ভারতে ৫ কোটি মানসিক রোগী
৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬দিল্লির ঐতিহাসিক জামা মসজিদের সামনে দিয়ে আপনি মিনা বাজারের অলিগলিতে ঢুকলেন, অনেক দোকান, প্রচুর ভিড়, অলংকার থেকে প্রসাধন সামগ্রি বা পুতুল, জামাকাপড়, জুতোর সারি সারি দোকান৷ এই ব্যস্ত অলিগলি পেড়িয়ে উর্দু পার্ক, যেখানে হকাররা বসে৷ এই ব্যস্তততম জায়গায় দু'টি চেয়ার নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় একজন মনোচিকিৎসক ও একজন মনোবিজ্ঞানীকে৷ চেয়ার দু'টোর সামনে চোখে পড়ে দীর্ঘ লাইন৷
সপ্তাহে অন্তত দু'দিন তাঁরা উর্দু পার্কে আসেন৷ মানসিক রোগীদের সাহায্য করাই তাঁদের প্রধান উদ্দেশ্য৷ তবে শুধুমাত্র রোগীদের চিকিৎসাই করেন না তাঁরা, বিনামূল্যে ওষুধও দেন৷
এনজিও-টার নাম – আশ্রয় অধিকার অভিযান বা ‘ট্রিপল এ'৷ ১০ বছর আগে গৃহহীনদের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এই সাহায্য সংগঠন৷ কিন্তু আজ এদের পরিচিতি মানসিক রোগীদের সাহায্য করার জন্য৷ দিল্লিভিত্তিক এই বেসরকারি সংস্থাটি গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সড়কে ছোট ছোট ক্লিনিক স্থাপন করেছে৷
২০০৮ সাল থেকে এক হাজারেরও বেশি মানসিক রোগীকে সাহায্য করে আসছে সংস্থাটি৷ উর্দু পার্ক প্রকল্পে সেচ্ছাসেবীরা ইনস্টিটিউট অফ হিউম্যান বিহেভিয়ার অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্স বা আইএইচবিএএস-এর চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিয়ে কাজটি করছেন৷ ‘ট্রিপল এ'-এর উপ-পরিচালক সঞ্জয় কুমার ডয়চে ভেলেকে জানালেন, প্রথমে এই মানসিক রোগীদের জীবনমানের উন্নতি করার চেষ্টা করেন তাঁরা৷ তাঁদের সমস্যাগুলো নথিভুক্ত করেন, কী উপায়ে তাঁরা সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন বা পেরেছেন, সেটাও লেখা থাকে৷ এছাড়া এনজিও-টি খাবার, পোশাক, সাবান, আশ্রয় এবং ওষুধ দিয়ে থাকে এই সব মানসিক রোগীদের৷ প্রতি মাসে যার জন্য খরচ হয় অন্ততপক্ষে ২৫ হাজার রুপি৷
পরিবারের অবহেলা
ঋতিকা শর্মাকে এই ক্লিনিকে নিয়ে এসেছিল পুলিশ৷ আইএইচবিএএস-এর তত্ত্বাবধানে এক মাস চিকিৎসার পর তাঁকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু মূল সমস্যাটা হচ্ছে, এই রোগীদের পরিবার আর তাঁদের দায়িত্ব নিতে চায় না৷ ক্লিনিকে ভর্তি হওয়ার পর কারো ঠিকানা জানা গেলে অথবা যোগাযোগ করা হলে, তাঁদের সঙ্গে পরিবারের মানুষজন দেখা করতেও আসে না৷ ফলে এই রোগীদের পুরোপুরি সেরে ওঠাটা খুব কঠিন, জানালেন সঞ্জয়৷
তাঁর প্রশ্ন, ভারতের মতো এত বড় একটা দেশে মনোচিকিৎসক এবং মনোবিদের সংখ্যা এত কম কেন? স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক গবেষণায় দেখা যায়, মানসিক রোগীদের চিকিৎসার জন্য ভারতে যেখানে ৫৪ হাজার ৭৫০ জন মনোচিকিৎসক, মনোবিজ্ঞানী ও মনোচিকিৎসা কর্মী প্রয়োজন, সেখানে আছেন মাত্র ৭ হাজার৷
বন্ধু, আপনার মতামত লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