ভালোবাসা দিবস
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১২ফুটতে শুরু করেছে শিমুল, পলাশ৷ থেকে থেকেই ডাকছে কোকিল৷ তার মানে ফাল্গুন আসছে, আসছে বসন্ত৷
বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বসন্ত চিরকালই প্রেমের বার্তা বাহক; হৃদয়ে জাগায় আকুলতা৷ বসন্তে বাঙালির এই আকুলতার সাথে হালে আবার যোগ হয়েছে ভালোবাসা দিবসের উৎসব৷
বাংলা পয়লা ফাল্গুন দিনটি ইংরেজি মাসের হিসেবে ১৩ ফেব্রুয়ারি৷ আর এর ঠিক পরের দিন, অর্থাৎ ১৪ ফেব্রুয়ারি হলো বিশ্ব ভালোবাসা দিবস৷ ভালোবাসা দিবস উদযাপনে দুনিয়া জুড়েই বাড়ছে তরুণদের আগ্রহ৷
প্রিয় মানুষটিকে ফুল দিয়ে, উপহার দিয়ে, তার সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়ে দিনটি রাঙিয়ে তুলছে তারা৷ কিন্তু এই দিবসটি পালনের বিরোধিতাও আজকাল করছে অনেকেই৷ যেমন বাংলাদেশের বাম রাজনৈতিক কিছু সংগঠন প্রচার করছে ভালোবাসা দিবস পালনের অসারতা৷
বাংলাদেশে যাঁরা ভালোবাসা দিবসের বিরোধিতা করছেন তাদের মতে, বাঙালি সংস্কৃতিতে ফেব্রুয়ারি মাসের রয়েছে বিশেষ গাম্ভীর্য৷ ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারি৷ আবার এই ১৪ ফেব্রুয়ারিই হলো বাংলাদেশের ‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস'৷ সুতরাং ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পালনের উপর গুরুত্ব না দিয়ে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক দিন, স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস পালনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তারা৷
সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক কারণে আড়ম্বরপূর্ণ ভালোবাসা দিবস উদযাপনের বিরোধিতা করা হচ্ছে বাংলাদেশে কিন্তু মালয়েশিয়াতে বিরোধিতা করা হচ্ছে ধর্মীয় কারণে৷ তাদের মতে, ভালোবাসা দিবস হলো খ্রিস্টানদের সংস্কৃতি৷ তাই, মুসলিমরা এটি পালন করতে পারবে না৷
মুসলিমদের জন্য ভালোবাসা দিবস পালনকে সে দেশে সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ২০০৫ সালে৷ তবে অমুসলিমরা এ দিবস পালন করলে সরকার তাতে বাধা দেয় না৷
কিন্তু মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক দল পার্টি ইসলাম সেমালয়েশিয়া, সম্প্রতি এর বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়েছে৷ তারা বলছে, ভালোবাসা দিবসে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে গণমাধ্যম৷ এতে করে মুসলিম যুবারাও আগ্রহী হচ্ছে দিবসটির প্রতি৷ ফলে তাদের চারিত্রিক সৌন্দর্য নাকি নষ্ট হচ্ছে৷ তাই, অমুসলিমদের মধ্যেও এ দিবস পালন বন্ধের জন্য সরকারি উদ্যোগ নেবার দাবি জানিয়েছে দলটির তরুণ নেতারা৷
ভালোবাসা দিবস বন্ধের সমর্থনকারীরা বলছেন, দিবস উদযাপনের নামে আসলে বাণিজ্যই চলে বেশি৷ এদিন খাবার দাবার আর ফুলের দাম হয় আকাশচুম্বী৷ তাছাড়া এই দিনটি পালনের নামে অবিবাহিত ছেলে-মেয়েরা পরষ্পর যে উশৃঙ্খলতা করে সেটি ইসলাম সমর্থন করে না৷ এটি নৈতিক অবক্ষয়৷
কিন্তু মালয়েশিয়ারই এক মুসলিম তরুণ আদনান বলছে, সরকার যতই নিষেধ করুক আসছে ১৪ ফেব্রুয়ারিতে ভালোবাসার মানুষটিকে ফুল উপহার দেবে সে৷ তাকে নিয়ে বাইরে খাবে এবং ঘুরবে এক সাথে৷
আদনানের মতোই মালয়েশিয়ার অন্য অনেক মুসলিম তরুণ বলছে, দিবসটি পালনের সাথে ইসলামের কোনো বিরোধ নেই৷ নিষেধ করাটা আসলে একধরণের কূপমন্ডুকতা৷ তাছাড়া বিশ্বায়নের এ যুগে ভালোবাসা দিবসকে জোর করে বন্ধ করা যাবে না বলেও মনে করেন তারা৷
প্রতিবেদন: আফরোজা সোমা
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারুক