ভারতে ধর্ষণ হত্যা চলছে, চলছে প্রতিবাদ
২ ডিসেম্বর ২০১৯স্বাভাবিকভাবে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে৷ আলোড়ন দেখা দিয়েছে৷ সোমবার সংসদও এই ধর্ষণ নিয়ে উত্তাল হয়েছে৷
হায়দ্রাবাদের ধর্ষণ ও হত্যার রেশ কাটতে না কাটতোই দিল্লি, রাজস্থান, রাঁচি থেকেও একের পর এক ধর্ষণ ও হত্যার খবর এসেছে৷ ঘটনাগুলো আবার জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়েছে৷ ধর্ষণগুলির সঙ্গে এত বেশি নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতা জড়িয়ে আছে যে, তা আবার ২০১২ সালের নির্ভয়াকাণ্ডের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে৷ সেই সঙ্গে পুলিশের আচরণ নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়েছে৷
হায়দ্রাবাদের ঘটনা ঘটেছে গত বুধবার৷ সেখানে একজন মহিলা পশুচিকিৎসককে চারজন মিলে ধর্ষণ করে৷ তাঁর মুখে মদ ঢেলে দেওয়া হয়৷ তিনি যখন বিপন্ন অবস্থায় চিৎকার করছেন, তখন তাঁকে হত্যা করা হয়৷ তাঁর দেহ কম্বলে মুড়ে কয়েক কিলোমিটার দূরে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়৷ ধর্ষিতার বাড়ির লোকজন পুলিশের কাছে নালিশ জানানোর জন্য গভীর রাত পর্যন্ত ঘুরেছেন৷ এক থানা পাঠিয়ে দিয়েছে অন্য থানায়৷ এই ঘটনার দুদিন পরে আবার একই জায়গায় আরেক মহিলার পোড়া মৃতদেহ পাওয়া যায়৷
দিল্লিতে গত শুক্রবার রাতে পঞ্চান্ন বছরের এক মহিলাকে ধর্ষণ করে খুন করেছে তাঁরই চব্বিশ বছর বয়সি প্রতিবেশী৷ পরে পুলিশের কাছে ধর্ষক বলেছে, ওই নারী সেদিন তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিলেন৷ তারই প্রাতিশোধ নিতে ধর্ষণ ও হত্যা৷ রাজস্থানের টঙ্কে একটি ছয় বছরের মেয়েকে রবিবার রাতে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে৷ শনিবার তাকে অপহরণ করা হয়েছিল৷ রাঁচিতে গত শুক্রবার এক মহিলাকে ইঁট ভাটার কাছ থেকে ভর সন্ধ্যায় অপহরণ করা হয়৷ তারপর বারোজন মিলে তাঁকে ধর্ষণ করে৷
হায়দরাবাদ ও তার পরের ঘটনায় দেশজুড়ে রীতিমতো আলোড়ন দেখা দিয়েছে৷ সোমবার রাজ্যসভায় সাংসদ জয়া বচ্চন ক্রুব্ধ ও আবেগতাড়িত হয়ে বলেছেন, দোষীদের প্রকাশ্যে হত্যা করা উচিত৷ এআইএডিএমকে সাংসদ বিজিলা সত্যনাথ তো বলতে বলতে কেঁদে ফেলেছিলেন৷ কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা তুলে দিয়েছেন রাজ্যসভর বিরোধী নেতা গুলাম নবি আজাদ৷ তিনি বলেছেন, মহিলাদের যৌন নির্যাতম বন্ধ করার জন্য প্রচুর আইন করা হয়েছে. তারপরেও তো ঘটনা কমছে না৷ তাঁর প্রস্তাব, পুরো দেশকে এক হয়ে একেবারে শিকড় থেকে এই সমস্যা শেষ করতে হবে৷
রাজনীতিকরা তা-ও রেখেঢেকে কথা বলেন৷ নির্ভয়ার মায়ের মতো সরাসরি বলেন না৷ সাত বছর আগে দিল্লীতে ধর্ষণ ও নির্যাতনে মারা যাওয়া নির্ভয়ার মা বলেছেন, এই যে এত ধর্ষণ হচ্ছে, তার জন্য পুলিশ ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা দায়ী৷ নির্ভয়াকাণ্ডে দোষীদের এখনো ফাঁসি হয়নি৷ দোষীদের ফাঁসি হলে যে কেউ যা কিছু করতে পারবে না৷ আইন প্রচুর আছে৷ নিভর্য়ার পরও কড়া আইন হয়েছে৷ সেখানে ফাঁসির ব্যবস্থা করা হযেছে৷ তা সত্ত্বেও সাত বছর হয়ে গেল৷ দোষীদের ফাঁসি হলো না৷
সত্যি সত্যিই কড়া আইন সত্ত্বেও ঘটনা কমা দূরে থাক, বরং বাড়ছে৷ তা হলে উপায়? কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং কেও সংসদে সোমবার অসহায় লেগেছে৷ তিনি বলেছেন, স্পিকার ঠিক করুন কী করবেন৷ লোকসভায় সর্বসম্মতি হোক৷ লোকসভা যা বলবে, তা-ই সরকার করবে৷ আইন পরিবর্তনের দরকার হলে তাতেও সরকার পিছপা হবে না৷ সরকারও চায় এই সমস্যা মূল থেকে নিকেশ হোক৷
সরকারের চিন্তার আরেকটি কারণ আছে৷ সেটা হলো, দেশজুড়ে প্রতিবাদ শুরু হয়ে গিয়েছে৷ সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে মেয়েরা বিপন্ন বোধ করে প্রতিবাদে সামিল হচ্ছেন৷ দিল্লিতে রবিবার অনু বর্মা সংসদ ভবনের পাশে একাই বিক্ষোভে বসেছিলেন৷ নিজেই সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও আপলোড করে জানিয়েছিলেন, এই প্রথম তিনি অন্যের হয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন৷ বারবার আশঙ্কা প্রকাশ করছিলেন, তাঁর পরিবারের যেন কোনো হয়রানি না হয়৷ হায়দ্রাবাদের ঘটনা তাঁকে এতটাই আলোড়িত করেছে যে, তিনি ঘরে বসে থাকতে পারেননি৷ প্রতিবদে নেমেছেন৷ পুলিশ তাঁকে জোর করে তুলে থানায় নিয়ে এসে কয়েক ঘন্টা পরে ছেড়ে দেয়৷ হায়দ্রাবাদে নিয়মিত বিক্ষোভ চলছে৷ জনতার রাগ গিয়ে পড়েছে পুলিশের ওপর৷ থানা লক্ষ্য করে পাথরও ছোঁড়া হয়েছে৷ নির্ভয়ার পর ইন্ডিয়া গেট থেকে বিজয় চক পর্যন্ত পুরো এলাকা চলে গিয়েছিল বিক্ষোভকারীদের দখলে৷ এবার প্রতিবাদ সেই পর্যায়ে না পৌঁছালেও কলকাতাসহ দেশের অধিকাংশ শহরেই বিক্ষোভ হয়েছে৷
এই ধরনের ঘটনা ঘটলে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ হওয়া খুবই স্বাভাবিক৷ কিন্তু যে প্রশ্নের জবাব খুঁজছে সারা দেশ, তা হলো, কী করে এ ধরনের ঘটনা থামবে? কবে দেশের শহর ও গ্রাম মেয়েদের কাছে নিরাপদ হবে?
জিএইচ/এসিবি
গত বছর এপ্রিলের ছবিঘরটি দেখুন...