মমতা-রাহুল ফলায় বিদ্ধ মোদী
২৮ ডিসেম্বর ২০১৬আচমকা বড় অঙ্কের নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বুক বাজিয়ে বলেছিলেন, ৫০ দিন সময় দিন, তার মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে৷ আর যদি না হয়, মোদী বলেছিলেন, দেশের যে কোনো রাস্তার মোড়ে দাঁড় করিয়ে জনতাই তাঁকে শাস্তি দেবে! সেই সময়সীমা শেষ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু নোট বাতিল জনিত দুরবস্থা শুধরোবার কোনো সম্ভাবনাই নেই৷ বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, রাষ্ট্রীয় জনতা দল নেতা এবং মোদী-বিরোধী জোটের অন্যতম মুখ, স্বভাবরসিক লালুপ্রসাদ যাদব মঙ্গলবারই বললেন, তা হলে মোদীজি এবার ঠিক করে ফেলুন, তিনি কোন রাস্তার মোড়ে দাঁড়াবেন! কারণ, দেশের মানুষ তাঁকে শাস্তি দিতে চায়৷
তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি অবশ্য রহস্য-রসিকতার ধার ধারেননি৷ মঙ্গলবার রাজধানী দিল্লির সাংবাদিক সম্মেলনে কংগ্রেসের সহ সভাপতি রাহুল গান্ধীকে পাশে বসিয়ে তিনি দাবি করেন, ৩০ ডিসেম্বরের পর হয় মোদী ব্যাংক থেকে টাকা তোলার ওপর আরোপ করা নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার করুন, অথবা পদত্যাগ করুন৷ মমতা স্পষ্টভাষায় বলেছেন, সাধারণ মানুষের, চাকুরিজীবীদের, পেনশনভোগীদের, ছোট ব্যবসায়ী, দোকানদার, শ্রমিক, কৃষক, সবার চূড়ান্ত অসুবিধে হচ্ছে৷ নিজের টাকা ব্যাংক থেকে প্রয়োজনমত তোলা যাচ্ছে না৷ অথচ এই নিয়ে কোনো কথা বলতে গেলেই মোদী সরকার হুমকি দিচ্ছে ‘গব্বর সিং' এসে যাবে! সাংবাদিকদের মধ্যে হাসির হুল্লোড় ওঠে মমতার কটাক্ষে৷ তৃণমূল নেত্রীর স্পষ্টই ইঙ্গিত ছিল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির ওপর বিভিন্ন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার নজরদারির দিকে৷
দু'দিন আগেই আর্থিক বেনিয়ম নজরদার সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট জানিয়েছে, বিরোধী জোটের অন্যতম শরিক, উত্তর প্রদেশের বহুজন সমাজ পার্টির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১০৪ কোটি টাকা জমা পড়ার কথা৷ যদিও সরকারই কিছুদিন আগে এ সংক্রান্ত আয়কর আইনের উল্লেখ করে ঘোষণা করেছিল, পুরনো টাকা জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলির ওপর কোনো বিধিনিষেধ নেই৷ এবং সেই টাকা আয়করের আওতারও বাইরে৷ মঙ্গলবার বসপা নেত্রী মায়াবতীও তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন সরকারকে৷ বলেন, এ টাকা তাঁর দলের এবং প্রতিটি পাইপয়সার হিসেব তাঁরা দিতে পারেন৷ বরং বিজেপি জানাক, ৮ নভেম্বর নোট বাতিলের ঘোষণার আগে তারা কত কোটি টাকা ব্যাংকে জমা করেছে! বসপা-র পক্ষ থেকে কেউ যদিও এদিন দিল্লির বিরোধী সমাবেশে ছিল না৷ তবে লালুপ্রসাদের রাষ্ট্রীয় জনতা দল, দক্ষিণের ডিএমকে-সহ আটটি দলের প্রতিনিধিরা ছিলেন৷ বিরোধী জোটে কি তা হলে ভাঙন ধরছে? সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মমতা বলেন, একেবারেই না৷ যাদের সময়-সুযোগ ছিল, তারাই এসেছে৷ কিন্তু বিরোধীরা সবাই একজোট৷ খুব শিগগিরই এই জোটের আন্দোলন দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়বে৷ দেশের চার দিকে চারটি বড় সভা করার পরিকল্পনা রয়েছে৷
মমতা ব্যানার্জি এ দিন রাহুল গান্ধীকে পাশে রেখে বলেন, মোদী দাবি করছেন উনিই ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া'-র জনক৷ কিন্তু দেশে এই কাজ শুরু হয়েছে অনেক বছর আগে৷ প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর হাত ধরে৷ মমতার তীব্র শ্লেষ, মোদী বলছেন উনি নাকি ফকির! চাওয়ালা থেকে ফকির হয়েছেন৷ উনি একাই সাদা, বাকি সবাই নাকি কালো! কোন সাবান মেখে তিনি এত ফরসা হলেন, দেশ জানতে আগ্রহী৷ আর রাহুল গান্ধী সেই সুরেই আওয়াজ তোলেন, মোদী কেন তাঁর বিরুদ্ধে তোলা দুর্নীতির অভিযোগের কোনো জবাব দিচ্ছেন না? এমনিতে সমস্ত বিষয়েই দেখা যায় মোদীর নিজস্ব বক্তব্য আছে৷ কিন্তু দুর্নীতির বিষয়ে তিনি চুপ কেন!