1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ব্রেক্সিট: নতুন সময়ের জন্য প্রস্তুত ক্লান্ত ব্রিটেন

১৪ ডিসেম্বর ২০২০

ব্রেক্সিটের পর যুক্তরাজ্যের চেহারা কী হবে, তা কেউ জানে না। তা সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যের মানুষ আর ব্রেক্সিট নিয়ে ভাবতে চান না।

https://p.dw.com/p/3mfh4
বার্মংহামের করোনা প্রতিষেধকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ।ছবি: Chris Middleton

গত সপ্তাহের কথা। যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বার্মিংহামের নিউ স্ট্রিটের দোকানগুলো তখন খোলা। করোনার জন্য দ্বিতীয় লকডাউন সবে উঠেছে। তবে এখনো যথেষ্ট কড়াকড়ি আছে।

মানুষজন দোকানের সামনে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে। সেই সময় সেখানে প্রচুর বিক্ষোভকারী এলেন। আর কয়েকদিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে ইইউ-র সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক কী হবে। তিন সপ্তাহের মধ্যে পরিবর্তনের সময়সীমা শেষ হবে। স্বাভাবিক সময় হলে ব্রেক্সিটের বিষয়টিই সকলের মনে থাকত। কিন্তু ২০২০-র ছবিটা আলাদা। এই প্রতিবাদ ছিল করোনা প্রতিষেধকের বিরুদ্ধে। 

বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ক্রিস ফেদারস্টোন মনে করেন, ব্রেক্সিট নিয়ে মানুষ ক্লান্ত এবং তাঁদের মনে ভয়ও আছে। তাই মানুষ আর ব্রেক্সিট নিয়ে কথা বলছেন না। তিনি জানিয়েছেন, ''ব্রেক্সিট নিয়ে মানুষের মুখে একটাই কথা শুনতে পাই। তা হলো, আমরা চাই, এটা শেষ হোক। হয়ত তাঁরা থাকবেন, অথবা তাঁদের চলে যেতে হবে। কিন্তু তাঁরা চাইছেন, বিষয়টি এ বার শেষ হোক।  কোভিড ১৯ নিয়ে আমরা এত খারাপ খবর পেয়েছি যে আমাদের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে।''

ব্রেক্সিট যে রূপই নিক না কেন, যাঁরা এর পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন, তাঁরাও এখন মনে করছেন, সামনের পথ মসৃন নয়।

UK Birmingham und der Brexit
যুক্তরাজ্যে মানুষের নজর এখন করোনার দিকে। ছবি: Marianna Karakoulaki/DW

অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রিতে ম্যানেজারের কাজ করেন কিথ রাওল্যান্ড। তিনি বলেছেন, ''আমি যদি ব্যবসার দিক থেকে দেখি, তা হলে এটা রীতিমতো খারাপ। তা সত্ত্বেও আমি বলছি, যে সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি, তা নিয়ে হাহুতাশ করার অর্থ হয় না। যা হবে, তার সঙ্গে আমাদের খাপ খাইয়ে নিতে হবে।''

আঞ্চলিক পার্থক্য

ব্রেক্সিটের ফলে দেশের অর্থনীতিতে বদল অনিবার্য। তাও মানুষের মনে এখন আর ব্রেক্সিট নেই। ২০১৬-র গণভোটের আগে যেমন মানুষ ব্রেক্সিট-ময় ছিলেন, চার বছর পর তার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। তবে কে কোথায় আছেন, সেই বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।

বার্মিংহাম, যেখানে বসে কিথ ওই কথাগুলো বলছিলেন, তার চেহারা দেখে যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বলে মনে হচ্ছিল না। রাস্তাঘাট ফাঁকা। ছোট দোকান অধিকাংশই বন্ধ। বড় দোকানগুলি চালাতে মালিকরা হিমশিম খাচ্ছেন। বেকারের সংখ্যা লাফিয়ে বেড়েছে। বার্মিংহামে নো ডিল ব্রেক্সিট হলে তার প্রতিক্রিয়া সরাসরি অতটা পড়বে না। কারণ, বার্মিংহাম ইউরোপের সীমান্ত থেকে অনেক দূরের শহর।

