কংগ্রেস-বিজেপি কাজিয়া
৩১ অক্টোবর ২০১৩কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে সংস্কার করা সর্দার প্যাটেল স্মৃতিসৌধ ও সংগ্রহালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মোদী বলেন, গোটা ভারতবাসীর মনে চিরদিন একটা দুঃখবোধ থাকবে যে, সর্দার প্যাটেলের মতো দেশের যোগ্যতম ব্যক্তিকে স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী করা হয়নি৷ যদি করা হতো তাহলে ভারতের ভবিষ্যত পালটে যেত৷ সন্ত্রাসবাদ আর মাওবাদ দেশকে ক্ষতবিক্ষত করতে পারতো না৷ দেশের বিপথগামী যুব সম্প্রদায়কে মূলস্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হতে দিতেন না তিনি৷ নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটি সর্দার প্যাটেলের রাজনৈতিক বিচক্ষণতা এবং দুরদৃষ্টির প্রতি অবিচার করেছে৷ এমনকি সর্দার প্যাটেলের শেষকৃত্যেও উপস্থিত ছিলেন না নেহেরু৷
তবে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে ছবি ও তথ্যাদি দিয়ে তা খণ্ডন করা হয়৷ বলা হয় সর্দার প্যাটেলের শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন পন্ডিত নেহেরু৷ প্রধানমন্ত্রী ড. সিং বলেন, জওহরলাল নেহেরু এবং সর্দার প্যাটেলের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে মতের অমিল থাকলেও তারচেয়ে বেশি ইস্যুতে ছিল মতের মিল৷ সর্দার প্যাটেলের পরামর্শে গভীর আস্থা ছিল পন্ডিত নেহেরুর৷ উভয়েই ছিলেন ভারতের ঐক্য ও ধর্ম নিরপেক্ষতার প্রতি একনিষ্ঠ৷ তাঁদের মূল্যবোধ আজকের ভারতে তলানিতে এসে ঠেকেছে বলেন প্রধানমন্ত্রী৷
ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলা যেতে পারে, বিভক্ত ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার ছিলেন পন্ডিত নেহেরু এবং সর্দার প্যাটেল দুজনেই৷ উভয়েই ছিলেন আইনজীবী এবং মহাত্মা গান্ধীর ঘনিষ্ঠ৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত মহাত্মা গান্ধীর সুপারিশে প্রধানমন্ত্রী হন পন্ডিত নেহেরু৷ যদিও চরিত্রগত দিক থেকে একের অবস্থান অপরের বিপরীত মেরুতে৷ দুজনের জন্মগত পটভূমি ছিল ভিন্ন৷ নেহেরুর জন্ম উচ্চবিত্ত কাশ্মীরি ব্রাহ্মন পরিবারে৷ সর্দার প্যাটেলের জন্ম অতি মধ্যবিত্ত গুজরাটের কৃষিজীবী পরিবারে৷ নেহেরুর হাবভাব, চালচলনে একটা দেখনদারি ভাব ছিল৷ সর্দার প্যাটেলের মধ্যে ছিল অন্তর্মুখী গভীরতা৷
তাঁর রাজনৈতিক জীবনের হাতেখড়ি কৃষক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে৷ ব্রিটিশ সরকার জোর করে কৃষিজমি অধিগ্রহণ করলে সর্দার প্যাটেল কৃষিজীবীদের একজোট করে আন্দোলন চালিয়ে ব্রিটিশ সরকারকে জমি ফিরিযে দিতে বাধ্য করার পর তাঁকে ‘সর্দার' উপাধি দেয়া হয়৷ স্বাধীনতার পর ভারতের সামন্ত রাজারা এবং হায়দ্রাবাদের নিজাম ভারতভুক্তিতে আপত্তি জানালে প্যাটেল কড়া হাতে তা খারিজ করে বিনা রক্তপাতে তাঁদের ভারতে শামিল করেন এবং ভারতের সংহতি ও ঐক্য রক্ষা করেন৷ তাই তিনি ‘লৌহ পুরুষ' উপাধি পান৷ এরআগে দেশভাগ অনিবার্য জেনে তিনি নেহেরুকে পরামর্শ দেন দেশভাগ মেনে নিতে যাতে আরো রক্তপাত না হয়৷ মুসলিম লীগের এক বড় নেতা পাকিস্তানে যাবার আগে সেকথা স্বীকার করেছিলেন৷
সর্দার প্যাটেলের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সর্দার প্যাটেলের ১৩৮তম জন্মবার্ষিকীতে আগামী ৩১শে অক্টোবর নর্মদাসাগর বাঁধের ওপর বিশ্বের উচ্চতম প্রতিমূর্তির শিলান্যাস করবেন মোদী৷