1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারত-বাংলাদেশ উত্তেজনায় 'অপতথ্য'

৭ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ ও ভারতের চলমান উত্তেজনার মধ্যেই সোমবার ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরি। একদিনের এই সফর সংক্ষিপ্ত হলেও এই সময়ে এই সফরকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষকরা।

https://p.dw.com/p/4nsFo
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের খবর পত্রিকায় পড়ছেন একজন ভারতীয় পাঠক
৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন দলটির সভানেত্রী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছবি: Sudipta Das/NurPhoto/picture alliance

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশকে এখন কূটনীতির দিকেই জোর দিতে হবে। ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিসরির সফরে আলোচনার বিষয় সীমিত রাখতে হবে। অনেক বিষয় একসঙ্গে না এনে উত্তেজনার কারণে এই মুহূর্তে যেসব ক্ষতি হচ্ছে তা প্রশমনের চেষ্টা করতে হবে।

৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর তিনি ভারতের আশ্রয়েই আছেন। এটা নিয়েই বাংলাদেশ ভারতের প্রথম টানাপোড়ন শুরু হয়। আর সনাতনী জাগরণ মঞ্চের চিন্ময় দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তারের পর পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়। এরইমধ্যে বাংলাদেশিদের ভারতীয় ভিসা দেয়া প্রায় বন্ধ আছে। বাংলাদেশও ভিসা নিয়ন্ত্রিত করতে যাচ্ছে। ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও বাংলাদেশের পতাকা পোড়ানোর  পর দুই কূটনীতিককে ফেরত এনেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশিদের ভারতে চিকিৎসা, হোটেল ভাড়া না দেয়ার ব্যাপারেও কোনো কোনো এলাকায় সিদ্ধান্ত নেয়ার ঘটনা ঘটেছে।

স্থলপথে পণ্য আমদানিও বন্ধ আছে কোথাও কোথাও। আর মমতা ব্যানার্জির বাংলাদেশে শান্তি রক্ষী মোতায়েনের প্রস্তাব পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত করেছে।  এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেয়া হয়েছে। ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশেও নানা ধরনের প্রতিবাদ হচ্ছে।

বাংলাদেশ এখন যে বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় আছে তা হলো ভারতের কিছু সংবাদ মাধ্যমের "অপপ্রচার ও ফেক নিউজ”। বিশেষ করে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের যেসব খবর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রচার হচ্ছে তাকে অপপ্রচার বলছে বাংলাদেশ।

এখনকার পরিস্থিতি দেখলে এসবকে উদ্দেশ্যমূলক ও সংঘবদ্ধ মনে হয়: তানভীর মাহতাব আবীর

বাংলাদেশে ফ্যাক্ট চেকের বেসরকারি সংগঠন "রিউমার স্ক্যানার বাংলাদেশ” বলছে, "ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম বাংলাদেশ নিয়ে ভুয়া খবর ও গুজব ছড়িয়েছে। এমন ভুয়া খবর প্রচারের তালিকায় ভারতের অন্তত ৪৯টি গণমাধ্যমের নাম উঠে এসেছে।”

শুক্রবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ১২ আগস্ট থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব গণমাধ্যমে অন্তত ১৩টি ভুয়া খবর প্রচারিত হয়েছে।

রিউমার স্ক্যানারের সিনিয়র ফ্যাক্টচেকার তানভীর মাহতাব আবীর ডয়চে ভেলেকে বলেন," বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ার এই ধরনের ভুয়া বা অপতথ্য আমরা আগেও দেখেছি। তবে ৫ আগস্টের পর এটা বেড়ে গেছে। আর চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তারের পর এটা আরো বেড়েছে।”

তার কথা, "ভারতীয় একটি মিডিয়া গ্রুপের অধীনে অনেকগুলো সংবাদমাধ্যম থাকে। আবার সেগুলো বাংলা ও ইংরেজিসহ নানা ভাষায়। আর একটি মিডিয়া গ্রুপ কোনো খবর করলে অন্যরা আবার তা কপি করে। ফলে এই ডিজিটাল যুগে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এখনকার পরিস্থিতি দেখলে এসবকে উদ্দেশ্যমূলক ও সংঘবদ্ধ মনে হয়।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "ভারতীয় মিডিয়ার এইসব অপতথ্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলো দুই-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া তেমন কোনো ভূমিকা নিতে পারছেনা।”

