ভারতের ভুটান নীতি
১৬ জুলাই ২০১৩স্থল-বেষ্টিত হিমালয় রাজ্য ভুটানের রাজা ২০০৮ সালে স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে গণতন্ত্রের পথ সুগম করার পর, এটা হলো ভুটানের দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচন৷ এবার জাতীয় সভার ৪৭টি আসনের মধ্যে ৩২টি আসন ছিনিয়ে নেয় বিরোধী দল পিডিপি৷ শাসক দল ডিপিটি পায় মাত্র ১৫টি আসন৷ আর কয়েকদিনের মধ্যেই হারভার্ট শিক্ষিত শেরিং টোবগে হতে চলেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী৷ নির্বাচনের আগে থেকেই তিনি ভারতের সঙ্গে চিরাচরিত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অপরিহার্যতার ওপর জোর দিয়ে এসেছেন৷ বলেছেন, ভারতের সঙ্গে ভুটানের সম্পর্ক গভীরতর করাই হবে তাঁর সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার৷
ইদানীংকালে বিদায়ী সরকার ডিপিটি-র চীন-ঘেঁষা নীতি দিল্লির উষ্মার কারণ হয়ে উঠছিল৷ ব্রাজিলে সম্প্রতি বিশ্ব পরিবেশ শীর্ষ সম্মেলনে ভুটানের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী জিগমে থিনলে সাক্ষাৎ করেন চীনা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে৷ ভুটানের ওপর চীনের প্রভাব ধীরে ধীরে বাড়ার লক্ষণ দিল্লির নজর এড়ায়নি৷
এ মাসের প্রথম দিকে ভুটানকে দেয়া জ্বালানি এবং কেরোসিন তেলের ওপর ভরতুকি তুলে নেয় ভারত৷ এতে বেশ অসুবিধায় পড়ে ভোটদাতারা৷ বলা বাহুল্য, এটাকেই তুরুপের তাস হিসেবে কাজে লাগায় বিরোধী দল পিডিপি৷ ভোটারদের বোঝায়, ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রাখা কতটা জরুরি৷ উল্লেখ্য, পিডিপি-র বিদেশনীতি রাজতন্ত্রের সমর্থনপুষ্ট৷
তাই পিডিপি-র জয়লাভের পর প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং ভুটানে গণতন্ত্র শক্তিশালী করার পাশাপাশি দেশটির সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভারতের সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দেন৷ ভরতুকি অব্যাহত থাকার কথাও বলেন তিনি৷ সেজন্য নতুন সরকার গড়ার পর ভারত-ভুটান বৈঠকের প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী৷ ভুলে গেলে চলবে না, ভুটানের সাড়ে সাত লাখ জনসংখ্যার ৩০ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছর৷ তাঁদের কর্মসংস্থান ভুটানের সামনে একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷ আর সেই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলাতেও এগিয়ে আসতে হবে ভারতকে৷
ঐতিহাসিক, অর্থনৈতিক, ভৌগোলিক এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকে ভুটানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত৷ ভুটানের সবথেকে বড় দাতা দেশ ভারত৷ উভয়দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মৌলিক কাঠামো দাঁড়িয়ে আছে ১৯৪৯ সালের মৈত্রী ও সহযোগিতা চুক্তির ওপর৷ ষাটের দশক থেকে সেই সম্পর্ক লালন করে এসেছে ভুটানের শাসকরা৷
এছাড়া, ভুটানের অর্থনৈতিক কাঠামোটা ভারতেরই সাহায্যপুষ্ট৷ ভুটানে অনেক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করেছে ভারত এবং সেই বিদ্যুৎ কিনেছেও ভারত৷ তার ওপর কয়েক হাজার ভুটানি ছাত্র-ছাত্রি পড়াশুনা করে ভারতে৷ ভারতের ওপর দীর্ঘদিনের সার্বিক নির্ভরতা ভারত-ভুটান সম্পর্কের বুনিয়াদ৷ তাই সেটাকে দুর্বল করা হবে দু'দেশের স্বার্থেরই পরিপন্থী৷