1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী'রা কি মানবাধিকার কাউন্সিলের উপযুক্ত?

২০ অক্টোবর ২০১৭

জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্যপদ পেয়েছে আফগানিস্তান, কঙ্গো ও পাকিস্তান৷ কিন্তু অধিকার রক্ষার প্রশ্নে এসব দেশের রেকর্ডনিন্দনীয়৷ এ নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন৷

https://p.dw.com/p/2mEog
UN Flagge
ছবি: picture-alliance/dpa

জাতিসংঘের সম্মানজনক মানবাধিকার কাউন্সিলে এবার সদস্যপদ মিলেছে ১৫ টি দেশের, যার মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, কঙ্গো ও পাকিস্তান৷ যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে৷ জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি নিকি হ্যালি বলেন, এতেই বোঝা যায় কেন কাউন্সিলের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ কাউন্সিলকে বাঁচাতে এর সংস্কার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি৷  

জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে পাকিস্তানের অন্তর্ভু্ক্তির সমালোচনা করে হিউম্যান রাইটাস ওয়াচ বলে, এ ইসলামি দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানাভাবে তুলে ধরেছে৷ অন্যদিকে, জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী সদস্য মালিহা লোদি বলেন, এ পদক্ষেপ মানবাধিকার রক্ষায় পাকিস্তানের দৃঢ় অঙ্গীকারের প্রতি সমর্থন৷ তাঁর মতে, ‘‘পাকিস্তানের নেতা, সংসদ ও বিচারবিভাগ অধিকার রক্ষার বিষয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে৷''

Schweiz Genf UN Menschenrechtsrat
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলকে আফগানিস্তান, কঙ্গো এবং পাকিস্তানের মতো দেশকে সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে নির্বাচিত করায় সমালোচিত হতে হয়েছেছবি: picture-alliance/Photoshot/X. Jinquan

তবে মানবাধিকার কর্মীরা এ যুক্তিতে সন্তুষ্ট নয়৷ ‘‘এটা স্পষ্টভাবেই জাতিসংঘ ও এর আন্তঃসরকার ব্যবস্থায় এক ধরনের সংকট৷ সমস্যা হলো যে, পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশ দাবি করে যে, তারা মানবাধিকার রক্ষায় সচেষ্ট, কিন্তু বাস্তবে তারা তা করতে পারে না৷'' ব্রাসেলস-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়া ডেমোক্র্যাটিক ফোরামের নির্বাহী পরিচালক পাওলো কাসকা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা এ পরিস্থিতিতে খুশি হতে পারে না৷ আমার মনে হয়, আমাদের এখন মানবাধিকার রক্ষায় নতুন কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার বিষয়ে ভাবতে হবে, যেখানে কিছু নীতিতে একমত হয়ে কাজ করবে৷''

সৌদি আরবের মতো দেশ, যেখানে প্রতিনিয়তই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে তারাও গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছে৷

কেন পাকিস্তানকে নিয়ে আপত্তি?

জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে নিজেদের দেশের স্থান পাওয়াকে পাকিস্তানেরঅধিকার কর্মীরা বাকস্বাধীনতা রক্ষা ও দেশের সংখ্যালঘু অধিকার সমুন্নত করতে তাদের প্রচেষ্টার পক্ষে বাধা হিসেবে দেখছেন৷ দেশটিতে খ্রিস্টান, হিন্দু ও আহমেদিয়ার মতো সংখ্যালঘু সম্প্রদায় রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈষম্যের শিকার৷ অন্যদিকে, ব্লাসফেমি আইনের কারণে গত কয়েক বছরে অনেকের মৃত্যু হয়েছে৷ জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে সদস্যপদ পাওয়ার পর সরকার সমর্থিত ব্লাসফেমি আইন কি সংশোধন করবে ইসলামাবাদ?

