বেসরকারি খাতে স্বাস্থ্যসেবায় এগিয়ে আইসিডিডিআরবি, ব্র্যাক
১৮ অক্টোবর ২০১৬আইসিডিডিআরবি
স্বাস্থ্যখাতে সফলতার সঙ্গে কাজ করে চলেছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)৷
বিভিন্ন গবেষণা ও রোগ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখার কারণে প্রশংসিত এই প্রতিষ্ঠান৷ চিকিৎসা সেবা দান ও গবেষণার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্যখাতে নিয়োজিতদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তুলছে৷ এ বছরের জুলাইতে প্রকাশিত আইসিডিডিআরবির ২০১৫ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মাতৃত্ব ও শিশুকালীন মৃত্যুর হার হ্রাস, পুষ্টি নিশ্চিতকরণ, অন্ত্র ও শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ রোধসহ নানাক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি৷
এর মধ্যে পাঁচটি ক্ষেত্রে বিশেষ সাফল্য পেয়েছে আইসিডিডিআরবি৷
মাতৃমৃত্যুর হ্রাস
২০১৫ সালে আইসিডিডিআরবি বিশেষ একটি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার পরীক্ষা চালিয়েছে, যার মাধ্যমে সন্তানসম্ভবা মায়েরা জন্ডিস থেকে সুরক্ষা পেতে পারেন৷ জন্ডিস সাধারণত হেপাটাইটিস ই ভাইরাসের (এইচইভি) কারণে হয়ে থাকে, যেটা এইচইভি-২৩৯ নামে ওই ভ্যাকসিনের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যেতে পারে৷
শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা
শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায়ও বেশ কিছু সফলতা দেখিয়েছে আইসিডিডিআরবি৷ এরমধ্যে মারাত্মক নিউমোনিয়া প্রতিরোধে ‘বাবল সিপাপ' নামে এক ধরনের অক্সিজেন থেরাপি ও কলেরা প্রতিরোধে ‘সঞ্চল' নামে একটি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার পরীক্ষার কথা উল্লেখ করা যায়৷
শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস
অপরিণত বয়সের শিশু ও কম ওজনের শিশুকে সুরক্ষা দেওয়ার অন্যতম পন্থা ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার (কেএমসি) এর মাধ্যমে শিশু মৃত্যুর হার হ্রাসেও সাফল্য দেখিয়েছে আইসিডিডিআরবি৷ শিশুদের টাইফয়েডের কারণ হিসাবে ‘সালমোনেলা টাইফি' ইনফেকশনের জন্য নিদিষ্ট একটি টেস্টের উদ্ভাবন করা হয়েছে, যা শিশুদের টাইফয়েড নির্নয়ে অত্যন্ত কার্যকর৷
স্বাস্থ্যখাতে প্রশিক্ষণ
২০১৫ সালে স্বাস্থ্যখাতের নানা বিষয়ে আইসিডিডিআরবি ১ হাজার ২৯০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে, আয়োজন করেছে ৭১টি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি৷
২ লক্ষাধিক রোগীর চিকিৎসা
২০১৫ সালে বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালে ২ লাখ ৫ হাজার ৮৮৫ জন রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছে আইসিডিডিআরবি৷ রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল শিশু এবং তাদের অনেকেরই বয়স ৫ বছরের কম৷
গত ২৬ সেপ্টেম্বরে একটি ভিডিও বার্তায় আইসিডিডিআরবির প্রশংসা করেছিলেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন৷
বাংলাদেশে নবজাতক, শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যু রোধে আইসিডিডিআরবি'র প্রশংসা করেন তিনি৷
ঋতুস্রাব চলাকালীন মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার হার বাড়াতে কর্মসূচি:
ঋতুস্রাব চলাকালীন মেয়ে শিক্ষার্থীদের স্কুলে অনুপস্থিতি ঠেকাতে পরীক্ষামূলকভাবে নতুন প্রকল্প কার্যক্রম শুরু করেছে আইসিডিডিআরবি৷ চলতি বছরের ১৬আগস্ট পরীক্ষামূলকভাবে ‘পাইলটিং মেন্সট্রুয়াল হাইজিং ম্যানেজমেন্ট ইন্টারভেনশন আরবান অ্যান্ড রুরাল স্কুলস ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক প্রকল্প কার্যক্রম শুরু করে৷ প্রকল্পটি পরিচালনার জন্য আইসিডিডিআরবি ও তাদের আন্তর্জাতিক সহযোগী বিজ্ঞানীরা বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন থেকে বড় ধরনের আর্থিক অনুদান পেয়েছে৷ আইসিডিডিআরবির এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্কুলগামী মেয়েদের মধ্যে শতকরা ৪০ ভাগ মাসে কমপক্ষে তিনদিন স্কুলে অনুপস্থিত থাকে৷
ব্র্যাকের স্বাস্থ্যসেবা
