মরুভূমির গ্রাস রুখতে আফ্রিকায় নতুন উদ্যোগ
২৭ আগস্ট ২০১৯রান্নার কাঠের বিকল্প
একেবারে তৃণমূল স্তরে বাস্তবে পরিবেশ সংরক্ষণের এক দৃষ্টান্ত দেখা যাচ্ছে৷ সেনি ইয়াকুবা ইব্রাহিম মামানে নামের এক কামারের কাছ থেকে এমন চুলা তৈরি করতে শিখছেন, যাতে কোনো কাঠ ব্যবহার করতে হয় না৷ প্রত্যেকটি অংশ নিখুঁতভাবে জোড়া দিতে হবে, যাতে চুলায় কোনো ফাঁকফোকর না থাকে এবং উত্তাপ বেরিয়ে যেতে না পারে৷
ইব্রাহিম মামানে একইসঙ্গে অনেকগুলি চুলা তৈরি করছেন৷ তিনি এক এনজিও-র কাছ থেকে ৫০টি চুলা তৈরির বরাত পেয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এই চুলা মরুকরণের বিরুদ্ধে সংগ্রামেরও হাতিয়ার বটে, কারণ কাঠের বদলে এতে ধানের তুষ ব্যবহার করা হয়৷ সেই তুষ অন্য কাজে লাগে না৷ এমনকি প্রাণীরাও খায় না৷''
প্রতিদিন রাষ্ট্রীয় ধান মিলে টন-টন তুষ জমা হয়৷ বর্জ্য হিসেবে এর কোনো পুষ্টিগত মূল্য নেই৷ চুলা থাকলে যে কেউ এখান থেকে বিনামূল্যে তুষ সংগ্রহ করে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন৷
মানুষের আচরণ সম্পর্কে সচেতনতা
এনজিওর সহ প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সানি আয়ুবা বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে চুলার গুরুত্ব বুঝিয়ে বলেন৷ তাঁর বার্তা হলো, গাছপালা ও ঝোপঝাড় মরুভূমির প্রসার রোধ করতে পারে৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা আমাদের আচরণের প্রশ্ন৷ আমাদের আচরণ ও কাঁচামাল ব্যবহারের অভ্যাস বদলাতে হবে৷ আমাদের পরিষ্কার জ্বালানি ব্যবহার করতেই হবে৷ বিশেষ করে জ্বালানির এমন উৎস ব্যবহার করতে হবে, যার মাধ্যমে কাঠের ব্যবহার কমে যায়৷''
স্কুলপড়ুয়ারা এক সপ্তাহের জন্য বাসায় এই চুলা পরীক্ষার সুযোগ পায়৷ হাবিব মামানে বাসিরু নিজের পরিবারের সদস্যদের চুলা ব্যবহারের কায়দা শেখাচ্ছে৷ হাবিবের মা হিন্দাতু আবদুলরাজ্জাক বলেন, ‘‘মনে হয় সহজেই ব্যবহার করা যায়৷ প্রায় কোনো ধোঁয়া বের হয় না, কাঠ ব্যবহারেরও আর প্রয়োজন নেই৷ বেশ ভালো৷ ভালো করে এই চুলা ব্যবহার করে দেখতে চাই৷''
ঋণ ও অন্যান্য সুবিধা
নতুন এই চুলার দাম ১৫ ইউরোর মতো৷ এনজিও এর জন্য ঋণও দেয়৷ এনজিও-র সদস্যরা ডিজিটাল প্রচার অভিযান নিয়ে আলোচনা করেছেন৷ তাঁরা বৃক্ষরোপণ করে উপযুক্ত মানুষ খুঁজে তাদের হাতে সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তুলে দিতে চান৷
