1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ভোক্তার স্বার্থে আইন’

সমীর কুমার দে, ঢাকা১ জুন ২০১৬

সাধারণ ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলার একমাত্র প্রতিষ্ঠান কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ক্যাব)৷ ১৯৭৮ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি ভোক্তাদের স্বার্থে আন্দোলন করে আসছে৷ নিরাপদ, ভেজালমুক্ত খাদ্যের জন্য প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে৷

https://p.dw.com/p/1IwSX
Bangladesch Landwirtschaft Tomaten
ছবি: Abdus Salam

অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেও তাদের আন্দোলন৷ এই প্রতিষ্ঠানটির কারণেই সরকার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন আইন, নিরাপদ খাদ্য আইন, ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইনসহ বহু আইন করেছে৷ এত আইন হলেও এগুলোর বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এখনো গড়ে উঠেনি৷ এখনই দরকার এই প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে এ কথাগুলোই বলছিলেন ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান৷কিছুদিন আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি৷ সেখান থেকে অবসর নিয়ে ভোক্তাদের অধিকারের আন্দোলনে মাঠে নেমেছেন৷

ডয়চে ভেলে: ক্যাব দীর্ঘদিন ধরে ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করে আসছে৷ আপনাদের এই আন্দোলনের কারণে জনগণ কতটা উপকৃত হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?

গোলাম রহমান: ক্যাব প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৮ সালে৷ তারপর থেকে নিরাপদ খাদ্য, ভেজালমুক্ত খাদ্য, দ্রব্যমূল্যসহ নানা বিষয়ে ক্যাব কাজ করে আসছে৷ ভোক্তার স্বার্থ ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ক্যাব সরকারি পর্যায়ে কাজ করে, তেমনি জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সাধারণের মাঝেও কাজ করে৷ সারাদেশে ক্যাবের কমিটি আছে৷ ক্যাবের প্রচেষ্টার ফলেই বেশ কয়েকটি আইন হয়েছে৷ সেগুলো ভোক্তা বান্ধব ও ভোক্তাদের অধিকার সুরক্ষায় যথেষ্ট অবদান রাখছে বলে আমাদের ধারণা৷ সাম্প্রতিক সময়ে যেসব আইন হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, যেটাতে বাণিজ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটা কাউন্সিল আছে৷ সেখানে ক্যাব ভোক্তাদের একমাত্র প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান৷ এছাড়া আরো কিছু আইন হয়েছে, যেমন নিরাপদ খাদ্য আইন, কম্পিটিশন আইন-২০১২৷ এখন আসলে একটা আইনি কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ এছাড়া অ্যান্টি টোবাকো আন্দোলনেও ক্যাব-এর যথেষ্ট ভুমিকা আছে৷ বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য আন্দোলনসহ এমন অনেক আন্দোলনে ক্যাব অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে৷ সীমিত শক্তি থাকার পরও ভোক্তা বা ক্রেতার স্বার্থ সংরক্ষিত হয় তার জন্য জনসচেতনতা ও সরকারের উপর পেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করছে ক্যাব৷

গোলাম রহমান

ক্যাব এ সব আন্দোলনে সাধারণ ভোক্তাদের কতটা সম্পৃক্ত করতে পেরেছে?

ক্যাবের মেম্বার যে বেশি, তা নয়৷ প্রতি জেলায় কয়েকশ' করে লোক ক্যাবের সঙ্গে জড়িত৷ তবে ক্যাব-এর প্রতি মানুষের সমর্থন আছে৷ এবং সরকারেরও অনুমোদন আছে৷ ক্যাব যে সাধারণ মানুষের কথা বলে এ জন্য আমার ধারণা সাধারণ মানুষও এটাকে সমর্থন করে৷ এটি স্বেচ্ছাসেবা এবং অলাভজনক প্রতিষ্ঠান৷ ক্যাব ভোক্তা সাধারণের পক্ষে কাজ করছে এবং তাদের একটা সমর্থন নিয়েই কাজ করছে৷ সরকারও তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে বলেই আমার বিশ্বাস৷

বাংলাদেশে খাদ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা ভেজাল৷ এই ভেজাল প্রতিরোধে ক্যাব কতটা সফল বলে আপনি মনে করেন?

ক্যাব-এর তো নিজস্ব কোনো আইনগত ক্ষমতা নেই৷ যে মোবাইল কোর্ট চলে সেখানে ক্যাব সহায়তাকারীর ভূমিকা পালন করে৷ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর যখন বাজারে কাজ করে বা মোবাইল কোর্ট চালায়, তখন ক্যাব কিন্তু তাদের সঙ্গে থাকে৷ অনৈতিক লাভের জন্য ব্যবসায়ীরা যেটা করে, সেটা এক দিনের সমস্যা না৷ দিন দিন নানা কেমিক্যালের ব্যবহার বেড়েছে৷ এটা অ্যালার্মিং৷ ক্যাব সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছে এবং ক্যাবের উদ্যোগেই ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইনটা হয়েছে৷

সামনেই রমজান৷ ভোক্তাদের স্বার্থে এই রমজান উপলক্ষ্যে ক্যাব কী করতে চায়?

