1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘সুরেলা’ কাঠ খোঁজা সহজ নয়

রুট ক্রাউসে / জেডএইচ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩

সেতার-তানপুরা থেকে বেহালা-চেলো – এসব বাদ্যযন্ত্রের সুরের ঝংকার মন মাতিয়ে দেয়৷ কিন্তু সেই জাদুর মূল রহস্য লুকিয়ে রয়েছে কাঠের মধ্যে৷ জার্মানির এক কাঠ ব্যবসায়ী অনায়াসে সেই কাঠের সুর শুনতে পান৷

https://p.dw.com/p/19dE2
Djembe drums and caxixi shakers © GoodMood Photo #7143648 - Fotolia.com
ছবি: Fotolia/GoodMood Photo

কাঠের মধ্যেই বাদ্যযন্ত্রের সুরের রহস্য৷ আর সেই কাঠের খোঁজেই আন্দ্রেয়াস পালার আলপ্স-এর জঙ্গলে যান উপযুক্ত গাছের সন্ধানে৷ তিনি বলেন, ‘‘সবচেয়ে কঠিন কাজটা হলো বেহালা প্রস্তুতকারীদের মনের কথা বোঝা৷ তাদের চাহিদা অনুযায়ী কাঠ খোঁজা এবং সেই অনুযায়ী গাছ বেছে নেয়া৷ অর্থাৎ এমন গাছ খুঁজতে হবে, যা দিয়ে তারা নিজেদের পছন্দমতো কাজ করতে চাইবে৷''

গাছ থেকে সুরেলা কাঠ খোঁজার পথ সহজ নয়৷ তার জন্য চাই বিশেষ জ্ঞান৷ তাই তো অনেক দূর থেকেও আন্দ্রেয়াস পালার-এর কাছে কাস্টমাররা আসেন৷ যেমন ফ্রান্স থেকে আসেন জ্যঁ লুই প্রোশাসঁ৷ কাঠ কেনার জন্য তিনি প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দূর থেকে জার্মানির বাভারিয়া রাজ্যে আসেন৷ তিনি বললেন, ‘‘জানেন,বেহালা প্রস্তুতকারকরা কাঠের জন্য একটু পাগলামি করি৷''

ব্যবসায়ীরা উচ্চ মানের কাঠ চান৷ একশোটির মধ্যে হয়ত মাত্র একটি গাছ থেকে উপযুক্ত কাঠ পাওয়া যায়৷ আন্দ্রেয়াস পালার প্রতি পাঁচ বছরে হয়ত একটি মনের মতো গাছের সন্ধান পান৷ কাঠ শুকাতে পাঁচ বছর লেগে যায়৷ শুরুর দিকে প্রায় প্রতিদিনই দেখভাল করতে হয়৷ কিছুদিন পর বোঝা যায়, আসলে, কাঠটি কী রকম৷ আন্দ্রেয়াস পালার একটি নমুনা দেখিয়ে বললেন, ‘‘শব্দ হচ্ছে বটে, কিন্তু শুনতে ঠিক ভালো লাগছে না৷ কারণ শব্দটা তাড়াতাড়ি থেমে যাচ্ছে৷ এখনো ঠিক পরিণত অবস্থায় আসে নি৷ আরও সময় চাই, এটাকে আরো শুকাতে হবে৷ তবে এটা দিয়ে ভালো বাদ্যযন্ত্র তৈরি করা সম্ভব৷''

কাঠ শুকিয়ে যাওয়ার পর পালার তাঁর কাস্টমারের ইচ্ছা অনুযায়ী সেটা আবারও মসৃণ করে দেন৷ দেখতে মেশিনের কাজ মনে হলেও এর জন্য অনেক দক্ষতার প্রয়োজন৷ কারণ বাদ্যযন্ত্র প্রস্তুতকারীদের একেকজন একেক রকমের৷ তাদের কাঠও ভিন্ন৷ আন্দ্রেয়াস পালার বলেন, ‘‘মানুষের সব ইন্দ্রিয় সজাগ থাকা চাই৷ শুধু চোখে দেখা নয়, হাতে কাঠ নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখা উচিত, সব ঠিক আছে কি না৷ এছাড়া কাঠ কাটা বা মসৃণ করার সময় বোঝা যায়, করাত কত সহজে কাঠের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে৷ কাঠ রুক্ষ বা শক্ত কিনা৷ তখন বোঝা যায়, একেক কাঠের বৈশিষ্ট্য একেক রকম৷''

একটা ভাল বাদ্যযন্ত্র তৈরির জন্য শুধু কাঠের টুকরো হলেই চলে না৷ শব্দ শ্রুতিমধুর হওয়ার পেছনে ‘সাউন্ড পোস্ট' বা ছোট্ট লাঠির অবদানও অনেক৷ তাই আন্দ্রেয়াস পালার-কে সেটাও পরীক্ষা করে দেখতে হয়৷ সেটাই বেহালার প্রাণ৷ শব্দের ওঠানামা বহন করে এটি৷ তাই এটা থাকলেই কেবল বেহালার সেট পরিপূর্ণতা পায় এবং বিক্রির জন্য প্রস্তুত হয়৷ আন্দ্রেয়াস পালার-এর সংগ্রহে থাকা কাঠের দুই-তৃতীয়াংশই জার্মানির বাইরে চলে যায়৷ সারা বিশ্বে তাঁর প্রায় এক হাজার কাস্টমার আছে৷

পালার-এর এই কাস্টমার ভালভাবে চেলো-র কাঠ পরীক্ষা করে দেখেন৷ তিনি বছরে তিনটি চেলো তৈরি করেন৷ প্রতিটির দাম ২৮,০০০ ইউরো৷ তাই কাঠ একেবারে নিখুঁত হওয়া চাই৷ অবশেষে পাঁচ ঘণ্টা পর তিনি সঠিক কাঠ পেয়ে সন্তুষ্ট৷ বেহালা প্রস্তুতকারক জ্যঁ লুই প্রোশাসঁ বলেন, ‘‘আমার এটা পছন্দ হয়েছে৷ শব্দটা বেশ শ্রুতিমধুর, দ্রুত৷''

প্রয়োজন চেলো-র ঢাকনা, চেলো-র জমি, ফিংগার বোর্ড৷ প্রোশাসঁ দুই হাজার ইউরো দিয়ে কাঠগুলো কিনে নিলেন৷ এক বছর পর আবার আসবেন৷ আর আন্দ্রেয়াস পালার খুশি হয়ে আবার সঠিক গাছের খোঁজে বেরিয়ে পড়েন৷