গ্যাস বিপর্যয়
২৯ জুন ২০১২মধ্যপ্রদেশের ভোপালে ১৯৮৪ সালে ইউনিয়ন কার্বাইড কারখানার গ্যাস দুর্ঘটনা এবং তার ক্ষতিপূরণের দায় ইউনিয়ন কার্বাইড বা কোম্পানির তৎকালীন চেয়ারম্যান ওয়ারেন অ্যান্ডারসন'এর নয়, এই মর্মে রায় দিয়েছে একটি মার্কিন আদালত৷ সেই রায়ে বলা হয়েছে, পরিবেশ দূষণের দায় কোম্পানি বা তার চেয়ারম্যানের হতে পারেনা৷ এর দায় বর্তায় রাজ্য সরকারের ওপর৷ কারণ রাজ্য সরকারই কারখানার জমি দিয়েছিল৷
স্বাভাবিকভাবেই, এই রায়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারতের নাগরিক সমাজ, গ্যাস পীড়িতদের জন্য আন্দোলনকারী সংগঠন এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলি৷ তাদের মতে এই রায় অন্যায্য৷
গ্যাস পীড়িতদের আন্দোলনকারী সংগঠনের এক নেতা বলেন, ‘‘এর বিরুদ্ধে আপীল করা হবে৷ আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস যেসব নথিপত্র এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ আছে তাতে এই রায় পাল্টাতে আমরা সক্ষম হব৷''
কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী অম্বিকা সোনি বলেন, সরকার এর প্রতিকার করবে৷ ক্ষতিগ্রস্থরা যাতে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পায়, তা দেখবে৷ বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ মনে করেন, এই রায় শুধু অন্যায্য ও দুর্ভাগ্যজনক নয়, এটা ভারতীয়দের বিশ্বাসও ভঙ্গ করেছে৷
সাম্প্রতিক কালের ইতিহাসে শিল্পকারখানায় এতবড় বিপর্যয় আর হয়নি৷ সে সময় হাজার হাজার মানুষ মারা যায় বিষাক্ত মিথাইল আইসোসায়নেট গ্যাস লিক করায়৷ হাজার হাজার মানুষ সারা জীবনের মতো হয় পঙ্গু হয়ে যায়, নাহয় কঠিন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়৷ বিষাক্ত পদার্থে দুষিত হয় কারখানা ও তার আশেপাশের এলাকার ভূগর্ভস্থ জল ও মাটি৷ আর সেই দুষিত জল খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে স্থানীয় আরও বহ মানুষ৷ কারখানা চত্বরে আজও পড়ে আছে কয়েকশো টন বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ৷
এই বিপর্যয়ের এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের দায় কার? - এ নিয়ে মামলা চলে দেশে ও বিদেশে৷ ক্ষতিপূরণ যা পাওয়া যায়, তা অপরাধের তুলনায় নগণ্য৷ তাই এই রায়ে ভোপাল গ্যাস পীড়িতদের আন্দোলন যে মস্ত বড় ধাক্কা খেল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷
প্রতিবেদন: অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