মমতা কখনো ‘ইন্ডিয়া’র পক্ষে, কখনো ‘বিপক্ষে’
১৬ মে ২০২৪ভারতের লোকসভা নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি আসনে ভোট গ্রহণ শেষ। এখনো তিন দফার ভোট বাকি। ভোটের ফল ঘোষণা হবে ৪ জুন। তার আগে বেশ কিছু তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য সামনে আসছে, যা থেকে শুরু হচ্ছে রাজনৈতিক জল্পনা।
মমতার বক্তব্য
বিজেপির বিরুদ্ধে ইন্ডিয়া জোট বিভিন্ন রাজ্যে আসন সমঝোতা করে লড়ছে। উত্তর প্রদেশ, বিহার, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, দিল্লি, হরিয়ানা, গুজরাট, গোয়া, রাজস্থানের মতো রাজ্যে বোঝাপড়া হলেও পশ্চিমবঙ্গে হয়নি। জাতীয় স্তরে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে একপ্রস্থ আলোচনা হলেও শেষমেষ বোঝাপড়া সম্ভব হয়নি। ফলে দুই দল একসঙ্গে লড়ছে না। কংগ্রেস হাত মিলিয়েছে সিপিএমের সঙ্গে।
বুধবার চুঁচুড়ার জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ইন্ডিয়া জোট যদি সরকার গঠন করলে তিনি বাইরে থেকে সমর্থন করবেন। সরকারে শামিল হবেন না।
এরপরই তৃণমূল নেত্রীর মন্তব্য নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। তিনি আদৌ ইন্ডিয়া জোটে থাকবেন কিনা, সেই প্রশ্নও ওঠে। তবে বৃহস্পতিবার তমলুকে মুখ্যমন্ত্রী আবার বলেছেন, ''জোটে আছি, জোটে থাকবো। পশ্চিমবঙ্গে আমাদের সঙ্গে কংগ্রেস, সিপিএম নেই। কিন্তু ভুল বোঝাবুঝির জায়গা নেই। সর্বভারতীয় স্তরে আমরা জোটে থাকছি। ভুল খবর ছড়ানো হচ্ছে। এতে বিভ্রান্তি হচ্ছে।''
প্রশ্ন হলো, বিরোধী জোটে থাকলে নির্বাচন শেষ হওয়ার এত আগে বাইরে থেকে সরকারকে সমর্থন করার কথা বলার কী দরকার ছিল?
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, ''পশ্চিমবঙ্গে মমতাই জোট ভেঙে দিয়েছেন। এখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এনডিএ-কে সমর্থনের লাইনে দাঁড়িয়ে গিয়েছেন। লোকসভা ভোটের পর মমতা ওদেরও সমর্থন করতে পারেন।''
৪০-এর কটাক্ষ
ফেব্রুয়ারির গোড়ায় রাহুল গান্ধীর ন্যায় যাত্রা পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে। সেই সময় মমতা বলেন, "হিন্দি বলয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে ৩০০ আসনে লড়লেও ৪০টা আসনও কংগ্রেস পাবে কিনা সন্দেহ। আর পশ্চিমবঙ্গে এসেছে যাত্রা নিয়ে। এর লক্ষ্য মুসলিম ভোট ভাগ করা।"
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবার ৪০০-র বেশি আসন জয়ের লক্ষ্য ঠিক করেছেন। কংগ্রেস গতবারের মতো খারাপ ফল করলে বিজেপি ও তার সহযোগীরা লক্ষ্য পূরণ করতেই পারে। কংগ্রেস যদি ৪০টি আসন পায়, তাহলে তো বিজেপি-র চারশ পারের স্বপ্ন পূরণ হয়ে যাওয়ার কথা। প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের প্রশ্ন, তাহলে মমতাও কি পরোক্ষে বিজেপির দাবিকেই পুষ্ট করছেন না?
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনোদিনই ইন্ডিয়া জোটের শরিক ছিলেন না। মন থেকে ইন্ডিয়া জোটকে মেনে নিতে পারেননি। যদি তিনি মেনেই নেবেন, তা হলে (জোটের অন্য দলগুলোর সঙ্গে) আলোচনা ছাড়া ব্রিগেডে ৪২ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিতেন না।"
আগে কংগ্রেস ৪০-এর বেশি আসন পাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেও এ সপ্তাহে মমতা অবশ্য বলেছেন, বিজেপি ২০০-র বেশি আসন পাবে না. বিরোধী ইন্ডিয়া জোট ৩১৫টি আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসতে চলেছে। কিন্তু খুব বিস্ময়করভাবে তৃণমূল নেত্রী সেই সরকারে যোগদানের সম্ভাবনা আগেই খারিজ করে দিয়েছেন।
সিএএ সমর্থন
এবারের নির্বাচনে মমতার পাশাপাশি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছেন। প্রতি সভায় বিজেপিকে তুলোধোনা করছেন। কিন্তু তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড চলতি সপ্তাহে বলেছেন, তাদের দল সিএএ সমর্থন করতে তৈরি, যদি এনআরসি না হয়।
গত রবিবার বনগাঁর সভায় অভিষেক বলেন, "বিজেপির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর প্রধানমন্ত্রী এসে যদি ঘোষণা করেন যে, আমরা নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দেবো, এনআরসি হবে না, তা হলে তৃণমূলের কেউ সমর্থন করুক আর না করুক, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সমর্থন করবে। আমি কথা দিয়ে যাচ্ছি।”
২০১৯ সালের নির্বাচন থেকেই তৃণমূল সিএএ-র কট্টর বিরোধিতা করেছে। চলতি নির্বাচনের প্রচারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে সিএএ কার্যকর করতে দেবেন না। এর জন্য আবেদন করলে নাগরিকত্ব চলে যাবে, সরকারি সুযোগ-সুবিধা মিলবে না, এমন হুঁশিয়ারিও শুনিয়েছেন তিনি।
এতদিন একই সুরে সিএ এর বিরোধিতা করেছেন অভিষেক। কিন্তু চার দফার ভোট হয়ে যাওয়ার পর কেন হঠাৎ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকে সমর্থনের কথা বললেন তিনি, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এটা কি শুধুই মতুয়া ভোটারদের একাংশকে কাছে টানার চেষ্টা, না এর অন্য কোনো তাৎপর্য আছে?
রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, "ক্যা ক্যা করে প্রচারে সিএএ নিয়ে কটাক্ষ করেছেন মমতা। এখন অভিষেক সমর্থন করার কথা বলছেন। আসলে তৃণমূল দুই নৌকায় পা দিয়ে চলছে। এনডিএ গরিষ্ঠতা পেলে তৃণমূল তাদের সঙ্গে চলে যেতে পারে।"
গোপন সমঝোতার অভিযোগ
কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান ডিডাব্লিউকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন,'' ওদের মধ্যে তো গোপন সমঝোতা আছে, পিসি-ভাইপো কাউকে গ্রেপ্তার করছে না। আমাদের রাস্তায় নামা উচিত ছিল। কিন্তু আমরা রাস্তায় নামতে পারিনি।''
কংগ্রেস ও সিপিএম দীর্ঘদিন ধরে এই গোপন আঁতাতের অভিযোগ করে আসছে।