ইউরোপের বাজেট
৪ ডিসেম্বর ২০১২ইটালির নেপোলিতে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ সেখানে আলোচনার জন্য নির্ধারিত বেশিরভাগ বিষয়ে আগে থেকেই সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে৷ এবারও তেমনটাই হয়েছিল৷ তবে তারপরও সম্মেলনে মন্ত্রীদের একটা বিষয় নিয়ে বেশ মাথা ঘামাতে হয়েছে৷ সেটা আরিয়ান রকেট নিয়ে৷ ইসা-র তৈরি এই রকেটের এখন পঞ্চম সংস্করণ চলছে৷
আরিয়ান রকেটের উন্নয়ন নিয়ে ইসা-র সবচেয়ে বড় দুই অর্থ দাতা দেশ জার্মানি ও ফ্রান্সের দু'রকমের প্রস্তাব ছিল৷ অনেক আলোচনার পর এক্ষেত্রে জার্মানির প্রস্তাবকেই মেনে নিয়েছেন মন্ত্রীরা৷ ফলে ‘আরিয়ান ৫'-কে আর একটু উন্নত করে ২০১৭ সালের মধ্যে কাজে লাগানো হবে৷ এই সংস্করণের নাম দেয়া হয়েছে ‘আরিয়ান ৫এমই' অর্থাৎ ‘মিড-লাইফ ইভোলিউশন'৷
ফ্রান্সের প্রস্তাব ছিল আরিয়ান-এর নতুন সংস্করণ অর্থাৎ ‘আরিয়ান ৬' তৈরি করা৷ কিন্তু সেটা করতে গেলে অপেক্ষা করতে হবে ২০২১ সাল পর্যন্ত৷ ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে রাজি হয়নি ইসা-র সদস্য রাষ্ট্রগুলো৷ তারপরও ফ্রান্সের কথা রাখতে আরিয়ান ৬-এর কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সম্মত হন মন্ত্রীরা এবং এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে ২০১৪ সালে আবারও বৈঠকে বসার কথা রয়েছে৷
আরিয়ান-এর ক্ষেত্রে জার্মানির জয় হলেও তাদের দেয়া অন্য একটি প্রস্তাব সম্মেলন শুরুর আগেই বাদ হয়ে যায়৷ সেটা ছিল ২০১৮ সালে চাঁদে একটা স্বয়ংক্রিয় ল্যান্ডার নামানো৷
এদিকে মঙ্গল অভিযান নিয়ে ইসা-র ‘এক্সোমার্স' নামের যে প্রকল্প রয়েছে তাতে আগে যৌথভাবে থাকার কথা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের৷ কিন্তু এ বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়ে দিয়েছে যে তারা এজন্য টাকা দিতে পারবে না৷ ফলে এক্সোমার্স প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল৷ তবে নেপোলিতে মন্ত্রীরা এই প্রকল্পের জন্য রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা রসকসমস-কে সঙ্গে নেয়ার ব্যাপারে কথাবার্তা শুরু করেছেন৷
এক্সোমার্স প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের সঙ্গ ছেড়ে দিলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত মহাকাশযান ‘ওরিয়ন' তৈরির জন্য সাড়ে চারশো মিলিয়ন ইউরো দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসা৷ এই যানে করে বিজ্ঞানীরা মহাকাশে যেতে পারবেন৷ মোট অর্থের মধ্যে ব্রিটেন দেবে ২০ মিলিয়ন ইউরো৷ এটা তাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক ঘটনা৷ কেননা আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র, আইএসএস গড়ে তোলার চুক্তিতে ব্রিটেন স্বাক্ষর করলেও এতদিন তারা একটা পয়সাও দেয়নি৷ এমনকি তাদের নিজেদের মহাকাশ বিজ্ঞানী টিম পেকে-র জন্যও অর্থ দিতে চায়নি ব্রিটেন৷ সেই দেশ এবার মহাকাশ যানের জন্য অর্থ দিচ্ছে৷ তবে এর পক্ষে ব্রিটিশ মন্ত্রী ডেভিড উইলেটস বলছেন, এই যান তৈরির সময় কয়েকটি ব্রিটিশ কোম্পানি কাজ পাবে বলে তাঁর আশা৷
কারণ যেটাই হোক ব্রিটেন এই প্রকল্পে অর্থ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় আনন্দ প্রকাশ করেছেন সম্মেলনে জার্মান প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ইয়ান ভ্যোয়েনের৷
আগামী পাঁচ বছরের জন্য ইসা মোট ১২ বিলিয়ন ডলারের বাজেট চেয়েছিল৷ এর মধ্যে পেয়েছে ১০.১ বিলিয়ন ডলার৷ তবে তাতেই বেশ খুশি সংস্থার মহাপরিচালক জ্যঁ জ্যাক দোরদা৷ কেননা এই আর্থিক সংকটের যুগে এই টাকাটা পাওয়ারও আশা ছিল না তাঁর৷ দোরদা বলেন, ‘‘আসলে সদস্য রাষ্ট্রগুলো বুঝতে পেরেছে যে, মহাকাশ গবেষণায় টাকা দেয়াটা খরচ নয়, এটা এক ধরণের বিনিয়োগ৷''
ইসার মোট বাজেটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ দেবে জার্মানি৷ যার পরিমাণ ২.৬ বিলিয়ন ডলার৷ এরপরেই থাকছে ফ্রান্স৷ তারা দেবে ২.৩ বিলিয়ন৷ এরপর দেড় বিলিয়ন ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তৃতীয় বৃহত্তম দাতা দেশ হিসেবে নাম লেখিয়েছে ব্রিটেন৷ এরপরই আছে ইটালি৷ তারা ১.১ বিলিয়ন ডলার দিতে সম্মত হয়েছে৷
উল্লেখ্য, ইসা-র সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা ২০৷
জেডএইচ/ডিজি (এপি, বিবিসি, ইন্টারনেট)