ফুকুশিমা প্রসঙ্গ
১১ অক্টোবর ২০১৩বুধবারে তেজস্ক্রিয়তার পরিমাপ নেয়া হলে দেখা যায় মঙ্গলবারের চেয়ে তা ১৩ গুণ বেড়ে গেছে, ২০১১ সালের পর যা সবচেয়ে বেশি৷ ২০১১ সালের মার্চে ভূমিকম্প ও সুনামির আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পারমাণবিক চুল্লিটি৷ ঐ দুর্যোগে তিনটি পারমাণবিক চুল্লিতে হাইড্রোজেন বিস্ফোরণ হয় এবং ভেতরে পানি ঢুকে যায়৷ এটির তত্ত্বাবধানে আছে টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি টেপকো৷
চুল্লিটি ঠান্ডা রাখতে শত শত টন পানির প্রয়োজন৷ বুধবার ভুলবশতঃ এক শ্রমিক চুল্লির একটি পাইপ বিচ্ছিন্ন করে ফেললে ৭ টন তেজস্ক্রিয় পানি চুল্লি থেকে বাইরে বেরিয়ে পড়ে৷ টোকিও থেকে ২২০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত ফুকুশিমা দাইচি চুল্লিতে এই দুর্ঘটনায় টেপকোর কাজ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ বলা হচ্ছে, ফুকুশিমার তেজস্ক্রিয়তা দূর করতে টেপকোর কয়েক দশক লেগে যেতে পারে৷
টেপকো বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত দুই নম্বর চুল্লির বাইরে পানিতে বুধবার সিজিয়াম-১৩৪ এবং সিজিয়াম-১৩৭-এর যে রিডিং নেয়া হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রতি লিটারে তেজস্ক্রিয়তার পরিমাণ ১,২০০ বেকারেল, যা মঙ্গলবারের চেয়ে ১৩ গুন বেশি৷
রিডিং অনুযায়ী, প্রতি লিটারে সিজিয়াম-১৩৪-র তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা ৩৭০ বেকারেল, যেখানে সিজিয়াম-১৩৭ এর পরিমাণ লিটারে ৮৩০ বেকারেল৷ চুল্লির বাইরের পানিতে সিজিয়াম থেকে ক্ষতিকারক গামা রশ্মির নিঃসরণ হয়, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর৷ তবে এর মাত্রা রয়েছে৷ প্রতি লিটারে সিজিয়াম-১৩৭ এর মাত্রা ৯০ বেকেরেল এবং সিজিয়াম-১৩৪ এর মাত্রা ৬০ বেকারেল হলে তা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর৷
টোপকোর এক মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন, দুই নম্বর ভবনের নির্মাণ কাজের ত্রুটির জন্য পানিতে তেজস্ক্রিয়তা বেড়ে গেছে৷ ফুকুশিমা পারমাণবিক চুল্লির ভবনের যে অংশটি সমুদ্র সংলগ্ন সেখানকার ভূমি শক্ত করতে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করছে শ্রমিকরা, যাতে পানিতে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়তে না পারে এবং সাগরে গিয়ে না মেশে৷
টেপকো বলছে, ফুকুশিমার একদম কাছে যে পানি রয়েছে, সেখান থেকে এই রিডিংগুলো নেয়া হয়েছে, প্রশান্ত মহাসাগর থেকে যা কয়েকশ মিটার দূরে৷ চুল্লির আশপাশ থেকে এই তেজস্ক্রিয়তা যাতে মূল সমুদ্রে গিয়ে না মিশে তার চেষ্টা করছেন বলে জানালেন কর্মকর্তারা৷
গত সপ্তাহে অবশ্য টেপকো জানিয়েছিল, ফুকুশিমা থেকে ৪৩০ লিটার তেজস্ক্রিয় পানি সমুদ্রে গিয়ে মিশেছে৷
তবে প্রশান্ত মহাসাগরের পানি এখনো পরীক্ষা করে দেখা হয়নি, সেখানে সিজিয়ামের অস্তিত্ব আছে কিনা৷ কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, সমুদ্রে গিয়ে তেজস্ক্রিয় পানির ঘনত্ব কমে যাওয়ায় তা পরিবেশ বা অন্য দেশের জন্য ক্ষতিকারক হবে না৷
তেজস্ক্রিয় পদার্থ অপসারণে অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়োগ এবং এর পদক্ষেপ নিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিতে টেপকোকে নির্দেশ দিয়েছে জাপানের নিউক্লিয়ার রেগুলেশন কর্তৃপক্ষ৷
এপিবি/এসবি (রয়টার্স)