ভারত-মিয়ানমার সম্পর্ক
২ অক্টোবর ২০০৭�
ভারত এই আহ্বানে সাড়া দিচ্ছে না৷ বলছে ভারতের পররাষ্ট্র বিষয়ক মৌলিক নীতি হচ্ছে কোন দেশের অভ্যন্তরীন ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা৷ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর মিয়ানমারের সামরিক জান্তার ওপর ভারতের প্রভাব বিস্তারের আহ্বান জানানো ছাড়াও তারা মিয়ানমারের সামরিক সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকারের প্রতি মিয়ানমারের সামরিক সরকার যেন সম্মান দেখায় বিশেষ করে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গৃহবন্দী করে রাখা মিয়ানমারের বিরোধী নেত্রী নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অং সান সু চি কে যেন মুক্তি দেয়৷ মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের ওপর মানবাধিকার সংস্থাগুলো ও আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় মিয়ানমার ও ভারতের সম্পর্ক জটিল হয়ে উঠেছে৷
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ভারত ও মিয়ানমারের অতীত ইতিহাস এক ধরনেরই৷ দুটি দেশই একই ভাগ্য বরণ করেছে৷ উভয় রাষ্ট্রই ব্রিটিশ উপনিবেশের অধীনে ছিল এবং দুটি দেশই ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৪৭ তথা ১৯৪৮ সালে৷ ঐতিহাসিকভাবেই শুধু নয় সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও দুটি দেশের মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে অনেক৷ বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার ঘটেছে মিয়ানমারে ভারত থেকেই৷ মিয়ানমারে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা হল বৌদ্ধ৷ ভারত অন্তত নৈতিকভাবে ১৯৯০ এর দশক পর্যন্ত তার প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে৷ তারপর নিরাপত্তা ও তেজঃশক্তির কথা চিন্তা করে ভারত তার ঐ নীতি-অবস্থানের পরিবর্তন করে- জানান বার্লিনে বিজ্ঞান ও রাজনীতি বিষয়ক ফাউন্ডেশন এর ক্রিস্টিয়ান ভাগনার৷ তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে তেজঃশক্তি সরবরাহকারী দেশ হিসেবে মিয়ানমার ভারতের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশে পরিণত হয়েছে৷ এ ক্ষেত্রে ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী হল চীন৷ ১৯৯০ এর দশক থেকেই চীন মিয়ানমারের সঙ্গে তার সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটিয়েছে ঐ দেশটির গ্যাস মজুদের কথা বিবেচনা করে৷ ভারতও বিগত কয়েক বছর ধরে একই ধরনের কৌশল গ্রহণের চেষ্টা করেছে কিন্তু চীনের মত এত সফল হতে পারে নি৷
মিয়ানমার হল ভারতের দ্বিতীয় বড় প্রতিবেশী৷ আর পূর্বাঞ্চলে তার সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী৷ মিয়ানমারের সাথে ভারত শুধু স্থলসীমান্তের সঙ্গেই যুক্ত নয় জলসীমান্তের সাথেও ৷ দুই হাজার তিন সালে মিয়ানমার এবং ভারতের মধ্যে সম্পর্কের বিশেষ উন্নতি ঘটে৷ সে সময় রাষ্ট্রীয় সফর বিনিময় হয় সাতবার এমনকি ভারতের উপরাষ্ট্রপতিও মিয়ানমার সফর করেন৷ দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমান ইতিমধ্যে একশো বিলিয়ন ডলারের অংক ছাড়িয়ে গেছে৷ ভারত মিয়ানমারকে তার অবকাঠামো গডে তুলতে সাহায্য করছে -প্রযুক্তিবিদ্যা দিয়ে সাহায্য করছে মিয়ানমারের তথ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে৷ উভয় দেশ পশ্চিমের তীব্র সমালোচনা সত্বেও অস্ত্র সরবরাহ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে৷ এ সব কারণেই ভারত মিয়ানমারের বর্তমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ওপর সামরিক জান্তার দমন সমালোচনা করছে না৷