ব্র্যাকের ‘স্বাস্থ্য কর্মসূচি' দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত এবং সমাজের প্রান্তবাসী মানুষের কাছে প্রতিরোধমূলক, প্রচারমূলক, প্রতিকারমূলক ও পুনর্বাসনমূলক সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিচ্ছে৷ স্বাস্থ্যক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়নের জন্য জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন, মানবসম্পদের উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ এবং সহায়তামূলক পরিবেশ তৈরি জরুরি বলে স্বাস্থ্য কর্মসূচি বিবেচনা করে৷ গ্রাম ও শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নারীরা ব্র্যাক থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাস্থ্যসেবিকার কাজ করেন৷
তারা তাদের এলাকায় দরিদ্র মানুষের দোরগোড়ায় গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা ও সামগ্রী পৌঁছে দেন৷ ব্র্যাক কর্তৃক প্রশিক্ষিত এই স্বাস্থ্যসেবিকারা দেশের অনেক মানুষের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিচ্ছেন৷ গর্ভবতী, মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টিশিক্ষা, ছোঁয়াচে ও অছোঁয়াচে রোগ প্রতিরোধ ও সাধারণ জীবনমান উন্নয়নে সাহায্য করে থাকেন তারা৷
চলতি বছরের জুলাই মাসে গ্রামাঞ্চলে হতদরিদ্র মানুষের জন্য উন্নত চক্ষু চিকিৎসাসেবা দিতে ব্র্যাক ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা অরবিস ইন্টারন্যাশনালের মধ্যে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে৷ চুক্তি আনুযায়ী, কাতার ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের একটি প্রকল্পের আর্থিক সহায়তায় হতদরিদ্র ও সাধারণ মানুষের চক্ষু চিকিৎসার জন্য দেশের চারটি স্থানে ‘ভিশন সেন্টার' স্থাপন করা হবে৷ দিনাজপুরের খানসামা, ময়মনসিংহের নান্দাইল, খুলনার ডুমুরিয়া ও কুমিল্লার হোমনা উপজেলায় এই সেন্টারগুলো করা হবে৷
সিআরপি
সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অফ দ্য প্যারালাইজ্ড বা সিআরপি বাংলাদেশের একটি স্বেচ্ছাসেবী ফিজিওথেরাপি সংগঠন৷
এর মূল কাজ শারীরিকভাবে অক্ষমদের পরিপূর্ণ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা৷ ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনটির মূলে আছেন বাংলাদেশে বসবাসরত একজন ইংরেজ ফিজিওথেরাপিস্ট যিনি জীবনের অধিকাংশ সময়ই বাংলাদেশে মানবসেবায় ব্যয় করেছেন এবং এখনও করছেন৷ তিনি হলেন ভেলরি এ. টেইলর৷ এই হাসপাতালে মাত্র ৫০ টাকার বিনিময়ে বহির্বিভাগে যে কোনো রোগী দেখানো যায়৷ প্রতি সপ্তাহে শুক্রবার ব্যতীত যে কোনোদিন এ হাসপাতালের বহির্বিভাগ খোলা থাকে৷ প্রতি বছর সিআরপি থেকে প্রায় ৪০০ জন মেরুরজ্জুতে আঘাতপ্রাপ্ত এবং ৪৩ হাজার রোগী বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়ে থাকে৷
শিশু বিভাগ
সেরিব্রাল পলসি, কগনিশন ও অটিজমসহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক প্রতিবন্ধিতার শিকার শিশুদের চিকিৎসাসেবার জন্য এখানে রয়েছে শিশু বিভাগ৷
ফিজিওথেরাপি
ফিজিওথেরাপির ক্ষেত্রে ৪০০ টাকা, ২০০ টাকা এবং ১০০ টাকা নেয়া হয়৷ এছাড়া আছে ওকুপেশনাল থেরাপি৷ আছে স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি, অর্থাৎ যাদের কথা বলতে সমস্যা হয়৷
স্পেশাল সিটিং চেয়ার
শারীরিক প্রতিবন্ধিত্বের শিকার শিশুদের দেহভঙ্গি ঠিক রাখা, শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখা ও সহজে দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে পারার লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রতিষ্ঠিত হয় এই বিভাগ৷
অর্থোটিক্স অ্যান্ড প্রস্থেটিক্স
যাদের হাত অথবা পা নেই, এমনকি আঙ্গুল নেই তাদের জন্য এখানে বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম অঙ্গ তৈরি করে দেয়া হয়৷ এই কৃত্রিম অঙ্গ লাগিয়ে অনেকেই চলাচল করে থাকেন৷
আশার সাইকোথেরাপি কর্মসূচি:
অ্যাসোসিয়েশন ফর সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট বা আশা ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে সাইকোথেরাপি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে৷ এর ফলে প্রায় হাজারেরও বেশি সংখ্যক মানসিক রোগী বছরে আধুনিক চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে৷ এই খাতের সকল খরচ আশা নিজস্ব তহবিল থেকে বহন করে৷ এই প্রোগ্রামটি দেশের সব জায়গায় চালানো হয়৷ প্রোগ্রাম সমন্বয়কারীরা প্রতিটি প্রাক-নির্বাচিত এলাকায় অন্তত তিন দিনের জন্য ক্যাম্পেইনটি করে থাকেন৷
এপিবি/এসিবি
আপনি কি কিছু যোগ করতে চান? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