মুক্তিযোদ্ধাদের কবর
৮ আগস্ট ২০১৩বৈঠকে ভারতের সরকারি কর্মকর্তারা জানান, তাদের তরফ থেকে চারজন নোডাল অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে আগরতলা, কলকাতা, গুয়াহাটি এবং শিলং-এ৷ তারা বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলকে ঐ কাজে সাহায্য করবে৷ কারণ ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয় – এই চারটি রাজ্যেই মুক্তিযোদ্ধাদের কবর দেয়া হয়েছিল, জানান বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল সাজ্জাদ এ জাহির৷ তিনি জানান, ইতিমধ্যেই ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন ২৭টি স্থান চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে৷ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে দেয়া হয়েছে তালিকার চূড়ান্ত রিপোর্টও৷
স্মরণ করা যেতে পারে কিছুদিন আগে ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপচারিতায় লে. কর্নেল সাজ্জাদ এ জাহির জানিয়েছিলেন যে, ভারতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কবর অনুসন্ধানের কাজে প্রথম সাফল্য আসে ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে৷ ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা থেকে ৮৪ কিলোমিটার দূরে ধলাই জেলার সদরদপ্তর আম্বাসা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরত্বে হাতিমারাছড়ায় উদ্ধার করা হয় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ৷ সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় কবর থেকে তাঁর দেহাবশেষ উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকায়৷ পরে তা দাফন করা হয় মিরপুরে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থানে৷
পশ্চিম ত্রিপুরার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কিরণ গিট্টে বলেন, বাংলাদেশের দেয়া সম্ভাব্য স্থানগুলির তালিকার ভিত্তিতে স্থানীয় লোকজনদের সাহায্যে তা খুঁজে দেখা হবে৷ বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধাদের দুটি কবর চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে৷ একটি রামনগরে এবং অপরটি গোলচক্করে৷ বাংলাদেশ চাইলে শহিদদের দেহাবশেষ স্বদেশে নিয়ে যেতে পারবে প্রোটোকল মেনে তা না হলে বর্তমান স্থানেই কবরগুলির রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে৷
ব্রাক্ষণবাড়িয়ার জেলা কালেক্টর নূর মহম্মদ মজুমদার মনে করেন, শহিদদের দেহাবশেষ খুঁজে বের করা বেশ কঠিন৷ গত মাসে উনি ভারতে এসেছিলেন এই কাজে৷ তাঁর সঙ্গে একমত কিরণ গিট্টেও৷ কারণ, এর মধ্যে ৪০ বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে৷
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ২০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমানা৷ তার মধ্যে ত্রিপুরার সঙ্গে ৮৫৬ কিলোমিটার৷ এছাড়া, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরার এক বিশেষ স্থান আছে৷ ত্রিপুরা ছিল মুক্তিযুদ্ধের সদরদপ্তর৷ ১৬ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছিল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এই ছোট রাজ্যটি, যার নিজস্ব লোকসংখ্যা ১৫ লাখের মতো৷ মুক্তিযুদ্ধের সময় এক কোটিরও বেশি শরণার্থী এসেছিলেন ভারতের চারটি রাজ্যে৷ বাংলাদেশের হিসেব অনুযায়ী, প্রায় ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছেন নয় মাসের মুক্তি সংগ্রামে৷
বীরপ্রতীক সাজ্জাদ জাহিরের মতে, প্রায় চার হাজার বাংলাদেশি আছেন নিখোঁজের তালিকায়৷ ডয়চে ভেলের কাছে একান্ত স্মৃতিচারণায় উনি বলেছিলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের কবর খোঁজার পেছনে এক জাতীয় আবেগ কাজ করছে৷ অনেক তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের আকুতি ছিল যদি এই মহান যুদ্ধে তাঁরা শহিদ হন, তাহলে যেন তাঁদের দাফন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে৷ কারণ খানসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের মৃতদেহ দেখলেই, তা বিকৃত করে দিত৷ অসম্মান করত কবরস্থানের৷