ট্রাম্পের জয় ভারতে কতটা কাঙ্খিত?
১০ নভেম্বর ২০১৬হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর শেষ পর্যন্ত হোয়াইট হাউসের মসনদে বসলেন রিপাবলিকান দলের ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ গোটা বিশ্বের সঙ্গে ভারতেও নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টের মূল্যায়ন এবং ভারতের ওপর তার প্রভাব নিয়ে হিসেব-নিকেশ শুরু হয়েছে৷ সকলেই বলছেন, প্রেসিডেন্ট পদে ট্রাম্পের নির্বাচন এই মূহূর্তে ভারতের পক্ষে ইতিবাচক হবে নাকি নেতিবাচক হবে, তা বলার সময় আসেনি৷ অর্থাৎ বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গতিপথ অপরিবর্তিত থাকবে বলেই মনে হয়৷ মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির একটা ছক আছে, সেটা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে না৷
বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক উদয়ন বন্দোপাধ্যায় ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনি ভাষণ থেকে কোনো সূত্র বের করা মুশকিল৷ কারণ তাঁর মতিগতি বোঝা দায়৷ ডেমোক্র্যাটিক দলের হিলারি ক্লিন্টনের দৃষ্টিভঙ্গি বা নীতি সম্পর্কে আমরা একটা ধারণা করতে পারি, কিন্তু ট্রাম্প কী করতে পারেন আর পারেন না – সে বিষয়ে পূর্ব-ধারণা করা এখনি সম্ভব নয়৷''
নির্বাচনি ভাষণে ট্রাম্প হিন্দু ভোট সুসংবদ্ধ করার কথা বলেছিলেন৷ হিন্দু বলতে তিনি স্বাভাবিকভাবেই ভারতকে বুঝিয়েছেন৷ পরমাণু সরঞ্জাম সরবরাহকারী দেশগোষ্ঠী বা এনএসজিতে ভারতের অন্তর্ভুক্তির জন্য ওবামা চেষ্টা করেছিলেন৷ কিন্তু জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশ চীনের বিরোধিতায় তা আটকে আছে৷ ট্রাম্পও এ বিষয়ে চীনকে রাজি করাতে প্রাণ ঢেলে দেবেন বলে মনে হয় না৷
বরং তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে ভারত ও চীনকে একই বন্ধনিতে রাখতে চাইবেন, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও অন্যান্য কারণে৷ তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান বাড়াতে ট্রাম্প ‘আউটসোর্সিং'-এর বিরোধী৷ অথচ ভারতীয় তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থাগুলি তো এর দৌলতেই দাঁড়িয়ে আছে? এ প্রশ্নের উত্তরে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী উদয়ন বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা নতুন কথা নয়৷ ওবামাও একসময় এ কথাই বলেছিলেন৷ কিন্তু মার্কিন কোম্পানিগুলি কম পয়সায় ভারতের দক্ষ তথ্য-প্রযুক্তি কর্মী হাতছাড়া করতে চাইবে না সহজে৷'' মোদ্দা কথা, ট্রাম্প আপাতদৃষ্টিতে ভারতবিদ্বেষী নন, এমনটাই মনে করেন তিনি৷
ওদিকে প্রবীণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. অমল মুখোপাধ্যায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনে দেখছেন অশনিসংকেত৷ এক সাক্ষাত্কারে ডয়চে ভেলেকে সোজাসাপটা ভাষায় তিনি বলেন, ‘‘ট্রাম্পের জয় উগ্র মার্কিন জাতীয়তাবাদেরই প্রমাণ, যা সাম্প্রতিককালের ইতিহাসে বেনজির৷ দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যা হওয়া উচিত ছিল, তা না হওয়ায় অভিবাসী এবং বহিরাগত নীতিতে পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী বলে আমি মনে করি৷ সবথেকে দুশ্চিন্তার কথা ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি যুদ্ধমুখী৷ অ্যামেরিকাকে বিশ্বের সামনে বড় করে তুলে ধরার চেষ্টা করতে পারেন তিনি৷
আর সেদিক থেকে তিনি হতে পারেন বিশ্বশান্তির পক্ষে বিপজ্জনক৷'' ডয়চে ভেলেকে এমনটাই বলেন ড. মুখোপাধ্যায়৷ তিনি জানান, এই মুহূর্তে শেষকথা বলা যায় না৷ তবে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে নিজের প্রতিষ্ঠা কায়েম রাখতে ট্রাম্প যতটা মরিয়া, তাতে আউটসোর্সিং এবং অভিবাসীদের ওপর কোপ পড়তে পারে৷ বলা বাহুল্য, এতে ভারতের স্বার্থ বিপন্ন হবে৷ আর তখন ভারত-মার্কিন সম্পর্ক পড়বে চাপের মুখে৷
বিষয়টি নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক অধ্যাপক অনিন্দ্য জ্যোতি মজুমদার৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘দেখুন ব্যক্তিবিশেষের জন্য জাতীয় নীতির কোনো গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না৷ কোনো ব্যক্তিবিশেষ ক্ষমতায় এলে রাজনৈতিক সমীকরণে খুব হেরফের হয় না৷ কারণ নির্বাচনে জেতা এক জিনিস আর দেশ চালানো অন্য জিনিস৷ নির্বাচনে সবাই কিছু বাগাড়ম্বর করেই থাকে৷ সেটা ধরা হয় না৷ তাই ট্রাম্পকে ইতিমধ্যেই বলতে শোনা গেছে যে, তিনি সব অ্যামেরিকাবাসীর প্রেসিডেন্ট৷ কোনো দল বা গোষ্ঠীর নয়৷ জাতীয় স্বার্থে ভারতের বাজার ধরে রাখা এবং বাণিজ্যিক বা কর্পোরেট স্বার্থ বজায় রাখা ট্রাম্পের পক্ষে জরুরি৷ আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রেক্ষিতে ভারত-মার্কিন সহযোগিতার পরিসর যেভাবে বিস্তীর্ণ হচ্ছে, সেই সুবাদে প্রথম কিছুদিন হয়ত একটা অনিশ্চয়তা থাকবে৷ তবে পরে সেটা কেটে যাবে এবং পুরানো সম্পর্ক ফিরে আসবে৷ এছাড়া আউটসোর্সিং সম্পর্কে নির্বাচনি প্রচারে ট্রাম্প যা বলেছিলেন, তা বাস্তবায়িত করা ট্রাম্পের পক্ষে কঠিন হবে কর্পোরেট মহলের চাপে৷ ডয়চে ভেলেকে এমনটাই বললেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক অধ্যাপক অনিন্দ্য মজুমদার৷