বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধের বড় প্রত্যাশায় শুরু জলবায়ু সম্মেলন
৩১ অক্টোবর ২০২১রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারের প্রতিনিধিরা গ্লাসগোতে জড়ো হয়েছেন প্রত্যাশা পূরণের চাপ নিয়ে৷ প্রশ্ন উঠেছে শেষ পর্যন্ত তা কতটা পূরণ হবে?
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে শুরু করে উন্নত, উত্তর গোলার্ধ্ব থেকে শুরু করে দক্ষিণ; জলবায়ু পরিবর্তন এখন আর কারো একার মাথাব্যাথার বিষয় নয়৷ যে দেশগুলো এতদিন নিজেদের নির্ভার মনে করেছে বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ বৃদ্ধির আঁচ তারাও টের পেতে শুরু করেছে৷ চলতি বছরই অস্বাভাবিক দাবানলে পুড়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডা, তুরস্ক৷ অভূতপূর্ব বন্যা দেখা দিয়েছে চীন, জার্মানিতে৷ অন্যদিকে বাংলাদেশের মতো নীচু দেশগুলো দায়ী না হয়েও আগে থেকেই জলবায়ু পরিবর্তনের ভুক্তভোগী৷
ঠিক এমন বাস্তবতায় স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে রোববার থেকে শুরু হলো জাতিসংঘের ২৬তম জলবায়ু সম্মেলন যা কপ নামে বেশি পরিচিত৷ ছয় বছর আগের প্যরিস চুক্তি বাস্তবায়নে আগামী দেড় সপ্তাহ বৈশ্বিক নেতাদের দেন দরবার, তর্ক বিতর্ক চলবে সেখানে৷ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অচলাবস্থা ঘোচাতে শিল্পোন্নত দেশগুলোর উপর বড় চাপ থাকবে এবারের সম্মেলনে৷ এ নিয়ে কূটনৈতিক মত পার্থক্যের সময় আগেই পার হয়ে গেছে বলে মনে করেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস৷ সম্মেলন শুরুর আগে করা টুইটে তিনি উল্লেখ করেন, বিশেষ করে জি-টোয়েন্টি নেতারা জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় তৈরি অচলাবস্থা কাটানোর নেতৃত্ব না দিলে ভয়ংকর ভোগান্তির মুখোমুখি হবে মানব সম্প্রদায়৷
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে চলায় এবং বিশ্বের নানা প্রান্তে শিক্ষার্থী, পরিবেশকর্মীদের আন্দোলনের কারণে বিভিন্ন দেশের রাজনীতিতে জলবায়ু পরিবর্তন যে কোন সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে৷ তারপরও বিজ্ঞানীরা গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমণের জন্য বিজ্ঞানীরা অর্ধশত বছর ধরে যে জীবাষ্ম জ্বালানিকে দায়ী করে এসেছেন তার ব্যবহার বন্ধে সর্বজনগ্রাহ্য কোন রূপরেখা হাজির করতে পারেননি রাজনৈতিক নেতারা৷ প্রতিবারের মতো এবারও তাদের উপর চাপ প্রয়োগে হাজারো জলবায়ুকর্মী প্রতিবাদের জন্য জড়ো হচ্ছেন গ্লাসগোতে৷ তাদের অভিযোগ ধনী দেশগুলো মোটেও তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে না৷ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা টুনব্যার্গ যেমনটা বলেছেন, তথাকথিত নেতারা এমন সব কথা বলছেন যা ভালো শোনায় কিন্তু তাদের কাজের বেলায় তার কোন প্রতিফলন নেই৷ এবার আর প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি নয় বরং বাস্তবায়ন দেখতে চান তারা৷
এই বিষয়ে আশাবাদী আয়োজক দেশ যুক্তরাজ্যের সরকার৷ ‘কয়লা, গাড়ি, অর্থ, বৃক্ষ’ এই চারটি বিষয়কে তারা এবারের সম্মেলনের সামনে রাখতে চাইছে৷ জি টোয়েন্টি সম্মেলনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বিশ্ব রক্ষায় রাষ্ট্রনেতাদের প্রতি বারবার আর্জি জানিয়েছেন৷ তবে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি কার্বন নির্গমণকারী দেশ চীনের প্রেসিডেন্ট এই শি ঝিনপিং সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না৷ থাকছেন না আরেক জি-টোয়েন্টি সদস্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনও৷ এমন বাস্তবতায় এই সম্মেলন অভিন্ন ও সুস্পষ্ট কোন সিদ্ধান্ত আসবে কীনা সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে৷
ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর নেতৃত্ব দিবে বাংলাদেশ
প্যারিস চুক্তির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলারের জলবায়ু তহবিল আদায় সম্মেলনে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর প্রধান লক্ষ্য থাকবে ৷ এই বিষয়ে ঝুঁকির মুখে থাকা ৪৮টি দেশের জোট ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ)' চেয়ারপার্সন হিসাবে গ্লাসগো সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ শনিবার ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ২০১৫ সালে প্যারিস সম্মেলনে উন্নত দেশগুলো অঙ্গীকার করেছিল, জলবায়ু তহবিলে ২০২০ থেকে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার অনুদান দেবে৷ বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেনন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম তাকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘‘আমরা চাই, এবার সেটির বাস্তবায়ন হবে, তোমরা শুধু মুখে মুখে বলো, এবার তোমাদের অবশ্যই দিতে হবে৷’’
পাশাপাশি তাপমাত্রা বৃদ্ধির মাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনতে ‘ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কনট্রিবিউশনস (এনডিসি)’ ঠিক করা, এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাড়াতে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়টিও সম্মেলনে তুলে ধরবে বাংলাদেশ৷
এফএস/এআই