1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মহাসড়ক, সেতুতে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধই কি সমাধান?

৮ জুলাই ২০২২

ইদানীং মোটরসাইকেল চালকদের হয়েছে বিপত্তি৷ পদ্মাসেতু চালুর পর মহাসমারোহে সেটা দেখতে গিয়েছেন হাজার হাজার বাইকার৷ এখন সেতুতে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ৷ ঈদের সময়েও এক সপ্তাহের নিষেধাজ্ঞা৷

https://p.dw.com/p/4DrlS
ইদানীং মোটরসাইকেল চালকদের হয়েছে বিপত্তি৷ পদ্মাসেতু চালুর পর মহাসমারোহে সেটা দেখতে গিয়েছেন হাজার হাজার বাইকার৷ এখন সেতুতে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ৷ ঈদের সময়েও এক সপ্তাহের নিষেধাজ্ঞা৷
উদ্বোধনের পরদিন পদ্মা সেতুতে টোলপ্লাজায় মোটরসাইকেলের সারিছবি: MOHAMMAD PONIR HOSSAIN/REUTERS

হঠাৎ করে বাইকারদের উপরে কেন এত নিষেধাজ্ঞা? সাদা চোখে উত্তরটা সহজ৷ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় অনেক মানুষ মারা যাচ্ছেন৷ গত ঈদের যে পরিসংখ্যান নানা পত্রিকা ছেপেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, গত ঈদের সময় মহাসড়কে দুর্ঘটনায় ৩২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ নিহতদের ৪৩ শতাংশই ছিলেন মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহী৷

বাংলাদেশ রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের দেয়া তথ্য জানাচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তিন হাজার ৩০৯ জন৷ নিহতদের মধ্যে মোটরসাইকেলের চালক বা আরোহীর সংখ্যা এক হাজার ৩১৩৷

এসব পরিসংখ্যান ভয় পাইয়ে দেয়ার মতোই৷ বাংলাদেশে সড়কে, মহাসড়কে মোটরসাইকেল চালানো যে বিপজ্জনক সেটা বেশ পরিষ্কারভাবেই ফুটে উঠেছে পরিসংখ্যানে৷ অবশ্য সড়ক দুর্ঘটনায় বাকি ৬০ শতাংশ যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের সঙ্গে মোটরসাইকেলের সম্পর্ক নেই৷

কথা হচ্ছে, সড়ক দুর্ঘটনারোধে কি তাহলে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ করাই সমাধান? আমার কাছে সেটা মনে হয় না৷ বরং আমার কাছে মনে হচ্ছে, সড়ক দুর্ঘটনা বাংলাদেশে কিছু রূঢ় বাস্তবতা তুলে ধরছে৷

আমি নিজে বাংলাদেশের সড়কে মোটরসাইকেল, গাড়ি চালিয়েছি৷ যে বিষয়টি আমার চোখে সবচেয়ে বেশি ধরা পড়েছে সেটা হচ্ছে, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, বাস বা ট্রাক যেটাই বলি না কেন, চালকদের প্রশিক্ষণের অভাব প্রকট৷ পাশাপাশি তাদের মধ্যে বেপরোয়া মানসিকতা দেখা যায়৷

বিশেষ করে দূরপাল্লার বাসের অনেক চালকের মধ্যে মহাসড়কে কোনো কিছু তোয়াক্কা না করার একটা প্রবণতা রয়েছে৷ যত্রতত্র ওভারটেক করা, অপর পাশ থেকে আসা মোটর সাইকেল, প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাসকে সাইড না দেয়া এসব চালকদের কাছে একেবারে স্বাভাবিক ব্যাপার মনে হয়৷

স্পিডলিমিট বলে যে একটা ব্যাপার আছে, সেটা সম্ভবত এসব চালকের অনেকই জানেন না৷ এমনকি ভোরের দিকে বা কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশেও অনেক সময় বাস বা ট্রাক চালকরা হেডলাইট ব্যবহার করেন না৷ ফলে কখনো কখনো দেখা যায় খুব কাছাকাছি না আসা পর্যন্ত সেসব বাহনের উপস্থিতিই টের পাওয়া যায় না৷

ফলে মহাসড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সেটির চালক বা আরোহীর ভূমিকা কতটা আর এসব বেপরোয়া বাস, ট্রাকের চালকদের দায় কতটুকু সেটা নিয়ে বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন আছে৷ পরিসংখ্যানে এই দিকটা ঠিক পরিষ্কার হয়নি৷ মোটরসাইকেল চালকদের জন্য দুর্ঘটনা কতটা ঘটছে, আর তারা কতটা অন্যের কারণে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন সেটা বোঝা জরুরি মনে হয় আমার কাছে৷

চালকদের এই যে প্রশিক্ষণে ঘাটতি, সচেতনতার অভাব - সেটা মেটানো মোটরসাইকেলের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে মনে হয়৷ এক্ষেত্রে জার্মানির অভিজ্ঞতা জানাতে পারি৷

