1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘...বিষ খাইয়ে মারবেন না'

২৬ জুন ২০১৪

ফল, শাক-সবজি, মাছ-মাংস – বলতে গেলে প্রায় সব খাদ্যদ্রব্যেই এখন ফরমালিন থাকে৷ এ বিষয়টি নিয়েই লিখেছেন দু'জন ব্লগার৷ তাঁদের একজন ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুরোধ রেখেছেন, ‘‘আমাদের আর বিষ খাইয়ে মারবেন না৷''

https://p.dw.com/p/1CQd7
ছবি: NOAH SEELAM/AFP/Getty Images

আমার ব্লগে মাহবুবুল আলমের লেখার শিরোনামই, ‘‘ব্যবসায়ী বন্ধুগণ, আমাদের আর বিষ খাইয়ে মারবেন না৷''

তাঁর মতে, ‘‘ব্যবসায়ীরা আমাদেরকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলার প্রতিযোগিতায় নেমেছে৷ আমরা যারা বয়স্ক তাদের কথা না হয় এ কারণে বাদ দিলাম যে, আমরা আর কয়দিনই বা বাঁচবো৷ কিন্তু আমাদের বর্তমান ও আগামী প্রজন্মকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্যে এক অসুস্থ মৃত্যুর খেলায় মেতে উঠেছে আমাদের দেশের অসাধু ব্যবসায়ীরা৷ এ অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে বাংলাদেশের নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা নেই৷ তারা অতি মুনাফার লোভে প্রতিদিন প্রায় সব ধরণের খাদ্যদ্রব্যই বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য (যা বিষ মেশানোরই নামান্তর) মিশিয়ে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তাকে বিপন্ন করে তুলছে৷ তাই সারা দেশের মানুষই আজ আতঙ্কিত ও বিপদগ্রস্ত৷ বেশি বিপদগ্রস্ত আমাদের সোনামনিরা৷ বাজারে গেলে এমন কোনো খাদ্যদ্রব্য খুঁজে পাওয়া যাবে না যাতে কোনো না কোনো বিষাক্ত রাসায়নিক প্রদার্থ বা কীটনাশক মেশানো নেই৷ তাই বাংলাদেশের মানুষের এখন সব থেকে বড় আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে অনিরাপদ খাদ্য৷ সামান্য বেশি মুনাফার লোভে আমাদের দেশের অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত খাদ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে ধীরে ধীরে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷''

মাহবুবুল আলম পরিস্থিতির ভয়াবহতার চিত্র ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে লিখেছেন, ‘‘সম্প্রতি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত খাদ্য নিরাপত্তা গবেষণাগারে রাজধানীর ৮২টি খাদ্যের নমুনা পরীক্ষা করে সবগুলোতেই ক্ষতিকর উপাদান পেয়েছে৷বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে যে, ওই পরীক্ষায় ৪০ শতাংশ খাদ্যেই মানবদেহের জন্য সহনীয় মাত্রার চেয়ে তিন থেকে ২০ গুণ বেশি বিষাক্ত উপাদান ছিল৷ বলা হচ্ছে, ৩৫ শতাংশ ফল ও ৫০ শতাংশ শাক-সবজির নমুনাতে বিষাক্ত বিভিন্ন কীটনাশকের উপস্থিতি খুঁজে পাওয়া গেছে৷ এছাড়া আম ও মাছের ৬৬টি নমুনায় পাওয়া গেছে ফরমালিন৷ মুরগির মাংস ও মাছে পাওয়া গেছে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিকের অস্তিত্ব৷ চালের ১৩টি নমুনায় মিলেছে মাত্রাতিরিক্ত বিষক্রিয়া সম্পন্ন আর্সেনিক, পাঁচটি নমুনায় পাওয়া গেছে ক্যাডমিয়াম৷ লবণেও সহনীয় মাত্রার চেয়ে ২০-৫০ গুণ বেশি সিসা রয়েছে৷ হলুদের গুঁড়ার ৩০টি নমুনায় ছিল সিসা ও অন্যান্য ধাতু৷''

