বুড়িগঙ্গা রক্ষায় নতুন উদ্যোগ
৩১ জুলাই ২০১৩এ সব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বুড়িগঙ্গা নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় টাস্কফোর্সের বৈঠকে৷ বেঠকে নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান এমপি জানান, পরিবেশ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় যৌথভাবে বুড়িগঙ্গাকে দূষণ এবং দখলমুক্ত করার ব্যবস্থা নেবে৷ আগামী একমাসের মধ্যে ট্যানারিসহ সব শিল্প কারখানাকে তাদের বর্জ্য পরিশোধনের জন্য ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ করতে হবে৷ নয়তো বুড়িগঙ্গায় তাদের বর্জ্য ফেলার সব পথ বন্ধ করে দেয়া হবে৷ যারা বর্জ্য ফেলার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ মন্ত্রী আরও বলেন, হাজারীবাগের ট্যানারি বুড়িগঙ্গা দূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী৷ তিনি ট্যানারিগুলোকে ঢাকার জনবহুল এলাকা হাজারীবাগ ছেড়ে সাভারে তাদের জন্য নির্ধারিত জায়গায় চলে যেতে বলেন৷ সাভারে টানারিগুলোর জন্য ২০০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ১০ বছর আগে৷
ঢাকা শহর থেকে প্রতিদিন বুড়িগঙ্গায় শিল্পসহ নানা ধরনের ৪,৫০০ টন কঠিন বর্জ্য ফেলা হয়৷ ২০,০০০ টন ট্যানারি বর্জ্য ফেলা হয়, যার মধ্যে নানা ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ আছে৷ যার ফলে বুড়িগঙ্গার পানিতে এখন অক্সিজেন এতটাই কম যে সেখানে মাছ তো দূরের কথা, কোনো জলজ প্রাণীই বেঁচে থাকতে পারেনা৷
বাংলাদেশে ২৭০টি ট্যানারির মধ্যে ২০০ ট্যানারিই রাজধানীর হাজারীবাগে৷ ট্যানারির কারণে হাজারীবাগের ৫০ একর এলাকার মাটি এখন পুরোপুরি রাসায়নিক বর্জ্যে পরিণত হয়েছে৷ এখানকার বাতাস, পানি সবই দূষিত৷ তাই হাজারীবাগ এলাকায় যারা বসবাস করেন, তাঁদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে৷ তাঁরা শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে ভুগছেন৷
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা-র সমন্বয়কারী ইকবাল হাবিব ডয়চে ভেলেকে জানান, ২০০৩ সালে হাইকোর্ট হাজারীবাগের ট্যানারিগুলোকে সরিয়ে নিতে বলেছেন৷ এরপর সরকার এবং ট্যানারি মালিকরা মিলে অন্তত ১০ বার সময় নিয়েছে৷ এতে প্রমাণিত হয়, সরকার বা ট্যানারি মালিক কেউই এ ব্যাপারে আন্তরিক নয়৷ তবুও শেষ পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা রক্ষায় যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা অভিনন্দনযোগ্য৷ তবে ৫ বছর আগে এই সিদ্ধান্ত হলে বুড়িগঙ্গার এই করুন পরিণতি হতনা৷ তিনি আরও বলেন, বুড়িগঙ্গার পানিতে এখন লেড ও ক্যাডমিয়ামসহ ৬ ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ আছে৷ তা শুধু বুড়িগঙ্গা নয়, আশেপাশের ৫৬ কিলোমিটার নদীকে দূষিত করছে৷ তিনি বলেন, বুড়িগঙ্গার এই দূষিত পানিতে ৪০ লাখ মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন৷
ইকবাল হাবিব আরও জানান, হাজারীবাগের ট্যানারিগুলো সরিয়ে নেয়ার পর ঐ এলাকার মাটি দূষণমুক্ত করতে কমপক্ষে ৩ বছর সময় লাগবে৷