নভোযান নিয়ন্ত্রণ
৩ এপ্রিল ২০১২তাঁদের লক্ষ্য ভবিষ্যতে নভোযান পুরোপুরি কম্পিউটারের হাতে তুলে দেওয়া৷
প্রতিদিন আমরা কত যন্ত্র ব্যবহার করে থাকি৷ বাসায়, রাস্তায় এবং অফিসে এমনকি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা চলাকালেও৷ আর এইসব যন্ত্রের পেছনে নানা কম্পিউটার কাজ করে৷ হাতের ল্যাপটপ কিংবা অফিসের ডেস্কটপের বাইরেও কম্পিউটার আমাদের যেন ঘিরে রেখেছে৷ গাড়িতে উঠলেন, সেই গাড়ির ভেতরেই অন্তত আশিটি কম্পিউটার চিপ কাজ করছে৷ কিন্তু আপনি তা টেরই পাচ্ছেন না৷ আর ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে৷ কিন্তু সেগুলোও থেকে যাবে মানুষের চোখের আড়ালে৷ গাড়ির ভেতরে নিরাপত্তা আর বাসায় এত আরাম - এই সব কিছুই এখন নিয়ন্ত্রণ করছে কম্পিউটার৷ আর এই কম্পিউটার যত আমাদের চারপাশকে ঘিরে ধরছে, ততই এটি আমাদের চোখের আড়ালে চলে যাচ্ছে৷ তার কারণ কম্পিউটার চিপের আকার দিন দিন ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হচ্ছে৷ হচ্ছে আরও দ্রুততর৷ যেমন এই ব্যাপারে জার্মানির সেন্টার ফর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স'এর ভোল্ফগাং ভাল্শটার বললেন, ‘‘শতকরা আশিভাগ আবিষ্কারই এখন হচ্ছে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে, যা সম্ভব হচ্ছে কম্পিউটারের কারণে এবং বিশেষ করে ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে৷ মেডিক্যাল প্রযুক্তি এখন আর পদার্থবিদ্যার মাধ্যমে হচ্ছে না বরং সফটওয়্যারের সহায়তায় ইমেজ প্রসেসিং এবং ভিজুয়ালাইজেশনের মাধ্যমে হচ্ছে৷''
গত কয়েক বছর ধরে কম্পিউটার প্রসেসরগুলোর ব্যাপক উন্নতি হয়েছে৷ ডুয়েল কোর থেকে এখন মাল্টি কোর কম্পিউটারের ছড়াছড়ি৷ আর এর ফলে কম্পিউটারের কার্যক্ষমতার মাত্রাও যেন দিন দিন আকাশের দিকে ছুটেছে৷ বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টার ফলে আজ ক্ষুদ্র একটি চিপের ভেতরেই এক ডজন কম্পিউটার প্রসেসর সন্নিবেশন করা সম্ভব হয়েছে৷ তাই আজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচার কক্ষে নার্সের সংখ্যা কমছে আর যন্ত্রের সংখ্যা বাড়ছে৷ মোবাইল ফোন সহ তথ্য যোগাযোগ সংস্থাগুলো আজ মুহূর্তের মধ্যেই স্যাটেলাইটের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে৷ জার্মানির ফ্রাউনহফার ইন্সটিটিউট ফর কম্পিউটার আর্কিটেকচার অ্যান্ড সফটওয়্যার টেকনোলজি বা সংক্ষেপে ফার্স্ট এই ক্ষেত্রে বেশ মুন্সিয়ানা দেখিয়েছে৷ তাদের বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যেই এই ধরণের ক্ষুদ্র চিপের মডেল তৈরির মাধ্যমে কম্পিউটারের কার্যক্ষমতার ব্যাপক উন্নতিতে সক্ষম হয়েছে৷
তবে তারা এখানেই থেমে যেতে চান না৷ তাদের পরবর্তী লক্ষ্য এখন কম্পিউটারের মধ্যে বুদ্ধিমত্তার প্রবেশ ঘটানো, যাতে তারা মানুষের চেয়ে দক্ষভাবে যে কোন কাজ বুঝতে পারে এবং নিজে থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে৷ ফ্রাউনহফার ইন্সটিটিউট ফর কম্পিউটার আর্কিটেকচার অ্যান্ড সফটওয়্যার টেকনোলজি এজন্য নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে৷ তাদের লক্ষ্য হলো এমন কম্পিউটার তৈরি করা যা মানুষের মস্তিষ্ককে ছাড়িয়ে যাবে৷ তাদের লক্ষ্য মূলত স্যাটেলাইট কম্পিউটার তৈরি করা৷ ফলে ভবিষ্যতে চাঁদে কিংবা মঙ্গলগ্রহে অভিযান চালানোর জন্য আর পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসে থাকা মানুষের ওপর নির্ভর করতে হবে না৷ কম্পিউটারই চালক হিসেবে নভোযানের পুরো গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করবে৷ এমনকি নভোযানের মধ্যে থাকা কম্পিউটারই যানটিকে ভিনগ্রহে অবতরণ করাবে৷ সেই মানের কম্পিউটার তৈরির জন্য এখন দিনরাত মাথা ঘামাচ্ছেন ফার্স্ট'এর ১৪০ জন গবেষক৷
প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