইরাক সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছে৷ সেইসব প্রশ্নের মীমাংসা করতেই শুরু হল এই উদ্যোগ৷ বিষয়টাকে এভাবেই ব্যাখ্যা করেছেন ইরাকি প্রেসিডেন্ট৷

Superteaser NO FLASH US-Truppenabzug aus dem Irak
ঘরে ফেরা মার্কিন সেনারা পরিবারের সঙ্গে মিলিত হচ্ছেনছবি: AP

মার্কিন সেনাদের আইনি রক্ষাকবচ

কিন্তু যে প্রশ্নটি নিয়ে ইরাকে হাজির মার্কিন সেনাদের বিষয়ে একাধিক অভিযোগ উঠেছে এবং উঠছে, সে বিষয়টিকে এড়িয়েই গিয়েছে মঙ্গলবার রাতের বৈঠক৷ প্রশ্ন হল, ইরাকে উপস্থিত মার্কিন সেনারা আইনের উর্দ্ধে থাকবে, না কি থাকবে না৷ কারণ, ইরাকের অভ্যন্তরে মার্কিন বাহিনীর একাংশের অপরাধমূলক কাজকর্মের জন্য, বা জঙ্গিদমনের নামে নির্বিচারে সাধারণ মানুষ, নারী, শিশুকে হত্যা করার মত ঘটনা নিয়ে বহুবার শোরগোল তুলেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলি৷ এ নিয়ে সোচ্চার থেকেছে মিডিয়াও৷ সেক্ষেত্রে, ইরাকের নিরাপত্তার দায়িত্ব হাতে নিয়ে রাখা যে মার্কিন বাহিনীকে এখনও পর্যন্ত সহ্য করছে ইরাকের মানুষ, তাঁদের সেই সহনশীলতা আদৌ কি থাকবে ২০১১ সাল শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও? মঙ্গলবার রাতের বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী নূর ই আল মালিকি সহ একাধিক নেতার সামনে এ প্রশ্ন রাখা হলে এর জবাবে তাঁরা সকলেই বলেন, আলোচনা হয়েছে মূলত ২০১১ সালের পর ইরাকে মার্কিন বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে৷ এ বিষয়টি আলোচনায় আসেনি৷

ইরাকের সেনাবাহিনী কি প্রস্তুত?

আলোচনায় আরও যে বিষয়গুলি এসেছে, বা আসছে, সেগুলি হল, ইরাকের নিরাপত্তা বাহিনীর আরও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে কি না৷ ইতিমধ্যেই সাম্প্রতিক অতীতে ইরাকি নিরাপত্তা মন্ত্রক এবং মার্কিন সেনাবাহিনীর উদ্যোগে কৃত একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষায় ইরাকের নিরাপত্তা বাহিনী মোটের ওপর যথেষ্ট হলেও, দেশের সীমানা, বিশেষত আকাশ এবং জলসীমানার সুরক্ষার জন্য এখনও প্রস্তুত নয় ইরাকের সেনাবাহিনী৷ ইরাকের সেনাপ্রধান লেফট্যানেন্ট জেনারেল বাবাকের জেবারি বারবার জোর দিয়ে বলেছেন, দেশের পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেদের হাতে তুলে নিতে গেলে ইরাকের সেনাবাহিনীর আরও একটি দশক ধরে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন৷

সেই প্রশিক্ষণ কী ইরাকের সেনা ও নিরাপত্তাবাহিনী পাবে? পেলেও তা কতদিনের জন্য? মোট কত মার্কিন বাহিনীকে হাজির রাখতে হবে ইরাকে ২০১১ সালের পরেও? এসব প্রশ্ন নিয়েই এখন আলোচনার পথ উন্মুক্ত হল ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাগদাদের৷ সর্বদলীয় সহমত মোটের ওপর পাওয়ার পর এখন আগামীর দিকে তাকাতে চায় বাগদাদ৷

সমস্যা আরও

সমস্যা আরও আছে৷ শুধু নিরাপত্তাই তো নয়, মাঝে ইরাকের অভ্যন্তরে জঙ্গি হামলা অনেক কমে এলেও সাম্প্রতিক অতীতে নতুন করে মাথাচাড়া দিচ্ছে একের পর এক হামলা৷ বিশেষত সরকারি স্থাপনা বা নিরাপত্তাবাহিনীর ওপরেই হামলার ঘটনা বাড়ছে৷ জঙ্গিরা বুঝিয়ে দিতে চায়, এই প্রশাসনকে মানতে তারা তৈরি নয়৷ এখন দেখার বিষয়, ইরাক থেকে সেনা প্রত্যাহারের দিনক্ষণ মিলিয়ে সব সেনা ফিরিয়ে নিতে পারে কিনা ওবামা প্রশাসন৷ ভুলে গেলে চলবে না, ইরাকের অভ্যন্তরে মার্কিন বাহিনীর উপস্থিতি নিয়ে অভিযোগ কিন্তু বহুদিনের৷ সামাজিক অগ্রগতির জন্যও এভাবে অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীলতা কাটানোটা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সমাজবিদরা৷ শেষ পর্যন্ত কোনদিকে গড়াবে জল, সেটা বলবে সময়৷

প্রতিবেদন : সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়

সম্পাদনা : সঞ্জীব বর্মন