ব্রেক্সিট নিয়ে অনিশ্চয়তা
২২ নভেম্বর ২০১৮ব্রেক্সিট চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য আগামী রবিবার ব্রিটেন ও ইইউ দেশগুলির শীর্ষ নেতারা ব্রাসেলসে মিলিত হচ্ছেন৷ তবে চুক্তির খসড়া নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনো দূর হয়নি৷ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে বুধবার ব্রাসেলস সফর করে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লোদ ইয়ুংকারের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন৷ ব্রিটেনে তাঁর বিরোধীদের শান্ত করতে মে কয়েকটি প্রশ্নে ইইউ কমিশনের আশ্বাস আদায় করতে চেয়েছেন৷ তাঁর মতে, কিছু বকেয়া বিষয়ের নিষ্পত্তির প্রয়োজন রয়েছে৷ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী আবার শনিবার ব্রাসেলসে ফিরে গোটা প্রক্রিয়া শেষ করতে চান৷ ইউরোপীয় কমিশনের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, বুধবারের আলোচনায় যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে৷
টেরেসা মে ঘরে-বাইরে প্রবল চাপের মুখে রয়েছেন৷ ব্রিটেনে কট্টর ব্রেক্সিটপন্থি ও ব্রেক্সিটবিরোধীরা প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট চুক্তির খসড়া নিয়ে মোটেই সন্তুষ্ট নন৷ অন্যদিকে ইইউ নেতাদের ধৈর্যের সীমাও প্রায় ভাঙতে বসেছে৷ ব্রাসেলেসের এক কূটনৈতিক সূত্র অনুযায়ী, ব্রিটিশ প্রতিনিধিদলকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, রবিবারের শীর্ষ সম্মেলনে আলোচনার আর কোনো অবকাশ নেই৷ খসড়া চূড়ান্ত হলে শীর্ষ নেতারা শুধু চুক্তি স্বাক্ষর করবেন৷ চুক্তি প্রস্তুত না হলে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ব্রাসেলসে যেতে চান না৷
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চুক্তির খসড়া নিয়ে স্পেনের আপত্তি নিয়েও চিন্তিত৷ জিব্রল্টারের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য সমাধানসূত্র না পেলে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেস চুক্তি স্বাক্ষর করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন৷ বুধবার রাতে মে স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন৷ তিনি জানান, ব্রিটেন, স্পেন ও জিব্রল্টারের সরকার পক্ষের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে৷ উল্লেখ্য, আগামী ২রা ডিসেম্বর স্পেনের দক্ষিণে আন্দালুসিয়া রাজ্যে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ সেই প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক কারণে প্রধানমন্ত্রী সানচেস জিব্রল্টার বিষয়ে ভোটারদের মন জয় করতে চান বলে অনেক মহল মনে করছে৷ ব্রেক্সিট চুক্তি কার্যকর করতে সব সদস্য দেশের সম্মতির প্রয়োজন না থাকলেও ইইউ এই প্রশ্নে সম্পূর্ণ ঐক্য দেখতে চায়৷
শেষ পর্যন্ত ব্রেক্সিট চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও ব্রিটেনের সংসদে সেটি অনুমোদনের নিশ্চয়তা এখনো পাওয়া যাচ্ছে না৷ ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড বুধবার সব পক্ষকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সংসদ এই চুক্তি অনুমোদন না করলে ব্রিটিশ অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে অথবা গোটা ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া বানচাল হতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে ব্রিটেন ইইউ-র সদস্য থেকে যাবে৷ তার চেয়ে অরাজকতা এড়িয়ে মসৃণভাবে ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়াই বাঞ্ছনীয়, বলেন হ্যামন্ড৷
ইইউ ও ব্রিটেনের মধ্যে প্রায় ৬০০ পৃষ্ঠার চুক্তির খসড়ার পাশাপাশি দুই পক্ষের মধ্যে ভবিষ্যৎ সম্পর্কের বিষয়ে প্রায় ২০ পৃষ্ঠার আরেকটি বোঝাপড়া প্রস্তুত করা হয়েছে৷ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত চুক্তি সব পক্ষকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে৷ তারপর ভবিষ্যৎ সম্পর্ক সংক্রান্ত বোঝাপড়া কার্যকর করা যেতে পারে৷ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এই বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে সাফল্য তুলে ধরে ব্রিটেনে বিরোধীদের মন জয় করতে চান৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, ডিপিএ)