বুশেয়েরের পারমাণবিক চুল্লিতে জ্বালানি ভরেছে ইরান
২৬ অক্টোবর ২০১০উল্লেখ্য, জ্বালানি ভরার বিষয়টিই হচ্ছে পারমাণবিক কেন্দ্রটি চালু করার সর্বশেষ ধাপ৷
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলো ফলাও করে লিখেছে- এক ‘শান্তিপূর্ণ' পারমাণবিক শক্তির অধিকারি হওয়ার পথে এর শেষ সিঁড়িটিতে পা রেখেছে ইরান৷ ইরানের অন্যান্য সংবাদমাধ্যমগুলোও জানিয়েছে, ইরানের বুশেয়েরের এই পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রটির জ্বালানি রাখার অংশটিতে প্রয়োজনীয় জ্বালানি প্রবেশ করানো হয়েছে৷
ইরান তার এই পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্র চালুর বিষয়টিকে ‘শান্তিপূর্ণ' আখ্যা দিলেও অধিকাংশ দেশই ইরানের এই ইউরেনিয়াম নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটির বিষয়টিতে শঙ্কিত৷ তাদের ধারণা হচ্ছে- এই পারমাণবিক কেন্দ্রের সহায়তায় ইরান শুধু শক্তি উৎপাদন নয়, পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে চাইছে৷
এদিকে ইরানের সরকারী এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, জ্বালানি ভরার এই বিষয়টি প্রমাণ করলো যে, বিদেশি শক্তির শত বাধা আরোপ এবং প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা সত্ত্বেও পারমাণবিক শক্তি অর্জনের লক্ষ্যে ইরান সঠিক পথেই এগিয়েছে৷
সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ইরান আশা করছে রাশিয়া'র প্রযুক্তিতে তৈরি এক হাজার মেগাওয়াটের এই পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্রটি আগামী বছরের গোড়ার দিক থেকেই প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহের কাজ শুরু করতে পারবে৷ জানা গেছে, পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্রের কম্পিউটার ব্যবস্থাটি ‘স্টাক্সনেট' ভাইরাস আক্রমণের শিকার হয়েছিল, এবং একারণেই দেরি হয়েছে – এমন খবরকে স্রেফ গুজব বলেই উড়িয়ে দিয়েছেন এর কর্তাব্যক্তিরা৷ যদিও জানা গেছে, বুশেয়েরের অনেক কম্পিউটারই নাকি এই ‘স্টাক্সনেট' ভাইরাসের আক্রমণের শিকার হয়েছিল৷
এদিকে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রামিন মেহমানপারাস্ত এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত লক্ষ্যেই পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্রটির কাজ এগিয়ে চলেছে৷ জার্মান ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের এক মুখপাত্র ইরানের সাম্প্রতিক এই উদ্যোগ সম্পর্কে বলেছেন, ‘বুশেয়ের পারমাণবিক প্রকল্পটি চালু করার মাধ্যমে ইরান আসলে তার দেশের জনগণকে বোঝাতে চাইছে বৈদেশিক সহায়তা বন্ধের কারণে সৃষ্ট সংকট সামলাতে তারা সক্ষম৷'
উল্লেখ্য, ইরান বরাবরই তার দেশের প্রয়োজন মেটাতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ার জন্য কথা বলে আসছে, এবং পারমাণবিক তৎপরতা বন্ধে ইরানের প্রতি বিশ্বের ক্ষমতাশালী দেশগুলোর বারংবার আহ্বান সত্ত্বেও ইরান তার এই পারমাণবিক কেন্দ্র চালু করার যাবতীয় কর্ম তৎপরতা চালিয়ে গেছে৷ যদিও ইরান জানিয়েছে, এই পারমাণবিক কেন্দ্র নির্মাণের বিষয়টি মূলত তাদের দেশের ভবিষ্যৎ জ্বালানি এবং ভবিষ্যতের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর প্রয়োজনীয় জ্বালানী সরবরাহের জন্যই৷ কিন্তু অধিকাংশ দেশের আশঙ্কা ইরান পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের লক্ষ্যেই এটি করছে৷
বিশেষজ্ঞরা অবশ্য জানিয়েছেন, বুশেয়েরের এই পারমাণবিক কেন্দ্রটি সচল হলেও ইরান এর মাধ্যমে পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণে সক্ষম হবে না৷ কেননা, পারমাণবিক চুল্লিটির জন্য প্রয়োজনীয় ইউরেনিয়ামের যোগানদাতা রাশিয়া ইউরেনিয়াম জ্বালানির অবশিষ্ট হিসেবে বেরিয়ে আসা প্লুটোনিয়াম, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয় তা নিয়ে যাবে৷
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান ক্যাথরিন অ্যাশ্টন পারমাণবিক কর্মতৎপরতা বন্ধের লক্ষ্যে আয়োজিত নভেম্বরের ১৫ থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত এক আলোচনায় ইরানকে বসার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বলেই জানা গেছে৷
প্রতিবেদন: হুমায়ূন রেজা
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন