ভারতে নারী ও শিশু নির্যাতন বেড়েছে
১০ জানুয়ারি ২০২০২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে ভারতে কিছু অপরাধের হার কমেছে ২০১৮-তে৷ তবে নারী নির্যাতন ও শ্লীলতাহানির সংখ্যা ছয় দশমিক চার শতাংশ বেড়েছে৷ শিশুদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের ঘটনাও এক দশমিক ছয় শতাংশ বেড়েছে৷
পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, ডাকাতি, পণ বা যৌতুকের জন্য হত্যা, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার ঘটনা কমেছে৷ দণ্ডবিধি অনুসারে স্বীকৃত অপরাধ সবমিলিয়ে কমেছে দশমিক এক শতাংশ৷ তা সত্ত্বেও ভারতে প্রতিদিন গড়ে ৮০টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা এবং ৯১ টি ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে৷
নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধে শীর্ষে রয়েছে দিল্লি৷ অন্য মহানগরের তুলনায় দিল্লিতে সব ধরনের অপরাধের সংখ্যা চারগুণ বেশি৷ ফলে দিল্লি এখনও দেশের অপরাধ-রাজধানী৷ তবে নারীদের বিরুদ্ধে অ্যাসিড হামলার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গে৷ এরপরই রয়েছে উত্তর প্রদেশ। ২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গে ৩৬টি ও উত্তর প্রদেশে ৩২টি অ্যাসিড হামলা হয়েছে৷ তবে সবমিলিয়ে মহানগরগুলির মধ্যে কলকাতাই সবথেকে নিরাপদ৷
নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ বাড়ার দায়টা সাধারণত পুলিশ ও প্রশাসনের ওপরে গিয়ে পড়ে৷ তবে পশ্চিমবঙ্গে নারী কমিশনের প্রধান লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ''নারীদের ক্ষেত্রে সচেতনতা বেড়েছে৷ তাঁরা পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ জানাচ্ছেন৷'' ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''এ জন্যই স্বাভাবিকভাবে অপরাধের হার বেশি দেখাচ্ছে৷ তবে গত কয়েক বছরে নৃশংসতা যে বেড়েছে তা অস্বীকার করা যায় না৷ খুন করে পুড়িয়ে দেওয়া যায়, তা এখন দেখতে পাচ্ছি৷ এটা আগে হত কিনা বলতে পারব না, সেরকম অভিযোগ সামনে আসেনি৷ এখন আসছে৷ ফলে নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধের ধরন ও নৃশংসতা দুইই বেড়েছে৷''
পশ্চিমবঙ্গের শিশুরক্ষাকমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চট্টোপাধ্যায়ও মনে করেন, শিশু নিগ্রহের ঘটনা আগের তুলনায় অনেক বেশি করে সামনে আসছে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''পুলিশ এখন শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ বন্ধ করার জন্য অনেক বেশি সক্রিয়৷ তারা ভালো কাজ করছে৷ নির্যাতন আগেও হত৷ কিন্তু পুলিশের কাছে কম অভিযোগ জানানো হত৷ এখন আগের থেকে অনেক বেশি অভিযোগ দায়ের করা হচ্ছে, বলে সংখ্যাটা বেশি মনে হচ্ছে৷''
ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর হিসাব থেকে আরেকটি উল্লেখযোগ্য তথ্য বেরিয়ে এসেছে৷ বেড়েছে দেশদ্রোহের ঘটনা৷ শিল্পক্ষেত্রে (ইন্ডাস্ট্রিয়াল) দাঙ্গার পরিমাণ বেড়েছে৷ ২০১৭ সালে যেখানে ৫১টি দেশদ্রোহের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছিল, সেখানে পরের বছর সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ৭০৷ শিল্প-দাঙ্গার সংখ্যা বেড়েছে ১৭৮টি৷ জল নিয়ে দাঙ্গার সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৩৮টি৷ কিন্তু কমেছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, কৃষি সংক্রান্ত দাঙ্গার সংখ্যা৷ বেড়েছে অন্য ধরনের দাঙ্গাহাঙ্গামার সংখ্যা৷ কমেছে কৃষক আত্মহত্যার সংখ্যাও৷
রিপোর্ট বলছে, বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের গ্রেফতার ও নথিভুক্তিকরণ নিয়ে মামলার সংখ্যা কমেছে৷ ২০১৮ সালে এই সংখ্যাটা ছিল ৯৯৯ টি৷ আগের বছর ছিল এক হাজার ২৮৫৷ তবে সরকারের খুশি হওয়ার একটাই জায়গা আছে, তা হল, বিভিন্ন অপরাধে শাস্তির পরিমাণ ৫০ শতাংশ বেড়েছে৷ ১৯৮৮ সালের পর এই প্রথম আবার তা এই জায়গায় পোঁছল৷ কিন্তু ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা ও হত্যার ক্ষেত্রে শাস্তির হার কম৷ ফলে চিত্রটা যথেষ্ট উদ্বেগজনক৷
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, টিওআই)