Indien - Mangoverkäufer in Lucknow
‘ব্যবসায়ীরা আমাদেরকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলার প্রতিযোগিতায় নেমেছে’ছবি: DW/A. Chatterjee

এমন বর্ণনার পর আমার ব্লগের এই ব্লগার লিখেছেন, অনেক চেষ্টার পরও অবস্থার উন্নতি হয়নি, কারণ, ‘‘চোরায় না শোনে ধর্মের কাহিনি৷'' অসাধু এবং অর্থলোভী ব্যবসায়ীরা তাই, ‘‘চাল, মাছ, সবজি, মসলা এবং ফলমূলে ব্যাপকভাবে বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়েই যাচ্ছে৷ উৎপাদন থেকে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত প্রত্যেকটি পর্যায়ে বিষ মিশিয়ে আমাদের নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে৷...ব্যবসায়ীদের লোভ এখন এতটাই চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তারা চায় শুধু বেশি বেশি লাভ৷ এতে দেশের মানুষ বাঁচলো নাকি মরলো, সেদিকে তারা ফিরেও তাকাতে চায় না৷ তাদের বিবেকবুদ্ধি যেন আজ মাথা থেকে হাঁটুতে গিয়ে ঠেকেছে৷''

তারপরও আশা নিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রতি আকুতি জানিয়েছেন মাহবুবুল আলম৷ লিখেছেন, ‘‘খাদ্যদ্রব্যে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মেশানোর মারণখেলা বাদ দিন৷ মনে রাখবেন চোখ বন্ধ করে রাখলেই প্রলয় বন্ধ হবে না৷ এ খেলায় শুধু সাধারণ মানুষই মরবে না, মরবে আপনাদের পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্ততিরাও৷ বিশেষভাবে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের কাছে অনুরোধ, আপনারা উদ্যোগী হন৷ অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন৷ তাঁদেরকে বলুন, এভাবে খাদ্যদ্রব্যে বিষ মিশিয়ে যেন আমাদেরকে আর মেরে না ফেলে৷''

সামহয়্যারইন ব্লগে মঞ্জুর চৌধুরীও লিখেছেন একই বিষয়ে৷ শিরোনাম, ‘‘ফরমালিন ও নেতাদের চামচামি৷''

এটা সম্ভবত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই লেখা৷ মঞ্জুর লিখেছেন, ‘‘আমার এক বন্ধু একদিন বাজারে গিয়ে একটা রুই মাছ কিনলো৷ বিশাল সাইজের রুই৷ কানকোটাও টকটকে লাল৷ আমার বন্ধু আবার মাছের খুবই ভক্ত৷ এত তাজা এবং বড় মাছ দেখে বেচারা আর লোভ সামলাতে পারলো না৷ কিনে ফেলল৷ দাম একটু বেশি নিল, কিন্তু তাতে সে কিছু মনে করলো না৷ মাছওয়ালা বলেছিল মাছটা কেটেকুটে দিবে কিনা৷ সে আর মাছ কাটালো না৷ সে তার বউকে মাছটা দেখাতে চায়৷ এত বড় মাছ দেখাতেও আনন্দ৷ বাসায় ফিরতে ফিরতে দেশের বাড়ি থেকে ফোন এলো যে তার বাবা ভীষণ অসুস্থ হয়ে গেছেন৷ সে যেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়িতে ফিরে আসে৷ বন্ধু বুঝতে পারলো, খবর ভালো না, কারণ, সাধারণত কোনো নিকটাত্মীয়ের ‘ভীষণ অসুস্থতার' খবর মানে হচ্ছে মৃত্যুসংবাদ৷ আপনজনদের টেলিফোনে সরাসরি মৃত্যুসংবাদ না দেয়াটা হচ্ছে বাঙালি সংস্কৃতি৷ বন্ধু ফ্ল্যাটে আসার আগেই তার বউকে ফোন করে বলল, ব্যাগ গুছিয়ে প্রস্তুত থাকতে৷ তারা এখনই বেরিয়ে যাবে৷ বাসে করে দেশের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হবার পরে বন্ধুপত্নীর খেয়াল হলো বিশাল সাইজের রুইটা ফ্রিজে ঢোকানো হয়নি৷ বাইরেই রেখে চলে এসেছে৷ বন্ধু বেচারা তখন পিতৃশোকে বিহ্বল, মাছ নিয়ে তাকে তেমন চিন্তিত মনে হলো না৷ বাবার জানাজা, কবর, মিলাদ এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সেরে ঢাকায় ফিরে আসতে তাদের দশ দিন লেগে গেল৷ বন্ধু বেচারা তখন সদ্য বাবাকে হারানোর যন্ত্রণায় ভাঙা বুক সারাতে ব্যস্ত৷ মাছের কথা তারা ভুলেই গিয়েছিল৷ ফ্ল্যাটের দরজা খুলে রান্না ঘরে এসে তারা দু'জনই অবাক৷ মাছটা ঠিক তেমনই রয়ে গেছে৷ একদম অবিকৃত, টাটকা৷''

