ভারতের আসন্ন নির্বাচন
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৩সাম্প্রদায়িক স্পর্শকাতর রাজ্য বলে চিরদিনই উত্তরপ্রদেশ, বিশেষ করে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের বদনাম আছে৷ প্রধানত তিন সম্প্রদায়ের বাস এখানে৷ উচ্চবর্ণ হিন্দু, দলিত ও মুসলিম৷ রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ১৮ শতাংশ মুসলিম ভোটব্যাংক শাসকদল সমাজবাদী পার্টির বলে মনে করা হয়৷ সাধারণ ছোটখাটো বিষয় নিয়েও সংঘর্ষ লেগেই আছে এদের মধ্যে৷ মেয়েদের টিটকারি থেকে শুরু করে গবাদি পশুচারণ, লাউডস্পিকার বাজানো, আবর্জনা ফেলা – কী নয়?
তার পরিণামে রাজ্যের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ ও সংখ্যালঘুদের মধ্যে বিভেদ তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে৷ গত দেড় বছরে অখিলেশ যাদব সরকারের আমলে এই ধরণের সংঘর্ষ ৩৫ ছাড়িয়ে গেছে৷ বলা বাহুল্য, ধর্মীয় এই বিভাজন রেখায় লাভ হয়েছে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি তথা সঙ্ঘপরিবারের৷ কথায় যাকে বলে, ‘ঘর পুড়ুক, খই খাই' অবস্থা৷
মুজফ্ফরপুরের সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের সূত্রপাত সেই রকম এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেটা নিয়ে এতবড় সংঘর্ষ হবার কথা নয়, যার পরিণামে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জেলায় এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে ৪০ জনের মতো৷ তার মধ্যে মুজফ্ফরপুরেই মারা গেছে ৩৪ জন৷ জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে বহু ঘরবাড়ি৷ বাড়ি ছাড়া বহু পরিবার৷ একটি হিন্দু মেয়েকে অশ্লীল টিটকারি দেয়াকে কেন্দ্র করে তিনজনের প্রাণহানি হয়৷ তার প্রতিবাদে সংশ্লিষ্ট গ্রামে ডাকা হয় মহাপঞ্চায়েত৷ ‘বউ-বেটি সম্মান' নামে এক জনসমাবেশে হিন্দু জাঠ সম্প্রদায়ের লক্ষাধিক মানুষ দূর দূর অঞ্চল থেকে যোগ দিতে যায়৷ জ্বালাময়ী ভাষণে উঠে আসে অপর সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ৷ তার অব্যবহিত পরেই ছড়িয়ে পড়ে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ অন্যান্য জায়গায়৷ তাতে ইন্ধন জোগায় ইন্টারনেটে দেয়া পুরানো কিছু ভুয়া ভিডিও ক্লিপিং৷
প্রশ্ন ওঠে, গোড়ার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং সহিংসতা দমনে শাসকদল সমাজবাদী পার্টির তরুণ মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের চরম ব্যর্থতা নিয়ে৷ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং মুসলিম সংগঠনগুলি মুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফা দাবি করে৷ এখন অবশ্য কিছুটা হলেও পরিস্থিতি উন্নতির দিকে৷ এর মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রায় ১৫০০ জনকে৷ ২০০০ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে৷ কয়েক ঘণ্টার জন্য শিথিল করা হয় কারফিউ৷ মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, এই গোষ্ঠী সংঘর্ষের পেছনে রাজনৈতিকদলগুলির হাত আছে৷
আসন্ন নির্বাচনি লড়াইয়ের জমি তৈরিতে সাম্প্রদায়িক ইস্যু জাগিয়ে তুলতে হিন্দুত্ববাদীদের তৎপরতার মোকাবিলা করতেও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ব্যর্থ৷ একদিকে তিনি এবং তাঁর দল যেমন সংখ্যালঘু-ভোট নিজের ঝুলিতে ধরে রাখতে চাইছেন, অন্যদিকে উত্তরপ্রদেশে নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত অমিত শাহ বিজেপির নির্বাচনি প্রচারের প্রধানের পদে অভিষেকের পর সঙ্ঘবদ্ধ হিন্দু ভোট নিজের দিকে টানতে ব্যস্ত৷
ফলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা এটাকে ভোট রাজনীতির ধর্মীয় মেরুকরণ বলে মনে করছেন৷ বলছেন, এটা তো আগুন নিয়ে খেলারই নামান্তর৷ অথচ এমনই পরিহাস, এই অখিলেশ যাদবই কিছুদিন আগে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার অভিযোগে ‘সাসপেন্ড' করেছিলেন এক উচ্চপদস্থ মহিলা প্রশাসনিক অফিসারকে৷