ভিআইপি সংস্কৃতি নিয়ে যা বলছে সাধারণ মানুষ
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে আতঙ্কের এক নাম ভিআইপি৷ ঢাকা শহরে চলাচলকারী এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবেনা, যিনি ভিআইপির কারণে সামান্য ভোগান্তির শিকার হননি৷ এ বিষয়ে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের প্রতিক্রিয়া থাকছে ছবিঘরে৷
রফিকুল ইসলাম নাসিম, পর্যটন ব্যবসায়ী
ঢাকায় প্রয়োজনের তুলনায় রাস্তাঘাট অপ্রতুল৷এরমধ্যে নিত্য যানজটের সঙ্গী এই শহরে সবচেয়ে বড় বিড়ম্বনা ভিআইপি মুভমেন্ট৷ভিআইপি সংস্কৃতির কারণে প্রতিদিন সাধারণ মানুষের অনেক মূল্যবান কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়, যার আমিও একজন ভুক্তভুগী৷অফিস সময়ে ভিআইপিদের চলাচল নিয়ন্ত্রিত রেখে সাধারণ মানুষের যাতায়াতকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন, সাথে সাথে জরুরি সেবাদানকারী যানবাহনকে যে-কোনো পরিস্থিতিতেই সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া উচিত৷
মুশফিকা রুবাইয়াৎ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী
প্রতিদিনই আমরা ভিআইপি ভোগান্তির শিকার হই৷ উত্তরা থেকে আসার পথে ভিআইপি মুভমেন্টের কারণে প্রায়ই আটকা পড়ি৷ একেকটা সিগন্যালে আধঘণ্টা থেকে চল্লিশ মিনিটও আটকে থাকতে হয়৷ শুধু যে রাস্তাই আটকে থাকে এমন নয়, রাস্তা পার হওয়ারও উপায় থাকেনা৷ ফুটপাথেও হাঁটতে দেয়া হয়না৷ একারণে অনেক সময় পরীক্ষার হলেও দেরিতে ঢুকতে হয় আমাকে৷
রাতুল চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী
বাংলাদেশে ভিআইপি সংস্কৃতিটা অনেকটাই অপসংস্কৃতি মনে হয় তার কাছে৷ কারণ তিনি মনে করেন, দেশের একজন ভিআইপি তার নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে তার কোনো জরুরি কাজকে আটকে রাখতে পারেনা৷ তবে তাদেরও যেহেতু জরুরি চলাফেরা করতে হয় সেজন্য আমরা ভিন্ন কোনো উপায় খুঁজে বের করতে পারি, যাতে একজন সাধারণ মানুষও সামান্য ভোগান্তির শিকার না হন৷
আসিফ আহমেদ, চাকুরিজীবী
তার মতে ভিআইপিদের জন্য বিশেষ বিশেষ সুবিধা দেয়াটা দোষের কিছু নয়৷ তবে সেটা দিতে হবে অবশ্যই সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে না ফেলে৷ ভিআইপি মুভমেন্টের কারণে অনেক সময় অফিসে পৌঁছুতে দেরি হয়৷ তবে রাস্তা বন্ধ করে অন্যদের বিপাকে ফেলে ভিআইপি সংস্কৃতির ঘোর বিরোধী তিনি৷
লুৎফর রহমান, শিক্ষক
বিভিন্ন সময় দেখা যায় হাসপাতালে কোনো ভিআইপি ভর্তি হলে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়৷ এটা বন্ধ করা উচিত৷ সাধারণ রোগীরা এতে মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হন৷ মন্ত্রী এমপি হলে তো ডাক্তাররা তাদের নিয়েই ব্যস্ত থাকেন৷ এজন্য ভিআইপিদের বিশেষ কোনো হাসপাতালেই নেয়া উচিত৷ এছাড়া অ্যাম্বুলেন্সকে যে-কোনো ভিআইপি চালাচলের ঊর্ধ্বে আগ্রাধিকার দেয়া উচিত৷
শাওলিন শাওন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী
ভিআইপি বিড়ম্বনার সবচেয়ে বেশি সম্মুখীন হয়েছি রাস্তাঘাটে৷ কারণ অসংখ্যবার আমার ক্লাস মিস হয়েছে৷ কারণ ভিআইপি আসবে বলে এক ঘণ্টার বেশি সময়ও রাস্তায় আটকে থাকার অভিজ্ঞতা আছে৷ এসময়ে ফুটওভার ব্রিজও বন্ধ করে দেয়া হয়৷ তবে তার মতে ভিআইপিদের যেহেতু চলাচল করতেই হবে সেহেতু আলাদা একটি ইমার্জেন্সি লেন করা যেতে পারে৷ তাহলে হয়তো সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হবে না৷
তৌকির হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী
বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো বড় ধরণের ভিআইপি এলে তাদেরকে অভিনন্দন জানাতে আবাসিক হলগুলো থেকে শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক আনা হয়৷ দেখা যায় দীর্ঘ সময় ধরে রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়৷ গ্রামাঞ্চলেও এটা দেখা যায় যে, কোনো মন্ত্রী গেলে রাস্তার দুইপাশে ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়৷ এ ধরণের ভিআইপি সংস্কৃতি থাকা উচিত নয়৷
আবু রায়হান, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী
তার মতে ভিআইপি লোকজনের হয়ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হয়৷ তাই চলাচলের ক্ষেত্রে তাদের দিকটিও দেখতে হবে৷ তবে অবশ্যই ভিআইপি চলাচলে সাধারণ মানুষ যেন দুর্ভোগের শিকার না হন সেটাও দেখতে হবে সবার আগে৷
শরিফুল হাসান শুভ, ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত
যে ভিআইপি সংস্কৃতি সাধারণ মানুষেকে দুর্ভোগে ফেলে সেসবের ঘোর বিরোধী তিনি৷ তবে ভিআইপিদের যেহেতু দিনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্ম সারতে হয় সে কারণে তাদের জন্য এমন কোনো উপায় বের করতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষকে সমস্যায় পড়তে না হয়৷