ইংল্যান্ডের পূর্ব তটভূমির ইপসউইচের স্থানীয় কাউন্সিলের ডেপুটি লিডার ব্রায়োনি রাডকিন যে ছবিটা তুলে ধরলেন তা খুব একটা সুখের নয়।  তিনি থাকেন যুক্তরাজ্যের সব চেয়ে বড় কনটেনার পোর্ট  ফিলিক্সস্টো-তে। সেখানে বন্দর কর্তৃপক্ষ জাহাজে পিপিই ভর্তি কন্টেনার তুলতে পারছেন না।  ইপসউইচের ডকে সেই কন্টেনার পড়ে আছে।

রাডকিন জানিয়েছেন, ''মানুষ বলছেন, ব্রেক্সিট হলে তাঁদের অবস্থা ভালো হবে না। তাই যুক্তরাজ্যের কোন এলাকায় আপনি আছেন, তার উপর ব্রেক্সিট নিয়ে মতামত কী হবে তা নির্ভর করছে। এখানে জমে থাকা কন্টেনার দেখে আপনি বুঝতে পারছেন, এখানে অবস্থা কতটা অগোছাল হতে পারে।'' তাঁর মতে, কিছু মানুষ  ব্রেক্সিট নিয়ে তাঁদের মতবদল করেছেন। হোয়াট ইউকে থিংকস বলে একটা প্রকল্প চলছে। সেখানে ৮৭টি সমীক্ষার ফলাফল একত্রিত করে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাজ্যের মানুষ এখন ইইউ-র সঙ্গে থাকার পক্ষে। তবে ডিডাব্লিউ যাঁদের সঙ্গে কথা বলেছে, তাঁরা মত বদলাননি।

England Kampagne - Time is running out
ব্রেক্সিট যে ভাবেই হোক না কেন, ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত অধিকাংশ মানুষ। ছবি: Dinendra Haria/London News Pictures via ZUMA Wire/picture-alliance

উত্তর ব্রিটেনের গবেষক জেমস ইইউর থেকে বেরিয়ে আসার পক্ষে। তবে তিনি মনে করেন, মাছ ধরা নিয়ে বরিস জনসন আরেকটু নরম হতেই পারতেন। তবে আইন, প্রশাসন ও অন্য বিষয়ে তাঁর কড়া থাকা উচিত। না হলে দেশের সার্বভৌমত্ব নষ্ট হবে।

ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে অ-সুরক্ষার ভাবনা

অধিকাংশ মানুষের মতে, ব্রেক্সিট সমাজে বিভাজন তৈরি করেছে। যা ঠিক হতে অনেকদিন সময় লাগবে। যাঁরা ইইউ থেকে এসেছেন এবং যুক্তরাজ্যে ঘর বেঁধেছেন, তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। তাঁদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষা কতটা থাকবে, তা তাঁরা বুঝতে পারছেন না।

বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্প্যানিশ-জার্মান গবেষক পলা সুইজার গত পাঁচ বছর ধরে যুক্তরাজ্যে আছেন। তাঁর মতে, ব্রেক্সিট একটা ভয় তৈরি করেছে। তিনি তাই যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছেন। সরকার মানসিক নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ তৈরি করেছিল।

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ শার্লেট গ্যালপিনের দাবি, ক্ষতি জানুয়ারিতেই হয়ে গিয়েছে।  নো ডিল ব্রেক্সিট ক্ষতিকর। ব্রিটিশ নাগরিকরা আর ইইউর নাগরিক থাকবেন না। আর ইইউর নাগরিকরাও ব্রিটেনের ভিতরে আর ইইউ-র নাগরিক থাকবেন না।

আবার সেই বিক্ষোভে ফিরি। বার্মিংহামে প্রতিষেধক বিরোধী লিফলেট, ট্রাম্প ও মার্কিন পতাকা সহ প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বিক্ষোভকারীরা। ব্রিটেনের অনেক মানুষই ব্রেক্সিট-এর বিষয়টিকে পিছনে ফেলে এভাবেই এগিয়ে গেছেন।

''মানুষজনের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে''

ম্যারিয়ানা কারাকৌলাকি/জিএইচ