ভারতীয় পরাষ্ট্র সচিবের ঢাকা সফরের গুরুত্ব

সোমবার ঢাকা এসে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরি মূল বৈঠকটি করবেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীমউদ্দিনের সঙ্গে। এই বৈঠকেই সাম্প্রতিক নানা বিষয় উঠে আসবে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও তার বৈঠকের কথা রয়েছে। জানাগেছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সাম্প্রতিক বিষয়গুলোতেই জোর দেয়া হবে। শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান, বাণিজ্যসহ এই সময়ে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো আলোচনায় আসবে। মূল টার্গেট থাকবে উত্তেজনা প্রশমন, নিরাপত্তা, অপতথ্য , বাণিজ্য।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, "আসলে এই সময়ে দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছু সংকট তৈরি হয়েছে। ভারতে চিকিৎসা, ভিসা, বাণিজ্য এসব নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এগুলোর ব্যাপারে নিশ্চয়ই দুই দেশ পরস্পরের কাছে তথ্য জানতে চাইবে। সমাধান খুঁজবে। ”

তার কথা, "এখন শুধু  দুই দেশের সরকারি পর্যায়েই নয়, নানা প্ল্যাটফর্ম সক্রিয় আছে। রাষ্ট্রীয় কূটনীতির বাইরেও আরো কূটনৈতিক তৎপরতা আছে। এই সময়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকা সফর অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেক কিছু ইঙ্গিতও দিচ্ছে।”

সরকারি পর্যায়ে প্রতিক্রিয়া সুচিন্তিত এবং কূটনৈতিক হতে হবে: অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ

"আসলে আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা আরো বাড়াতে হবে। ভারতে সরকারের বাইরে নন-স্টেট ফ্যাক্টর এই সময়ে বেশি সক্রিয় দেখা যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তাদের তৎপরতা কম। আমাদের সেটা খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের সরকারি পর্যায়ে প্রতিক্রিয়া সুচিন্তিত এবং কূটনৈতিক হতে হবে। সবাই নয়, যার কাজ তার কথা বলতে হবে,” বলেন তিনি।

আর সাবেক কূটনীতিক মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক বলেন, "এখন যা পরিস্থিতি সেই সময়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকা সফর অবশ্যই ইতিবাচক। আমরা মনে হয় দুই দেশেরই এখন ইচ্ছা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার।  সফর সংক্ষিপ্ত হলেও বরফ গলতে সহায়তা করবে।”

"আমি মনে করি এই সফরে অনেক ইস্যু সামনে না এসে জরুরি কয়েকটি ইস্যু নিয়ে কথা বলা। বরফ গলতে শুরু করলে তারপর বাকি বিষয়গুলো ধীরে ধীরে সামনে আনা যাবে। আমাদের এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে ব্যবসা-বাণিজ্য, ভিসা আর  ভারতে বাংলাদেশের কস্যুলেটগুলোর নিরাপত্তা। ভারতের কাছ থেকে এই প্রতিশ্রুতি আদায় করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে ভারত আমাদের প্রতিবেশি। শেখ হাসিনা চলে যাননি, প্রতিবেশি দেশেই আছেন,” বলেন তিনি।

তার কথা, "এখন বাংলাদেশ নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে যে অপপ্রচার হচ্ছে তা বন্ধে সেদেশের সরকারের সহায়তা নিতে হবে।

তবে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিতে হবে। তবে শুধু ভারত নয়, এইসব অপতথ্যের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশকে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে  হবে। আর সেটা করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা  যথেষ্ঠ নয়। বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোও কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না।”

কলকাতায় কমেছে বাংলাদেশি পর্যটক, ব্যবসায় মন্দা