মাওবাদী প্রতিরোধে ব্যর্থতা
২৯ মে ২০১৩বিজেপি-শাসিত ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের বস্তার অঞ্চলে কংগ্রেসের পরিবর্তন যাত্রা এবং বিজেপির বিকাশ যাত্রা মাওবাদীদের নিশানা হতে পারে – এমন খবর ছিল গোয়েন্দাদের হাতে৷ খবর ছিল, ঐ এলাকার দরভা ও টোংপালে কংগ্রেস পার্টির কনভয়ের ওপর জবরদস্ত হামলার ছক কষছে মাওবাদীরা৷ বস্তারের বিভিন্ন এলাকায় জনমত সংগঠিত করছে তারা৷ এর প্রেক্ষিতে মাওবাদী উপদ্রুত এলাকায় শনিবারের গণহত্যা প্রতিরোধে সরকারের তরফে যে-রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার ছিল তা নেয়া হয়নি, এ কথা স্বীকার করেছেন স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী৷
কংগ্রেস কনভয়ের ওপর হামলার দায় স্বীকার করে মাওবাদীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের হিটলিস্টের শীর্ষে থাকা ‘সালওয়া জুড়ুম' উপজাতি মিলিশিয়া বাহিনী গঠনের হোতা কংগ্রেসের মহেন্দ্র কর্মাকে শাস্তি দিতেই ঐ হামলা৷ মাওবাদীদের মোকাবিলায় উপজাতিদের নিয়ে গঠন করা হয় ঐ মিলিশিয়া বাহিনী৷ সুপ্রিম কোর্ট তা রদ করার নির্দেশ দিলেও তা কার্যত রদ করা হয়নি৷ বরং পরোক্ষভাবে তা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন এক সমাজবিজ্ঞানী৷
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, মাওবাদীদের শক্তি সম্পর্কে সরকারের সঠিক ধারণা নেই৷ ৭০-এর দশকে নক্সাল আন্দোলন আর আজকের মাওবাদী আন্দোলনের শক্তির মধ্যে ব্যবধান আকাশ-পাতাল৷ ২০০৪ সালে নক্সালদের তিনটি শাখা একত্রিত হবার পর এদের শক্তি বেড়ে গেছে বহুগুণ৷ এখন মাওবাদীরা ২৫ হাজার প্রশিক্ষিত, আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত এক মাওবাদী গেরিলা বাহিনী৷ এদের পেছনে আছে সমর্থক বাহিনী৷ মজবুত হয়েছে এদের সংগঠন৷ এখন মাওবাদীদের স্রেফ আইনশৃঙ্খলা সমস্যা বলে মনে করা মারাত্মক ভুল৷ মাওবাদী সহিংসতার মোকাবিলায় কেন্দ্র ও রাজ্যকে নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদী এক স্ট্র্যাটিজি৷
কেউ কেউ মনে করেন রাজ্যের জনসংখ্যার অনুপাতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়াতে হবে৷ নিরাপত্তা কর্মীর সংখ্যা কম বলে কেন্দ্রীয় সংরক্ষিত পুলিশ বাহিনী, সিআরপিএফ, নিজেদের এবং সাধারণ নাগরিকদের বাঁচাতে আত্মরক্ষামূলক কৌশল নিচ্ছে৷ সিআরপিএফ-এর ট্রেনিং পদ্ধতিতেও গলদ আছে৷ বিশেষ অঞ্চল-নির্ভর গেরিলা যুদ্ধ কৌশলে তাঁরা অপারগ৷ ‘গ্রিন হান্ট'-এর মতো বিশেষ মাওবাদী দমন অভিযান কার্যত তাই সফল হয়নি৷ আবার এটাও দেখা গেছে নাগাল্যান্ড ও মনিপুরের মত জঙ্গি উপদ্রুত রাজ্যের জনসংখ্যার অনুপাতে নিরাপত্তা কর্মীর সংখ্যা যথেষ্ট থাকা সত্ত্বেও আশানুরুপ ফল পাওয়া যায়নি৷
পশ্চিমবঙ্গে মাওবাদী উপদ্রুত জঙ্গল মহল দেড়-দু'বছর শান্ত থাকার পর আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী ও কর্মীদের ওপর মাওবাদী হামলার আশঙ্কা আছে বলে গোয়েন্দা দপ্তর থেকে আভাস দেয়ার পর রীতিমত চিন্তিত রাজনৈতিক দলগুলি৷ সংসদীয় নির্বাচনে রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলি এড়ানো সম্ভব হলেও পঞ্চায়েত নির্বাচনে জঙ্গল মহলের প্রত্যন্ত এলাকাগুলি বাদ দেয়া সম্ভব নয়৷ সেটা মাথায় রেখে রাজ্য পুলিশ নিরাপত্তা ব্যবস্থা মজবুত করছে এবং রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের নিরাপত্তা নির্দেশিকা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে৷