মহারাষ্ট্রে পরিবেশবান্ধব গণেশ প্রতিমার ব্যবহার বাড়ছে
৩০ নভেম্বর ২০২২শুধু মুম্বাই শহরেই প্রতি বছর প্রায় দুই লাখ গণেশ প্রতিমা কেনা হয়৷ এর মধ্যে বেশিরভাগই বাসায় পুজার জন্য ছোট আকারের গণেশ ঠাকুর৷ সেগুলি সাধারণত প্লাস্টার অফ প্যারিস দিয়ে তৈরি, যা মোটেই নবায়নযোগ্য কাঁচামাল নয়৷ মূর্তির উপরেও কৃত্রিম রং লাগানো হয়, যার মধ্যে সীসা, ক্যাডমিয়াম দস্তা বা লোহার মতো হেভি মেটালও রয়েছে৷
উৎসবের শেষে বিসর্জনের সময় সেটা একটা সমস্যা হয়ে ওঠে৷ দেবতাকে প্রকৃতির কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতীকি সেই পদক্ষেপের ফলে উলটে পরিবেশের ক্ষতি করা হয়৷ নদী, হ্রদ বা সাগরের অবস্থা বেহাল হয়ে ওঠে৷
ক্লিনআপ অ্যাক্টিভিস্ট চিনু কাওয়াত্রা মুম্বাইয়ের সৈকতে তা হাড়ে হাড়ে টের পান৷ স্মৃতিচারণ করতে গিসয়ে তিনি বলেন, ‘‘দুই বছর আগে হাজার হাজার মাছ বিষাক্ত পিওপি উপাদান খেয়ে মরে গিয়ে সমুদ্রতটে ভেসে এসেছিল৷ সেটা ছিল বড় বিপর্যয়৷''
২০২০ সালে সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও এখনো প্লাস্টার অফ প্যারিস দিয়ে তৈরি গণেশের প্রতিমা পাওয়া যায়৷ সেই উপাদান ত্যাগ করে হাজার হাজার মৃৎশিল্পী ও বিক্রেতারা রুজিরুটির হুমকির ঝুঁকি নিতে রাজি নয়৷
তবে কিছু পরিবার অবশ্যই নানা পরিবেশবান্ধব সমাধানসূত্র গ্রহণ করছেন৷ যেমন অরোরা পরিবার প্রাকৃতিক কাদা দিয়ে তৈরি গণেশের মূর্তি ঘরে এনেছে৷ মাটির মধ্যে বীজ মেশানো হয় বলে সেটিকে ‘ট্রি গণেশ' বলা হয়৷ বিসর্জনের বদলে এই পরিবার এক বালতি পানিতে মূর্তিটি ডুবিয়ে দেয়৷ ফলে উর্বর এক কাদা সৃষ্টি হয়, যা চারাগাছের জন্য আদর্শ৷
আবাসনের অন্যান্য পরিবারও ‘ট্রি গণেশ' বেছে নিচ্ছেন৷ ফলে তাঁদের যৌথ বাগান ফুলেফেঁপে উঠছে৷ মুম্বাইয়ের বাসিন্দা ডেউজি অরোরা বলেন, ‘‘আমরা বৃক্ষরোপণের জন্য এমনটা করছি৷ আজ প্রতিটি পরিবার ‘ট্রি গণেশ' আনছে, যাতে তারা বর্জ্য সৃষ্টি না করে, সমুদ্রে টক্সিক রং না ছাড়ে৷ গত সাত বছর ধরে আমরা এমনটা করছি বলে এখানে বেশিরভাগ গাছপালা ‘ট্রি গণেশ'-এর কারণে গজিয়েছে৷ আমাদের আবাসনের বেশিরভাগ গাছপালা এভাবে লাগানো হয়েছে৷''
অরোরা পরিবার ও তাঁদের প্রতিবেশীরাই শুধু গণপতি উৎসবের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে চিন্তিত নন৷ প্রতিমা পুনর্ব্যবহারের আহ্বান বেড়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষও মূর্তিগুলি উদ্ধার করতে এক পাইলট প্রকল্প শুরু করেছে৷ মুম্বই পৌরসভার সলিড ওয়েস্ট ডিপার্টমেন্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ইরফান কাজি বলেন, ‘‘আমাদের সচেতনতা অভিযানের ফল হিসেবে চলতি বছর আমরা অনেক মাটির প্রতিমা পাচ্ছি৷ সেগুলির সংখ্যা বেড়ে গেছে৷ সেটি নিজে থেকে ভেঙে গেলে আমরা মাটি আলাদা করে শুকিয়ে স্থানীয় মৃৎশিল্পীদের সঙ্গে মিলে পুনর্ব্যবহার করি৷''
সেই মাটি মৃৎশিল্পীদের ওয়ার্কশপে আনা হয়৷ প্রথমে তাঁরা অবশিষ্ট প্লাস্টিক সরিয়ে মূল্যবান কাদামাটি উদ্ধার করেন৷ মাটির তাল আদর্শ অবস্থা পেলে ভাস্কররা হিন্দু ধর্মের অন্যান্য উৎসবের জন্যও প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেন৷ যেমন নবরাত্রি উৎসবেই প্রতিমার চাহিদা বেড়ে যায়৷
রিসাইক্লিংয়ের পাশাপাশি পৌর প্রশাসনগুলি মানুষকে প্রাকৃতিক জলাধারে প্রতিমা বিসর্জন বন্ধ করতে উৎসাহ দিচ্ছে৷ চলতি বছর মুম্বাইয়ের প্রশাসন শহরজুড়ে অনেকগুলি কৃত্রিম পুকুর তৈরি করেছে৷ যেমন জুহু এলাকার একটি সৈকতের মুখেই এমন জলাধার তৈরি করা হয়েছে৷ সেখানে অনেক প্রতিমা বিসর্জন হয়৷
সরকারি প্রতিনিধিদের মতে, এই আইডিয়া দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে৷ চলতি বছর বিক্রি হওয়া প্রতিমার প্রায় এক-তৃতীয়াংশই এমন জলাধারে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে৷
তবে বাকি প্রতিমাগুলি মুম্বাইয়ের সৈকতে ভেসে ওঠায় দুর্ভাগ্যবশত সামুদ্রিক প্রাণীদের দূরাবস্থা এখনো কাটে নি৷ অ্যাক্টিভিস্টরা আবার ধ্বংসাবশেষ দূর করার কাজে হাত লাগিয়েছেন৷ তবে সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে তাঁরাও কিছুটা উন্নতি লক্ষ্য করেছেন৷ ‘বিচ ওয়ারিয়ার্স' সংগঠনের চিনু কাওয়াত্রা বলেন, ‘‘দেশের তরুণ প্রজন্ম অবশ্যই উৎসবের তাৎপর্য বুঝে পরিবেশবান্ধব উপায়ে সেগুলি পালন সম্পর্কে সচেতন হচ্ছে৷ দীপাবলি, ঈদসহ অন্যান্য উৎসবের ক্ষেত্রে তাদের বার্তা ছড়িয়ে পড়ায় সমাজে সংবেদনশীলতা বাড়ছে৷''
তবে সেই বার্তা আরো অনেক মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে এবং তাদের সক্রিয় করে তুলতে হবে৷ প্রতি বছর মুম্বাই শহরের চারটি হিন্দু উৎসব এবং দেশের বাকি অংশেও এমন উৎসব পরিবেশবান্ধব করে তোলাই হলো লক্ষ্য৷
মারিয়া লেসার/এসবি