যেভাবে নির্বাচনি প্রচার চালাবেন প্রধানমন্ত্রী
১২ ডিসেম্বর ২০১৮প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বুধবার গোপালগঞ্জে তাঁর নিজ নির্বাচনি আসনে জনসভার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনি প্রচার শুরু করেছেন৷ তিনি সড়কপথে গোপালগঞ্জ গিয়েছেন৷ বৃহস্পতিবার সড়ক পথেই ঢাকায় ফিরে আসবেন৷ ঢাকায় ফেরার পথে তাঁর সাতটি পথসভায় বক্তৃতা দেয়ার কথা রয়েছে৷ ফেরার পথে সর্বশেষ তিনি সাভারে পথসভায় বক্তৃতা দেবেন৷
আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আজ (বুধবার) নিজ নির্বাচনি এলাকায় গেলেও জেলায় জেলায় তিনি নির্বাচনি প্রচারে যাবেন না৷ এমনকি সব বিভাগেও যাবেন না৷ সিলেট ও রংপুর বিভাগে যাবেন৷ তবে বিভিন্ন জেলায়, নির্বাচনি এলকা ও বিভাগে তিনি ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখবেন৷ জেলাগুলোতে একাধিক জায়ান্ট স্ক্রিনের মাধ্যমে তাঁর বক্তব্য প্রচার করা হবে৷ আর এজন্য সিডিউল তৈরি করা হচ্ছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘এই কাজের জন্য ধানমন্ডিতে তাঁর নিজ বাড়ি সুধাসদনে স্টুডিও তৈরি করা হয়েছে৷ তিনি সেখান থেকেই বক্তব্য দেবেন৷''
অতীতের নির্বাচনগুলোতে শেখ হাসিনা জেলায় জেলায় সফর করেছেন৷ এবার কেন করবেন না জানতে চাইলে বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘‘প্রথমত প্রধানমন্ত্রী কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন না৷ নিরাপত্তা বলতে তিনি নিয়ম মাফিক যা পান, তাই৷ জেলায় জেলায় সফর করতে হলে তাঁকে ব্যক্তিগত গাড়ি, বিমান বা অন্যকোনো ভাড়ার যানবাহন ব্যবহার করতে হবে৷ এতে জনদুর্ভোগ সুষ্টি হতে পারে এবং সময়সাপেক্ষ৷ নির্বাচন কাছেই৷ সময় তত নেই৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘নিরাপত্তা ইস্যু তো আছেই৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন৷ নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় রাখা হয়েছে৷''
এদিকে গোপারগঞ্জে শেখ হাসিনার এই প্রথম আনুষ্ঠানিক নির্বাচনি সফরের সঙ্গে আছেন বাংলা ট্রিবিউনের সিনিয়র রিপোর্টার মাহবুব হাসান৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘ দুপুরে শেখ হাসিনা তাঁর বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে সরাসরি সড়ক পথে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া নিজ বাড়িতে যান৷ সেখানে তিনি তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারত করেন৷ দুপুরের পর তিনি কোটালিপাড়া শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ কলেজ মাঠে প্রথম নির্বাচনি জনসভায় বক্তৃতা করেন৷ বক্তৃতায় তিনি তাঁর সরকারের আমলের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য নৌকায় ভোট চান৷ তিনি নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী ও ষড়ন্ত্রকারীদের উপযুক্ত জবাব দেয়ার আহ্বান জানান৷''
তিনি আরো জানান, ‘‘শেখ হাসিনা এই সফরে কোনো সরকারি সুবিধা নিচ্ছেন না৷ তিনি তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িতেই গোপালগঞ্জ যান এবং এই গাড়িতেই বৃহস্পতিবার ঢাকা ফিরবেন৷ রাতে তিনি টুঙ্গিপাড়ায় তাঁর পৈত্রিক বাড়িতেই অবস্থান করবেন৷''
মাহবুব হাসাস জানান, ‘‘লুৎফুর রহমান আদর্শ কলেজ মাঠের সমাবেশে ব্যাপক লোক সমাগম হয়৷ বিশেষ করে নারীদের উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি৷''
সিলেট থেকে ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনি প্রচারণা শুরু:
বুধবার সিলেটের রেজিষ্ট্রি অফিস মাঠে জনসভার মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনি প্রচার শুরু হওয়ার কথা থাকলেও জনসভা আগেই বাতিল করা হয়৷ ঐক্যফ্রন্টের দুই নেতা বিএনপির নজরুল ইসলাম খান এবং জাসদ নেতা আ স ম আব্দুর রব দুপুরে সিলেট যান৷ বিকেল সাড়ে চারটার দিকে যান ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন৷ তিনি হযরত শাহজালালের মাজার জিয়ারতের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন৷ সেখানে উপস্থিত সিলেটের সাংবাদিক তুহিনুল হক তুহিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ড. কামাল হোসেন বলেছেন, স্বাধীনতার মূল লক্ষ্যই হলো গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচন৷ এই নির্বাচন সুষ্ঠু হলেও স্বাধীনতা রক্ষা করা সম্ভব৷ আগামী ৩০ তারিখ আপনারা ভোট দেবেন৷ ভোট কেন্দ্র পাহারা দেবেন৷ দুই নাম্বারি যাতে কেউ না করতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে৷ আমরা শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবো৷ নির্বাচন থেকে কোনোভাবেই সরে দাঁড়াব না৷''
ড. কামাল হোসেনের রাতেই ঢাকায় ফিরে আসার কথা৷ তিনি কোনো নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেননি৷ তবে রাতে সিলেট-৩ ও সিলেট-৪ আসনে কয়েকটি পথসভা করার কথা রয়েছে আ স ম আব্দুর রব ও নজরুল ইসলাম খানের৷ তাঁরা আলাদাভাবে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে৷''
সিলেটের রেজিষ্ট্রি অফিস মাঠের জনসভা বাতিল করা হলো কেন জানাতে চাইলে সিলেট বিএনপি'র সাধারণ সম্পাদক এবং ঐক্যফ্রন্টের বিভাগীয় সমন্বয়ক আলী আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আমাদের সমাবেশ বানচাল করা হতে পারে এই আশঙ্কায় সমাবেশ করিনি৷ নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা ছিল৷ আর অল্প সময়ে আমরা সার্বিক প্রস্তুতিও নিতে পারিনি৷ আমাদের আশঙ্কা সত্যিই ছিলG ড. কামাল হোসেন সাহেব এসেছেন বিকেল সাড়ে টারটায়৷ কৌশলে তাঁর ফ্লাইট দেরি করিয়ে দিয়েছে সরকার৷ তারপরও দরগাহর (শাহ জালালের মাজার) সামনে আমাদের পথসভার প্রস্তৃতি ছিল সন্ধ্যায়৷ হাজার হাজার লোক ছিল৷ কিন্তু পুলিশ আমাদের পথসভা করতে দেয়নি৷ মাইক কেড়ে নিয়েছে৷''
তিনি জানান, ‘‘রাতেই ড. কামাল হোসেন চলে যাবেন৷ কিন্তু অন্যান্য জাতীয় নেতৃবৃন্দদের নিয়ে রাতেই আমাদের দক্ষিণ সুরমা এবং জৈন্তা বাজারে বড় দু'টি পথসভা হবে৷ আমাদের প্রস্তুতি ভালো৷ কোনো খারাপ আশঙ্কা করছি না৷''