1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মাদক দ্রব্যের নিয়ন্ত্রণে কতোটা সফল আমরা ?

দেবারতি গুহ৫ মার্চ ২০০৮

বিশ্বে মাদক দ্রব্যের এবং চোরাচালানের উপর নানাবিধ আইন জারি করা হলেও, আদতে কিন্তু, এর কোনটাই এখনও পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করা যায় নি৷ এমনই এক অনভিপ্রেত ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে মাদক-দ্রব্যের বিস্তার বিষয়ক এ-বছরের আন্তর্জাতিক রিপোর্টটিতে৷

https://p.dw.com/p/DPfX
ছবি: AP

International Narcotics Control Board বা আন্তর্জাতিক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থার প্রধান কাজই হলো জাতি সংঘের মাদক-কেন্দ্রিক নিয়মাবলীগুলির উপর নজর রাখা৷ সেই কাজের সূত্র ধরেই, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উপর নজর রাখছিল আন্তর্জাতিক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বা INCB৷ তাতে করে দেখা যাচ্ছে যে, দক্ষিণ আমেরিকার মতো মহাদেশে, যেখানে মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা ভয়ানকভাবে বেশি, সেখানে মাদকের ব্যবহার গত বছরগুলির তুলনায়, অনেকাংশে কমলেও, এই হ্রাসের হার সন্তোষজনক নয়৷ INCB প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, দক্ষিণ আমেরিকার প্রায় ১৬০-টি দেশে, মোট ব্যবহৃত কোকেনের পরিমাণ ১ হাজার টন৷ INCB-র এক গবেষক Carola Lander জানালেন যে, ২০০৭-এর পরিসংখ্যান অনুসারে, এখানে শুধুমাত্র চারশ কিলোগ্রাম কোকেন ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে৷

কাজেই, বাকি ৬০০ গ্রাম কোকেন যে বে-আইনী ভাবে ব্যবহৃত হয়েছে তা তো বলাই বাহুল্য৷ অন্তত, ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ তো বটেই৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, এর অধিকাংশই উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলিতে চালান করা হয়৷ এবছরের রিপোর্টটিতে INCB আরো জানিয়েছে যে, আফ্রিকার দেশগুলিতে সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা - দুই-ই কম থাকার কারণে, মহাদেশটি যেন চোরাচালান এবং মাদক-চাষের কেন্দ্রভূমিতে পরিণত হয়েছে৷ তবে শুধু আফ্রিকাতেই নয়, এশিয়ার নানা অনুন্নত ও উন্নয়নশীলদেশগুলির অবস্থাও অত্যন্ত খারাপ৷ যেমন আফগানিস্তান৷ যেখানে কিছু অঞ্চলে,আফিমের ব্যবহার কমানো গেলেও, অন্য অঞ্চলগুলিতে তার প্রকোপ বেড়েই চলেছে৷ তাই, মোটের উপরে আফগানিস্তানের অবস্থার উন্নতি হয়েছে - একথা একেবারেই বলা যায় না৷ আর শুধু আফিম নয়, হেরোইনের ব্যবহারও আফগানিস্তানে বহুল প্রচলিত৷

বলাই বাহুল্য, ইউরোপে হেরোইনের চাহিদা মিটিয়ে থাকে প্রধানত আফগানিস্তানই৷ তার উপর, মাদক এ-দেশে যে শুধু চাষ হচ্ছে, তা নয়, স্থলপথে এর চোরাচালানও হয়ে চলেছে ব্যাপকভাবে৷ একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, আফগানিস্তানের কমপক্ষে ১০ লক্ষ মানুষ মাদকাসক্ত৷ আর তারা যে শুধু এই নেশার ঘোর থেকে বেরিয়ে আসতে পারে নি - তাই নয়, অনেককে মৃত্যুও বরণ করতে হয়েছে৷ এমনকি শিশুদেরও৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, চিকিত্ সা-ব্যবস্থার খারাপ অবস্থা এবং ওধুধ-পত্রের স্বল্পতার জন্য, আফিমের ব্যবহার এতো বেশি আফগানিস্তানে৷ অনেকে তো বাচ্চাদের শান্ত রাখার জন্য অথবা শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচার জন্যও ব্যবহার করে থাকে এই মাদক৷ তাই, আফগানিস্তানের বর্তমান অরাজকতা, যার অনেকটাই তালেবান-জঙ্গীদের মদত-প্রসূত, তার সঙ্গে, মাদক-দ্রব্যের চাষ এবং চোরাচালানের একটি ওতপ্রোত সম্পর্ক লক্ষ্য করছেন অনেকেই৷

তবে শুধু আফগানিস্তানই নয়, INCB-র রিপোর্ট-টিতে জার্মানির অবস্থায় খুব একটা আশানুরুপ নয়৷ জার্মানির বহু জায়গায়, কাঁচের ঘরের মধ্যে, বেআইনীভাবে Cannabis বা গাজা এবং হাসিসের চাষ হচ্ছে বলেও জানা গেছে৷ জার্মান সরকারের মাদক সমস্যা নিয়ন্ত্রণে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা Sabine Bätzing জানান যে, তাদের কাজ শুধু দেশে মাদকদ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করাই নয়, মাদকাশক্ত মানুষগুলিকে পুনর্বাসন এবং সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা তৈরী করাও৷

প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই জার্মানিতে এমন প্রায় চব্বিশটি কেন্দ্র তৈরী করা হয়েছে৷ যেখানে মাদকাশক্ত মানুষদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়েছে বিশেষজ্ঞরা৷ তবে, একথাও ভুলে গেলে চলবে না যে, এ-ধরনের সরকারি পদক্ষেপের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজন জনমানসে সচেতনতা তৈরী করা৷ কারণ, এখনো এই মাদকের কবলে পরেই, শয়ে শয়ে মানুষ, প্রতি বছর HIV-AIDS-এ আক্রন্ত হয়ে মারা যাচ্ছে৷ এর মোকাবেলা করতে এগিয়ে আসতে হবে বিশ্বের প্রতিটি দেশকেই৷