মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো বন্ধ করতে নতুন আইন
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১০প্রতিটি দেশেই ঠিক করে দেওয়া আছে, রক্তে সর্বোচ্চ কতটুকু অ্যালকোহলের মাত্রা থাকলে গাড়ি চালানো যাবে৷ আয়ারল্যান্ডে সম্প্রতি এ নিয়ে চালু করা হয়েছে নতুন আইন৷ প্রশ্ন উঠেছে, এর ফলে কি রাস্তায় মানুষরা আরো নিরাপদে চলাফেরা করতে পারবে ?
ইউরোপের রাস্তায় একটি আইন বেশ কঠোরভাবে মেনে চলা হয়৷ তা হল, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো একেবারে নিষেধ৷ তবে নির্দিষ্ট মাত্রায় মদ খেলে কোনো ক্ষতি নেই৷ সব দেশেই রক্তে অ্যালকোহলের একটা সর্বোচ্চ মাত্রা বেঁধে দেওয়া রয়েছে৷ যেমন আয়ারল্যান্ডে এতদিন এই সীমা ছিল ৮০ মিলিগ্রাম৷ সম্প্রতি এই মাত্রা ৮০ থেকে নামিয়ে ৫০-এ আনা হয়েছে৷ ফলে কোন চালকই এক গ্লাস ওয়াইন বা এক পাইন্ট বিয়ারের বেশি পান করতে পারবে না, যদি সে পানপর্ব শেষ করে গাড়ি চালাতে চায়৷ সেই আইন অনুযায়ী যারা পেশাগত চালক তাদের জন্য নির্দিষ্ট মাত্রা আরও কম – ২০ মিলিগ্রাম৷ যে সব সংস্থা রাস্তাঘাট নিরাপদ রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছে, তারা সরকারের এই আইনকে স্বাগত জানিয়েছে৷ তাদের মতে, এর ফলে রাস্তাঘাটে অপমৃত্যুর সংখ্যা কমে যাবে৷ আয়ারল্যান্ডের গাড়ি চালক সমিতির কনর ফনান জানান, এই আইনের ফলে আয়ারল্যান্ড ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোর সমকক্ষ হবে৷
কেন এই আইন ?
ফনান জানান, ‘‘শুধু আয়ারল্যান্ড ও ব্রিটেন, সম্ভবত মাল্টার আইনেও অ্যালকোহলের মাত্রা ৮০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত মেনে নেওয়া হত৷ ইউরোপের অন্যান্য দেশে সর্বোচ্চ মাত্রা ৫০ মিলিগ্রাম বা তারও কম৷ এই আইনের মধ্যে দিয়ে ইউরোপের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে আমরা এক পর্যায়ে এসেছি৷ এর ফলে রাস্তাঘাটে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমাদের যে সমস্যা রয়েছে, সেবিষয়ে সচেতনতা তৈরি হচ্ছে৷ রাস্তাঘাটে দুর্ঘটনার ফলে মৃত্যুর হার কমাতে আমরা পদক্ষেপ নিতে পারি৷ আমি আরো মনে করি, আয়ারল্যান্ডের বেশিরভাগ মানুষও এই আইনটিকে সাদরে গ্রহণ করেছে৷''
নতুন এই আইন অমান্য করলে কী শাস্তি হবে তাও জানানো হয়েছে৷ প্রাথমিকভাবে ২০০ ইউরো জরিমানা করা হবে৷ দ্বিতীয়বার ধরা পড়লে ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে তিন পয়েন্ট কাটা যাবে৷ পরিবহন মন্ত্রী নোয়েল ডেম্পসে জানান, শাস্তি আরো কঠোর করা হবে৷ এমনকি আইনে ৬ মাস গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব ছিল৷ কিন্তু ঐক্যমতের খাতিরে তা বাতিল করতে হয়৷ ডেম্পসের মতে, ‘‘লঘু শাস্তি আমরা আইনটিতে অন্তর্ভুক্ত করেছি৷ আমি জানতাম, এই আইন কার্যকরী করা এত সহজ হবে না কারণ সব মহল এই আইনকে সমর্থন করছে না৷ যেমন ৬ মাস গড়ি চালানো বন্ধ থাকার বিষয়ে আমরা সমর্থন পাই নি৷ তিন পয়েন্ট কাটা যাবে এর অর্থ হল হলুদ কার্ড পাওয়া৷ আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল রক্তে অ্যালকোহলের সর্বোচ্চ মাত্রা কমিয়ে আনা৷''
নতুন আইনে ক্ষুব্ধ অনেকেই
যারা এই আইনের পুরোপুরি বিরোধিতা করছে তারা হল বিভিন্ন পাব ও বারের মালিকরা৷ পাব সমিতির মতে, এই আইনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তাদের ব্যবসায়৷ ভিন্টন্যার্স ফেডারেশনের প্রধান প্যাডরেইগ ক্রিবেন৷ ক্ষুব্ধ ক্রিবেন বললেন, ‘‘এই আইনের কোন প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না৷ আমরা মনে করি না এই আইন প্রবর্তনের মধ্যে দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে৷ যদি মানুষের জীবন বাঁচানো এতই প্রয়োজন, তাহলে মন্ত্রীসাহেব স্পিড ক্যামেরা রক্ষণাবেক্ষণের পেছনে পয়সা ঢালতেন৷ অ্যালকোহল মানুষকে মারে না – মারে দ্রুত গতিতে ছুটে আসা গাড়ি৷ আমরা বিশ্বাস করি, এই আইনের কোন প্রয়োজন নেই, এতে কোনো লাভ হয় না৷''
সড়ক নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ অবশ্য তা মনে করে না৷ তাদের মতে, যে কোন দুর্ঘটনার মূলে রয়েছে অ্যালকোহল৷ সেসব দুর্ঘটনা থেকে কোন মানুষকেই বাঁচানো সম্ভব হয়নি৷ কঠোর আইন থাকলেই সবাই তা মেনে চলবে, চলতে বাধ্য হবে৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