1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে বিরোধী জোটে বিরোধ তুঙ্গে, ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন

৯ জানুয়ারি ২০২৫

ভারতে প্রধান বিরোধী ইন্ডিয়া ব্লকের মধ্যে বিরোধ ক্রমশ বাড়ছে। এভাবে চললে জোট তুলে দেয়ার পক্ষে ওমর আবদুল্লা।

https://p.dw.com/p/4oyNo
২০২৪ সালে বেঙ্গালুরুতে ইন্ডিয়া ব্লকের দলগুলির নেতাদের বৈঠক।
ইন্ডিয়া ব্লকের দলগুলি ইউনাইটেড তাকতে পারছে না, দলগুলির মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে। ছবি: Indian National Congress

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি-র নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মূলত কংগ্রেসের উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল ইন্ডিয়া ব্লক। সেই জোটে কংগ্রেসের নেতৃত্বে চলা ইউপিএ-র দলগুলি ছাড়াও সামিল হয়েছিল সমাজবাদী পার্টি, তৃণমূল, ওমর আবদুল্লার ন্যাশনাল কনফারেন্স, বাম দলগুলি। অন্ধ্রের ওয়াইএসআর কংগ্রেস, ওড়িশার বিজেডি ও তামিলনাড়ুর এআইএডিএমকে ছাড়া প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী দলই ইন্ডিয়া-তে ছিল।

এখন সেই জোটেই বিরোধ তীব্র হচ্ছে। সম্প্রতি দিল্লি নির্বাচনে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপ ও কংগ্রেসের মধ্যে জোট না হওয়ায় এবং সমাজবাদী পার্টি ও তৃণমূল আপ-কে সমর্থন করায় গোলমাল আরো বেড়েছে। আপ এবং কংগ্রেসও একে অপরের বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করছে।

এই পরিস্থিতি বিতর্ককে আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী এবং ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা।

ওমর যা বলেছেন

ওমর আবদুল্লা শ্রীনগরে বলেছেন, ''দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো যোগ নেই। আপ ও কংগ্রেস সেখানে ঠিক করুক, কীভাবে তারা সবচেয়ে ভালোভাবে বিজেপি-র মোকাবিলা করতে পারে।''

এমনকে প্রশ্ন করা হয়, ইন্ডিয়া ব্লককে কি লোকসভা নির্বাচনের জন্য গঠন করা হয়েছিল? ওমর তার জবাবে বলেন, ''আমার মনে হয়, এরকম কোনো সময়সীমা রাখা হয়নি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, ইন্ডিয়া ব্লকের কোনো বৈঠক হচ্ছে না। তাই এর নেতৃত্ব কে দেবে, কর্মসূচি কী হবে, তা টিকে থাকবে কি না, তা নিয়ে কোনো স্পষ্টতা নেই। যদি লোকসভা নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য রেখে এই ব্লক বানানো হয়ে তাকে, তাহলে তাহলে ওরা এটাকে গুটিয়ে ফেলুক।''

দিল্লির নির্বাচন নিয়ে

লোকসভা নির্বাচনে দিল্লিতে আপ ও কংগ্রেসের মধ্যে জোট হয়েছিল। আপ লড়েছিল চারটি আসনে, তিনটিতে কংগ্রেস। কিন্তু জোট সত্ত্বেও সবকটি আসনে তারা বিজেপি-র কাছে হেরে যায়। বিজেপি আবার সাতটির মধ্যে সাতটি আসনে জয় পায়।

তারপর এবার বিধানসভায় আপ ও কংগ্রেসের মধ্যে জোট হয়নি। তারপর দিল্লির কংগ্রেস প্রধান অজয় মাকেন কেজরিওয়ালের তীব্র সমালোচনা করেন। কেজরিওয়ালকে 'ফর্জিওয়াল' অভিহিত করে মাকেন বলেন, কেজরিওয়াল জাতীয়তাবিরোধী, কারণ, তিনি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, ৩৭০ ধারা বিলোপ, নাগরিকত্ব আইন সমর্থন করেছিলেন।

মাকেনের অভিযোগ ছিল, করোনার সময় জনগণের টাকা খরচ করে কেজরিওয়াল মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন সাজিয়েছেন।

এরপর আপ জানায়, তারা ইন্ডিয়টা ব্লক থেকে কংগ্রেসকে বহিষ্কার করার জন্য অন্য শরিকদের বলবেন।

এরপর সমাজবাদী ও তৃণমূল কংগরেস জানিয়েছে, দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে তারা আপকে সমর্থন করছে।

কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া

কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেছেন, ''মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় তো কংগ্রেসের জন্য কিছু করেনি। তিনি লোকসভা নির্বাচনের আগে ইন্ডিয়া ব্লকের সদস্য হয়েছেন। কিন্তু কোথাও তিনি ইন্ডিয়া ব্লককে ভোট দেয়ার কথা বলেননি।''

অধীর বলেছেন, ''তিনি ইন্ডিয়া ব্লককে ব্যবহার করেছিলেন ভোট সংগ্রহের জন্য। এটা তার একটা কৌশল ছিল। বিজেপি-বিরোধী যে বাতাবরণ, তৈরি হয়েছিল তার সুবিধা নিতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি যখন কংগ্রেসকে দুর্বল করার চেষ্টা করে, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কংগ্রেসকে দুর্বল করার কাজে নেমে পড়েন।''

অধীর জানিয়েছেন, ''আমি কেজরিওয়ালকে একটা পরামর্শ দিতে চাই। মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সমর্থন নিলে হিতে বিপরীত হবে। দিল্লির বাঙালি জানে, পশ্চিমবঙ্গে স্বৈরাচৈারী শাসন চলছে। পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা নিয়ে দিল্লির বাঙালিরা আমাদের কাছে তাদের মতামত জানায়। তাই মমতার সমর্থন নিয়ে দিল্লিতে বাঙালির ভোট পাওয়ার চেষ্টা করলে কেজরিওয়ালের ক্ষতি হবে।''

ইন্ডিয়া থেকে যাবে

প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা বলেছেন, ''ইন্ডিয়া ব্লকের দলগুলির মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ আছে, তাদের মতাদর্শগত বিরোধ আছে, তাদের মধ্যে স্বার্থের সংঘাত আছে। ইন্ডিয়া ব্লক তৈরি হয়েছিল বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদীর বিরোধ করার জন্য। নিজেদের মধ্যে লড়লেও ইন্ডিয়া ব্লকের দলগুলি সেই বিরোধ থেকে সরে আসতে পারবে না। কংগ্রেসকেও অস্বীকার করতে পারবে না। কারণ, কংগ্রেস সবচেয়ে বড় দল। তারা কংগ্রেসকে চাপে রাখার চেষ্টা করবে।''

শরদের বক্তব্য, ''লোকসভাতেও তো কংগ্রেস ও তৃণমূল আলাদা লড়েছিল, অথচ, দুজনেই ইন্ডিয়া জোটে ছিল। ফলে দিল্লিতে আলাদা লড়লেও কংগ্রেস ও আপেরও ইন্ডিয়া জোটে থাকতে অসুবিধা নেই।  তবে যেহেতু কিছু নেতার জাতীয় স্তরে উচ্চাকাঙ্খা আছে, বিভিন্ন দলের আলাদা রাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে, তাই এই বিরোধও চলবে। তাতে বিজেপি-র সুবিধা হবে কিনা সেটা অন্য প্রশ্ন।''

জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)