মধ্যপ্রাচ্যে নিরানন্দ রমজানের প্রস্তুতি
২০ এপ্রিল ২০২০রমজান মাস আত্ম পরিশুদ্ধি ও সামাজিকতার মাস৷ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীরা পবিত্রতম এ মাসে সকাল-সন্ধ্যা রোজা রাখেন এবং তারপর পরিবার বা সম্প্রদায়ের সদস্যদের সঙ্গে একত্রে ইফতার করেন৷ মাসের শেষে রয়েছে ঈদুল ফিতরের উৎসবও৷
কিন্তু এ বছর নভেল করোনা ভাইরাসের দ্রুত সংক্রমণে লাখ লাখ মানুষ মধ্যপ্রাচ্যে লকডাউনে আটকা পড়েছেন৷ সৌদি আরব থেকে লেবানন, এমনকি লিবিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশেও পড়েছে করোনার প্রভাব৷ পুরো অঞ্চল জুড়ে মসজিদ বন্ধ রয়েছে৷ এমনকি মুসল্লিদের তারাবির নামাজও বাসায় থেকে পড়তে বলা হচ্ছে৷
সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি আব্দুল আজিজ আল শেখসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশের ধর্মীয় নেতা রমজান ও ঈদ এবার ঘরে থেকে পালন করার নির্দেশনা দিয়েছেন৷ মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদের মোয়াজ্জিন আলী মুল্লাহ দুঃখপ্রকাশ করে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘‘আমাদের অন্তর কাঁদছে৷'' তিনি বলেন, ‘‘আমরা এই পবিত্র মসজিদে দিন রাত সবসময় ধর্মপ্রাণ মানুষের ভিড় দেখে অভ্যস্ত৷ আমরা মনের গভীরে এ ব্যথা অনুভব করছি৷''
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে কাবাতেও নেই মুসল্লিদের আনাগোণা৷ অন্য যেকোনো সময় কাবার চারপাশের চত্ত্বর লোকে লোকারণ্য থাকে৷ গত মাসে উমরাহ হজও বন্ধ করে দেয় সৌদি কর্তৃপক্ষ৷
জুলাই মাসের শেষে মূল হজও বাতিল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ এমন হলে এটিই হবে আধুনিক ইতিহাসে হজ বাতিলের প্রথম ঘটনা৷ এরই মধ্যে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন দেশের মুসলিমদের হজে আসার আগাম প্রস্তুতি না নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে৷
কোনো উৎসব নয়
জেরুসালেম ও ফিলিস্তিন অঞ্চলের গ্র্যান্ড মুফতি মোহাম্মদ হোসেইন রমজান মাসজুড়ে মসজিদে নামাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছেন৷ এছাড়া রমজান মাসের চাঁদ দেখতে একসঙ্গে জ ড়ো না হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ীই এসব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে৷ সংস্থাটির পক্ষ থেকে বিশ্বের সব দেশকেই আহ্বান করা হচ্ছে রমজানকে কেন্দ্র করে যাতে বড় যে-কোনো জমায়েত নিরুৎসাহিত করা হয়৷
রমজানকে কেন্দ্র করে ইফতারের পণ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসাতেও মারাত্মক প্রভাব পড়েছে৷ এবছর বরং মাস্ক, হাতমোজা এবং অন্যান্য চিকিৎসাপণ্য বিক্রি হচ্ছে বেশি৷
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করেন ৫১ বছরের ইউনুস৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি রমজানের সময় কেনাকাটার জন্য কিছু টাকা জমিয়ে রেখেছিলাম৷ কিন্তু কোয়ারান্টিনে থাকার জন্য জরুরি কিছু জিনিস এবং বিভিন্ন সুরক্ষা পণ্য কিনেই সেসব অর্থ শেষ হয়ে গেছে৷ এ বছর কোনো বেড়ানো নেই, উৎসব নেই৷ যেখানেই যাই মনে হয় ভাইরাস চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে আছে৷
অর্থনৈতিক অবরোধে বিপর্যস্ত ইরান গত সপ্তাহে তেহরানে কিছু দোকান খোলার অনুমতি দিয়েছে৷ মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দেশ হওয়া সত্ত্বেও সংক্রমণ আর অর্থনৈতিক দুর্দশার মধ্যে ভারসাম্য খুঁজতে হচ্ছে দেশটিকে৷
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেশটিতে এখন ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত, মারা গিয়েছেন পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ৷ কিন্তু আশঙ্কা করা হচ্ছে বাস্তবে এ সংখ্যা আরপো অনেক বেশি হবে৷
দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনি দেশটির নাগরিকদের রমজানে বাসায় বসে নামাজ আদায়ের আহ্বান জানিয়েছেন৷
মিশরের রাজধানী কায়রোতে কিছু সড়ক ও বাজারে রমজান উপলক্ষ্যে আলোকসজ্জা করা হয়েছে৷ তবে সব ধরনের রেস্টুরেন্ট ও খাবারের দোকান বন্ধ রয়েছে৷
তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দেয়া হলেও বাসায় থেকে রোজা রাখতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ধর্মীয় নেতারা৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের বিভিন্ন পরামর্শের তালিকায় বলেছে, কোভিড-১৯ এর সঙ্গে রোজা থাকার সম্পর্ক নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা হয়নি৷'' তবে সংস্থাটি একই সঙ্গে বলছে, ‘‘অন্য সব বছরের মতো সুস্থ মানুষের রোজা রাখলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না৷ তবে অন্য সব রোগের মতো কোভিড-১৯ এর রোগীদেরও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া উচিত৷''
লিবিয়ার মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে এই সামাজিক দূরত্ব নতুন কিছু নয়৷ দুই সন্তানের মা এবং ৫৪ বছর বয়সি ব্যাংকার করিমা মুনিরের মতে, ‘‘এ বছর আমার জন্য রমজান একটু আগেই এসেছে৷ কারফিউয়ের সময় রমজানের মতোই অফিসের সময় কমে যায়৷ রমজান সবসময় দানের মহিমা নিয়ে আসে৷ এবছর যুদ্ধের কারণে অনেক মানুষ ঘরহারা হয়েছে৷ তাদের সাহায্য দরকার৷''
এডিকে/এসিবি (এএফপি)