নদীর উজানের কাছে একটি গ্রামে এই প্রচার শুরু হচ্ছে৷ সানি আয়ুবা বলেন, প্রাথমিক দ্বিধা সত্ত্বেও নারীরা এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে আগ্রহ দেখান৷ দায়িত্ববোধ ও প্রচারই এই উদ্যোগের লক্ষ্য৷ সানি আয়ুবা বলেন, ‘‘আমরা এক ডিজিটাল সংস্করণও তৈরি করবো৷ তখন সবাই স্মার্টফোনের ফ্রেমে নিজেদের ছবি লাগিয়ে ইন্টারনেটে এই অভিযানের সহায়তা করতে পারবে৷ তবে গ্রামের মানুষ স্থানীয় পর্যায়ে কী করছেন, মরুকরণের মোকাবিলা করতে তাঁরা যে অবদান রাখছেন, সেটা তুলে ধরাই আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷''
নিজের চোখে দেখার সুবিধা
এই উদ্যোগের আওতায় সন্ধ্যায় এক বিশেষ ‘ফিল্ড ট্রিপ' আয়োজন করা হয়েছে৷ ফলে স্কুলপড়ুয়ারা মরুকরণের প্রসার ও গাছপালার গুরুত্ব নিজেদের চোখে দেখতে পারবে৷ এনজিওর সহ প্রতিষ্ঠাতা সানি আয়ুবা বলেন, ‘‘নিয়ামির কাছেই নদীর তীরে বালিয়াড়ি সৃষ্টি হয়েছে৷ ফিল্ড ট্রিপের কল্যাণে শিক্ষার্থীদের মরুকরণ সম্পর্কে সাক্ষাৎ অভিজ্ঞতা হবে৷ তবে সেইসঙ্গে আমরা এটাও দেখবো, যে স্থানীয় পর্যায়ে মানুষ কীভাবে মরুভূমির প্রসার রুখতে এবং বালিয়াড়ির মধ্যে নোঙর সৃষ্টি করতে পারেন৷''
রাজধানী নিয়ামির দোরগড়ায় সেতোরে এলাকায় একাধিক বিশাল বালিয়াড়ি সৃষ্টি হয়েছে৷ শিক্ষার্থীরা যত দ্রুত সম্ভব বালিয়াড়ির শীর্ষে উঠতে আগ্রহী৷ কয়েকটি বালিয়াড়ি বাতাসের ধাক্কায় বছরে ২০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে৷ সেগুলির উচ্চতা ৩০ থেকে ৪০ মিটার হতে পারে৷ শীর্ষে উঠে শিক্ষার্থীরা অভিভূত হয়ে পড়েন৷ তবে দেখতে সুন্দর হলেও বালিয়াড়ি মানুষ ও পশুপাখির জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠছে৷ সানি আয়ুবা মনে করিয়ে দেন, ‘‘বালিয়াড়ির নীচে নিজেদের বাড়িঘর চাপা পড়ার ঝুঁকি রুখতে এর প্রসার প্রতিরোধ করতে হবে৷''
যেমন বালু চলাচল রুখতে বিশেষ বেড়া লাগানো যায়৷ বালিয়াড়ির নাড়াচাড়া রুখতে সবাই কী করতে পারে, সানি আয়ুবা তা বুঝিয়ে বলেন৷ হাইস্কুলের ছাত্র হাবিব মামানে বাসিরু বলে, ‘‘এখানে এসে সবকিছু দেখে আমি বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি৷ কোনো এক সময় শহরেও বালু প্রবেশ করতে পারে৷ ফলে আমার ভয় করছে৷ এখানে শুধু বালু অবশিষ্ট রয়েছে৷ আর কোনো গাছপালা নেই৷ আসল মরুভূমি হয়ে উঠেছে৷ যদি এর প্রসার ঘটে এবং নদীর তীরে মানুষের কাছে পৌঁছে যায়, তাহলে খেলা শেষ৷''
শিক্ষার্থীদের উপর একদিনের এই ভ্রমণ গভীর প্রভাব ফেলেছে৷ ছুটির সময় তারা পরিবেশ সচেতনতা ক্যাম্পে গিয়ে বালু প্রতিরোধী বেড়া লাগাবে এবং বৃক্ষরোপণ করবে৷ মরুকরণ রুখতে তারা সব কিছু করতে প্রস্তুত৷
গেয়ারলিন্ড ফলমার/এসবি