মানবাধিকার কর্মীরা লস্কর-ই-তৈয়বার মতো আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলোর সমর্থন জোগানোর দায়েও অভিযুক্ত করেন পাকিস্তানকে৷

গত মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জঙ্গি দমনে পাকিস্তানের অসহযোগিতার সমালোচনা করেন৷ এমনকি আফগান-পাকিস্তান সীমান্তে সক্রিয় জঙ্গি সংগঠনগুলোকে নিরাপদ আশ্রয় দেবার অভিযোগও তোলেন ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে৷

সরকার সমালোচক, ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগার থেকে শুরু করে অধিকার কর্মীদের অপহরণের মতো বিষয়ে শঙ্কা তুলে ধরে পাকিস্তানের উদারপন্থিরা বলছেন, সরকারের নিরাপত্তা সংস্থা এসব অপহরণের জন্য দায়ী৷ 

এতসব অভিযোগকে পেছনে ফেলে জাতিসংঘের সম্মানজনক মানবাধিকার কাউন্সিলে পাকিস্তান জায়গা করে নেয়ায় ক্ষুদ্ধ অধিকার কর্মীরা বলেন, এর ফলে  কর্তৃপক্ষ ভিন্নমতাবলম্বী এবং সংখ্যালঘুদের উপর দমন চালিয়ে যাবে নির্বিঘ্নে৷ বালুচিস্তানের রাজনীতিবিদ ও সেখানকার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ মেঙ্গাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে পাকিস্তানের এই অন্তর্ভু্ক্তি দেশে যাঁরা নিপীড়িত হচ্ছে, তাঁদের জন্য অপমান৷ সরকার বালুচিস্তানে সহিংসতা চালিয়েছে৷ এর মানে দাঁড়ায়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পাকিস্তানের মানবাধিকার বিষয়টি নিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখছে৷'' 

অন্যদিকে, পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলে, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে এ অন্তর্ভুক্তি নিয়ে অপপ্রচার চালিয়েছিল ভারত৷ ভারতের বিরুদ্ধে কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগও তোলে পাকিস্তান৷ ‘‘ভারত পাকিস্তানকে কোনো সম্মানজনক আন্তর্জাতিক অবস্থানে দেখতে চায় না৷ দিল্লী এখন বলছে, আমরা এর যোগ্য না৷ আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তানের গুরুত্ব পাওয়াকে মেনে নিতে পারে না ভারত,'' ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ পার্টির নেতা উজমা বুখারি এ কথা বলেন৷

‘এ অন্তর্ভুক্তি নৈতিক চাপ'

এ কাউন্সিলে সৌদি আরব ও পাকিস্তানের সমর্থনে অনেকে বলছেন, দেশগুলো তাদের নাগরিকদের মানবাধিকার রক্ষায় আগের চেয়েও আরো বেশি নৈতিক চাপ অনুভব করবে৷ সৌদি আরবের কথা ধরা হলে, দেশটি ধীরে হলেও আগের চেয়ে ইতিবাচকভাবে সেখানকার মানবাধিকারের বিষয়গুলো সংস্কারের দিকে এগুচ্ছে৷ সম্প্রতি সেখানে নারীরা গাড়ি চালানোর অধিকার পেয়েছে৷ নারীদের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে আফগান সরকার, যদিও আরো অনেক কিছুই করার রয়েছে এ বিষয়ে৷

পাকিস্তানও কি তাদের দায়িত্ব পালন করবে?

সংসদ ও ক্ষমতাসীন সামরিক শক্তির মধ্যে একটি দ্বন্দ্বের জেরে পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে সমর্থন জানিয়েছে পাকিস্তানের উদারপন্থী রাজনীতিবিদরা৷ সেখানকার মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সংশয় কাজ করছে৷ যতক্ষণ পর্যন্ত একটি শক্তিশালী নির্বাচিত বেসামরিক সরকার না আসছে, ততক্ষণ পর্যন্ত জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে সদস্য পদ কোনো কাজে আসবে না৷ 

শামিল শামস/ আর এন