Bangladesch Litschies Ernte
‘ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের কাছে অনুরোধ, আপনারা উদ্যোগী হন, অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন’ছবি: DW/M. Mamun

দশদিন পর স্বাভাবিক অবস্থায় মাছ পচে যাওয়ার কথা৷ কিন্তু মঞ্জুরের বন্ধুর মাছ অবিকৃত ছিল৷ তার মানে মাছে ফরমালিন দেয়া হয়েছে৷ খাদ্যে ফরমালিন বা অন্যান্য কেমিকাল মেশানো বন্ধ করতে নেয়া সরকারের সাম্প্রতিক উদ্যোগ সম্পর্কে মঞ্জুর লিখেছেন, ‘‘...এখন থেকে নাকি খাদ্যে ফরমালিন পাওয়া গেলে সেই ব্যবসায়ীকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হবে, এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে৷....যাক, যুগের পর যুগ পরে হলেও কোনো এক সরকারের টনক তো নড়লো! এর ফল সেদিন দেখলাম, রাজধানীর সব ফলের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অনির্দিষ্ট কালের জন্য তাঁদের দোকান বন্ধ ঘোষণা করেছেন৷ তাঁদের অভিযোগ, ভ্রাম্যমাণ আদালত অহেতুক ফরমালিন মেশানোর অভিযোগে তাঁদের হয়রানি করে৷ যাঁরা তাঁদের ফল ‘ডিস্ট্রিবিউট' করেন, সেই হিমাগার মালিকদের নাকি কেউ কিছু বলে না৷ তাঁদের অভিযোগ, খাদ্যে ফরমালিন সেই হিমাগার মালিকেরাই মেশান৷ এখন হিমাগার মালিকদের ধরা শুরু হলে আরও উপরের লেভেলের কারো নাম বেরোবে৷ তারপর আরও উপরের৷ এভাবে একটা সময়ে হয়ত বা সত্যি সত্যিই আমাদের দেশের মানুষ ফরমালিন মুক্ত খাদ্য খেতে পারবে৷''

মঞ্জুর লেখা শেষ করেছেন রাজনৈতিক নেতাদের সমালোচনা করে৷ জাতীয় সংসদে সংগীত শিল্পী মমতাজের সরকারের স্তুতিতে গান গাওায়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি লিখেছেন, ‘‘আমাদের নেতাদের থাইল্যান্ড পাঠিয়ে দেয়া উচিত৷ তৈল মর্দন তাঁরা ভালোই পারেন৷ এখন মাসাজের টেকনিকটাও যদি শিখে আসতে পারেন, তাহলে আর কষ্ট করে কাউকে এত পয়সা খরচ করে ব্যাংককে যেতে হতো না৷ একেকজন ঘরে বসেই একেকটি ‘মাসাজ শিল্প প্রতিষ্ঠান' খুলে বসতে পারতেন৷''

সংকলন: আশীষ চক্রবর্ত্তী

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য