ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বার্লিন সফর
১১ এপ্রিল ২০১৩বিরাট প্রত্যাশা নিয়ে বৃহস্পতিবার আন্তঃ সরকার পরামর্শ কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং এবং জার্মান চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ অ্যাজেন্ডায় আছে ভারত-ইউ অবাধ বাণিজ্য চুক্তি এফটিএ, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার এবং সন্ত্রাস৷ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দিতে সই হবে একাধিক সমঝোতা চুক্তি৷
ভারতে জার্মান বিনিয়োগ টানতে প্রধানমন্ত্রী জার্মানির শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে ব্যাখ্যা করবেন প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের লক্ষ্যে ভারত কীভাবে আর্থিক সংস্কারের পথে এগিয়ে চলেছে৷ ইউরো-জোনের প্রবৃদ্ধি এবং বিশ্ব অর্থনীতির স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে জার্মানির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রভাব পড়বে ভারতে৷
ইউরোপে জার্মানি ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার৷ ২০১১ সালে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক লেনদেন ১৮ শতাংশ বেড়ে হয় সাড়ে ১৮ বিলিয়ন ইউরো৷ জার্মান সহযোগিতায় ভারতে রয়েছে প্রায় ১,৬০০ প্রকল্প এবং যৌথ উদ্যোগে রয়েছে প্রায় ৬০০ সংস্থা৷ ২০১২ সালে বিশ্ব মন্দার কারণে তা অবশ্য কিছুটা নিম্নমুখী৷ পরিবেশ-বান্ধব নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১০০ কোটি ইউরোর এক ঋণ তহবিল খোলার প্রস্তাব উঠতে পারে৷ এছাড়া, দিল্লি-মুম্বই শিল্প করিডর নির্মাণে জার্মানি আগ্রহী হবে৷
সবথেকে কণ্টকিত ইস্যু ভারত ও ২৭টি ইউরোপীয় দেশের মধ্যে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি, যা নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে আলোচনা ২০০৭ সাল থেকে শুরু হলেও এখনও ঐকমত্য হয়নি৷ এফটিএ নিয়ে ইইউ আর অপেক্ষা করতে রাজি নয়৷ এ বছরে তা চূড়ান্ত করা না হলে ইইউ খুঁজে নেবে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিকল্প গন্তব্য ৷ সম্ভবত সেটা হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷
কেন এফটিএ চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না? কোথায় আটকাচ্ছে? বলা বাহুল্য, জাতীয় স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করে ভারতের পক্ষে সব দাবি মেনে নেয়া সম্ভব নয়৷ শিল্প, বাণিজ্য ও কৃষি মহল এফটিএ বিরোধী৷
প্রধান বাধা পণ্য শুল্ক এবং শুল্ক-বহির্ভূত মাশুল৷ ইইউ চাইছে, ভারত মোটর গাড়ি, ওষুধপত্র ও অ্যালকোহলিক পণ্যের আমদানি শুল্কের হার অর্ধেক কমিয়ে দিক৷ চাইছে পরিষেবা ও মেধাস্বত্বের সুবিধা দেয়া হোক৷ ইউরোপে গাড়ি বাজারের মন্দার কারণে ইইউ চাইছে ভারতে সম্পূর্ণ তৈরি গাড়ি রপ্তানি করতে৷ সে জন্য বর্তমানের আমদানি শুল্ক ৬০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করা হোক৷ সে জন্য মুখিয়ে আছে জার্মানির মার্সিডিজ, বিএমডাব্লিউ, পর্শের মত বিলাস-বহুল গাড়ি নির্মাতারা৷ ভারতে তা তৈরি না করে নিজের দেশে তৈরি করে ভারতে রপ্তানি করা অনেক বেশি লাভজনক হবে৷ গাড়ি শিল্প চাঙ্গা হবে৷ মোটকথা, অবাধ বাণিজ্য চুক্তিতে একটা ভারসাম্য এনে তা যাতে যত শীঘ্র সম্ভব চূড়ান্ত করা যায়, তার জন্য জার্মানির সাহায্য চাইবে ভারত৷