ইউরোপের এই দেশটিতে গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পাওয়ারক্ষেত্রে কয়েকটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতেই হবে৷ প্রথমে ফার্স্ট এইড কোর্স করতে হবে, তারপর তাত্ত্বিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে আর সবশেষে বেশ কয়েক ঘণ্টা একজন প্রশিক্ষকের সঙ্গে গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা অর্জনের পর ব্যবহারিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে মেলে লাইসেন্স৷ সেই লাইসেন্স আবার গাড়ি ভেদে ভিন্ন হয়৷ অর্থাৎ মোটর সাইকেল চালানোর লাইসেন্স আলাদা, প্রাইভেট কার চালানোর লাইসেন্স আলাদা আর বাস-ট্রাক চালানোরটাতো আলাদাই৷

জার্মানির মহাসড়কে, সেতুতে, টানেলে মোটরসাইকেল চালাতে কোনো বাধা নেই৷ এমনকি যে রাস্তায় কোনো স্পিডলিমিট নেই সেখানেও দিব্যি চলে মোটরসাইকেল৷ তবে চালকদের অবশ্যই কিছু নিয়ম মানতে হয়৷ যেমন অবশ্যই হেলমেট ও বিশেষ একধরনের পোশাক পরা যা দুর্ঘটনার সময় শরীরের বিভিন্ন অংশকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়ক৷

এত নিরাপত্তার পরও দুর্ঘটনা যে হয়না, তা নয়৷ জার্মানিতেও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে৷ এবং তাতে প্রাণহানিও ঘটে৷ তবে দুর্ঘটনা রোধে এবং এই বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে সরকারের সর্বাত্মক চেষ্টা থাকে৷ উপযুক্ত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে লাইসেন্স দেয়ার পাশাপাশি গাড়ির ফিটনেস নিয়মিত যাচাই ও ট্রাফিক আইন মানার বিষয়টি নিশ্চিত করে দুর্ঘটনার হার অনেক কম রাখা সম্ভব হচ্ছে৷

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মোটরসাইকেলের সংখ্যা অনেক বেড়েছে৷ সরকারি হিসেবে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা চার লাখের মতো৷ আমার মনে হয়, প্রকৃত মোটরসাইকেলের সংখ্যা আরো অনেক বেশি হবে৷ দেশের রাস্তাঘাটে একটু চোখ দিলেই সাংবাদিক, সরকারি কর্মী, পুলিশ কিংবা রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থক পরিচয় দেয়া অনেককে নম্বর প্লেটের উপর নম্বর ছাড়া অন্য কোনো পরিচয় দিয়ে মোটরসাইকেল চালাতে দেখা যায়৷ সেগুলো অনেকেই দেখেন, কিন্তু কিছু বলেন বলে মনে হয় না৷

মোটরসাইকেলের এই যে সামগ্রিক বিকাশ, সেটা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির একটি ইঙ্গিতও৷ পাশাপাশি সরকারের নীতির কারণেও দুই চাকার এই বাহন কেনা সহজ হয়েছে অনেকেরপক্ষে৷ আর হাজার হাজার বেকার তরুণ-যুবকের আয়ের এক উৎসও হয়ে উঠেছে মোটরসাইকেলকেন্দ্রিক রাইডশেয়ারিং ও বিভিন্ন পণ্য ডেলিভারি৷

আরাফাতুল ইসলাম, ডয়চে ভেলে
আরাফাতুল ইসলাম, ডয়চে ভেলে

তাই, সামগ্রিক বিচারে মোটরসাইকেলের উপর এককভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরির চেয়ে আমার কাছে মনে হয় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে লাইসেন্স প্রদান থেকে শুরু করে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, সড়ক, মহাসড়ক মোটরসাইকেল ও গাড়িবান্ধব করে তোলা ও ট্রাফিক আইনের কঠোর প্রয়োগের দিকে আরো বেশি নজর দেয়া উচিত৷ দীর্ঘমেয়াদে উদ্যোগ নিয়ে এসবক্ষেত্রে উন্নতি সাধন করা গেলে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে৷

আর সাধারণ মানুষকে গণপরিবহণ ব্যবহারে আরো উৎসাহিত করতে পারলে মোটরসাইকেলের ব্যবহার কমতে পারে৷ কিন্তু সেক্ষেত্রেও ঘাটতি স্পষ্ট৷ বড় কোনো উপলক্ষ তৈরি হলেই ট্রেনের টিকিট পাওয়া যায় না, বাসের সিডিউল ঠিক থাকে না, আর বাড়তি ভিড়ের মধ্যে স্ত্রীসন্তানসহ গণপরিবহনে যাত্রা করা অনেকের পক্ষে কঠিনই৷ সঙ্গে যানজটের বিড়ম্বনাতো রয়েছেই৷ 

এই জটিলতা থেকে দূরে থেকে একটু চলাচলের স্বাধীনতা পেতে হয়ত মোটরসাইকেল চালকরা লম্বা পথেও নিজের বাহনটি নিয়ে যেতে চান৷ তাদের সেই স্বাধীনতাটুকু বজায় রাখা যায় কীভাবে সেদিকেই মনোযোগ দেয়া হোক৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য