আমরা সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছি৷ পাশাপাশি সরকারের প্রতি আমাদের আহবান যেন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকে, ভেজালমুক্ত থাকে এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে৷ এর জন্য দেনদরবার প্রচেষ্টা অব্যহত আছে৷

ক্যাব তো অনেক গবেষণাও করে৷ এমন কী কোনো গবেষণা আছে যা থেকে বোঝা যাবে আমরা যা যা খাচ্ছি তার কোনটাতে কতটা ভেজাল?

এসব নিয়ে গবেষণার দরকার আছে সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই৷ কিন্তু আমাদের যে রিসোর্স তাতে বড় ধরনের কোনো গবেষণা আমরা করতে পারি না৷ ক্যাব-এর সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের অর্থায়নের আমরা কিছু প্রজেক্ট নিয়ে থাকি৷ নিরাপদ খাদ্যের জন্য একটা প্রজেক্ট করেছি জেলা পর্যায়ে৷

যাদের বিরুদ্ধে খাদ্যে ভেজাল বা অনৈতিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ, তাদের অনেকেই ক্যাব-এর মেম্বার হয়েছে এমন অভিযোগ শোনা যায়...

এ ধরনের অভিযোগ একেবারেই মিথ্যা৷ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বা যারা ব্যবসা করে তাদের সঙ্গে ক্যাব-এর কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই৷

ক্যাব-এর সঙ্গে থাকলে ভ্রাম্যমান আদালত থেকে রেহাই পাওয়া যায়৷ এ কারণে নাকি অনেকেই ক্যাবের সদস্য হতে আগ্রহ দেখায়?

এসব কারণেই আমরা সদস্যপদ দেয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করি৷

ক্যাবের সদস্যসংখ্যা কত?

ঢাকাতে সদস্য দু'শর মতো৷ জেলা পর্যায়েও দু-আড়াইশ' হবে৷ প্রত্যেক জেলাতেই আমাদের সদস্য আছে৷

ক্যাবের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

আমরা নিরাপদ খাদ্য, ভেজালমুক্ত খাদ্য, দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা, সেবামূল্য স্থিতিশীল রাখা, বিশেষ করে ওষুধ নকলমুক্ত রাখার জন্য আরো বেশি কাজ করব

সাধারণ মানুষ নিরাপদ খাদ্যের জন্য অনেকাংশেই ক্যাবের উপর নির্ভরশীল৷ এক্ষেত্রে ক্যাব কতটুকু দায়িত্ব পালন করতে পেরেছে বলে আপনার মনে হয়?

আমরা চেষ্টা করছি৷ আমাদের সফলতা যে শতভাগ, আমি সেটা বলব না৷ আমাদের আন্দোলন, প্রচেষ্টার ফলে সচেতনতা যে বাড়ছে সেটা বলাই যায়৷ সরকারও যেমন ভোক্তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় সে ব্যাপারে যত্নবান৷ গত কয়েক বছরে যেসব আইন হয়েছে যেমন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯, প্রতিযোগিতা আইন ২০১২, নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩, ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৫সহ একটা আইন কাঠামো কিন্তু প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ আইনি কাঠামো প্রতিষ্ঠার পেছনে ক্যাবের যথেষ্ট প্রচেষ্টা আছে৷ এই আইনগুলো বাস্তবায়নের জন্য যে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দরকার তা কিন্তু গড়ে ওঠেনি৷ অনেক ক্ষেত্রে যা-ও গড়ে উঠেছে তা কিন্তু খুবই দুর্বল৷ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর গড়ে উঠেছে৷ কিন্তু জেলার অফিসগুলোতে এর জনবল অত্যন্ত কম৷ আমরা বলে আসছি, এই আইনগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো যেন সৃষ্টি করা হয়, জনবল দিয়ে এই আইনগুলির কার্যক্রম বাড়ানো হয় এবং জনগণের দোড়গোড়ায় আইনগুলির সুফল পৌঁছে দেয়া হয়৷

সাধারণ ভোক্তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার জন্য আপনারা কী করছেন?

আমরা সভা করি, সেমিনার করি, সিম্পোজিয়াম করি, র্যালি করি৷ স্কুল কলেজে বাচ্চাদের সচেতন করার চেষ্টা করি৷ প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের কার্যক্রম খুবই সীমিত৷ আমরা গণমাধ্যমের সহায়তা পাই৷ তবে গণমাধ্যম যদি আরো এগিয়ে আসে তাহলে এই আন্দোলনটা আরো বিস্তৃতি লাভ করবে৷ মানুষ উপকৃত হবে৷

সাধারণ মানুষের কাছে আপনার চাওয়া কী?

মানুষ নিজের অধিকারের বিষয়ে সচেতন হোক৷ অধিকারের বিষয়ে সোচ্চার হোক- এটাই আমাদের চাওয়া৷ এর অতিরিক্ত কিছু না৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য