জার্মানদের গ্রন্থ প্রীতি
২৪ জানুয়ারি ২০১৩উপহার পাওয়া ও কেনা বইগুলি কোথায় সংরক্ষণ করা যায়, তা নিয়ে জার্মানদের মাথা ব্যথার অন্ত নেই৷ কেননা শেল্ফে তো এক ফোঁটাও জায়গা থাকে না, তাই ছুটতে হয় নতুন শেল্ফ কিনতে৷ অল্পবয়সী বালক থেকে শুরু করে প্রবীণ বয়সের মানুয পর্যন্ত সবারই এক সমস্যা৷
ভোক্তা গবেষণা সমিতির এক সমীক্ষায় জানা গেছে যে, বছরের একজন জার্মান গড়ে ১০, ৭টি বই কিনে থাকেন৷ এর মধ্যে রয়েছে শিশু ও কিশোর গ্রন্থ, ভ্রমণ ও পরামর্শমূলক পুস্তক, বিষয়ভিত্তিক বই, শ্রতিবই, ই-বুক বা ইলেকট্রনিক বই ইত্যাদি৷ সব বই পড়া সম্ভব না হলেও সাজিয়ে রাখতে পছন্দ করে জার্মানরা৷
দ্বিতীয় বৃহত্তম বই-এর বাজার জার্মানি
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বই-এর বাজার জার্মানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরেই৷ তবে সব দেশেই একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়৷ আর তা হলো, যার আয় যত বেশি, সে তত বেশি বই কেনে৷ অর্থাৎ বই কেনার সঙ্গে আর্থিক সংগতির একটা যোগাযোগ রয়েছে৷
এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে, সব বই কী রাখার প্রয়োজন আছে? উত্তরটা ‘হ্যাঁ' হলে আরো শেল্ফের প্রয়োজন হয়ে পড়ে৷ দেশ-বিদেশের আসবাবপত্রের ডিজাইনাররা সুন্দর সুন্দর বুদ্ধিদীপ্ত ও স্থান সাশ্রয়ী বেশ কিছু বই রাখার আসবাবের নকশা তৈরি করেছেন৷ এতে স্বকীয়তা ও অভিনবত্বের পরিচয়ও পাওয়া যায়৷ এ বিষয়টি নিয়েও একটি বই বের হয়েছে বাজারে নাম ‘বুক শেল্ফ'৷ এতে দেখানো হয়েছে, কীভাবে সোফার সিট ও পায়ার মাঝখানে কিংবা সিঁড়ির ফাঁকে ফাঁকে বই সংরক্ষণ করে রাখা যায়৷
প্লাবনরোধে কেনা বন্ধ
বই-এর প্লাবন রোধ করতে হলে বই কেনাটা বন্ধ করতে হবে৷ উপহার পাওয়া বই দিয়েই নতুন বই-এর চাহিদা অনেকটা মেটানো যায়৷ আর গ্রন্থের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য তো গ্রন্থাগারও রয়েছে৷ ছাত্রছাত্রীদের জন্য লাইব্রেরি থেকে বই ধার নেওয়াটা একান্তই স্বাভাবিক ব্যাপার৷ কিন্তু বড় হয়ে আয় বাড়ার সাথে সাথে এই অভ্যেসটিও চলে যায়৷ লোকে বই কিনতে শুরু করে৷ পাবলিক লাইব্রেরি ছাড়াও গির্জা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান পরিচালিত গ্রন্থাগারও রয়েছে বিভিন্ন শহরে৷ এইসব লাইব্রেরি থেকে অল্প ফিসের বিনিময়ে অনেক ধরনের বই ধার নেওয়া যায়৷ এর ফলে অর্থ ও স্থান দুইয়েরই সংকুলান হয়৷ কিন্তু অনেক গ্রন্থপ্রেমীর কাছেই বই ধার নেয়াটা তেমন মনঃপূত নয়৷ তাই নিজের বাড়িতে পাহাড় সমান করে ফেলে তারা বই-এর স্তূপে৷ কিছুটা স্মৃতি রক্ষার্থে, কিছুটা লোক দেখানো বা শিক্ষার পরিচয় তুলে ধরার জন্য বই সাজিয়ে রাখেন অনেকে৷ বাড়িতে ছোটখাট একটি লাইব্রেরি মনে প্রশান্তি জাগায় ও মর্যাদাও বৃদ্ধি করে৷
পুরানো বই-এর সুরাহা
কিন্তু পুস্তকের বন্যা রোধ করাটা একান্তই জরুরি হয়ে পড়ে অনেক সময়৷ সেক্ষেত্রে পুরানো বই বিক্রি করে বা কাউকে উপহার হিসাবে দিয়ে দেওয়া যায়৷ এজন্য রয়েছে পুরানো বই-এর বাজার৷ তবে সেখানে বইকে অনেক সময় প্রায় বিনা মূল্যেই ছেড়ে দিতে হয়৷
ইন্টারনেটের মাধ্যমেও পুরানো বই-এর সুরাহা করা যায়৷ ইন্টারনেট পুস্তকের বাজারে বিশাল প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন ও ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্ম ‘বুকলুকার' ইত্যাদির মাধ্যমে পুরানো বই-এর তালিকা ও শিরোনাম লিখে বিক্রির জন্য উপস্থাপন করা যায়৷ ২০০৬ সাল থেকে মোমোক্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান এক্ষেত্রে তত্পর হয়েছে৷ এটিও পুরানো বই বিক্রির ব্যবস্থা করে থাকে৷
বই বিক্রি করাটা ঝামেলার মনে হলে সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে তা দান করা যায়৷ তারা আবার সস্তায় কিংবা বিনা মূল্যে অভাবীদের মধ্যে এই সব বই বিতরণ করতে পারে৷ অনেকে বই-এর বাক্স বাড়ির দরজার সামনে রেখে দেয়, যে কেউ পছন্দ মতো বই নিয়ে যেতে পারে৷
বই-এর দেয়া নেয়া
বই-এর আদান প্রদানের ব্যাপারটা ৯০-এর দশক থেকে শুরু হয়েছে৷ এই বিষয়টি জার্মানির বড় বড় শহরে লক্ষ্য করা যায়৷ কোনো পার্কে, শহরের কেন্দ্র স্থলে বা বড় বড় মলে বই ভর্তি শেল্ফ বা বাক্স রেখে দেওয়া হয়৷ যে কেউ এখানে অতিরিক্ত বই রেখে যেতে পারে বা পছন্দমত বই বিনা মূল্যে নিয়েও যেতে পারে৷
পুস্তকের শেল্ফে জায়গা করার রাডিক্যাল একটা উপায় হলো ই-রিডার৷ এতে ডিজিটাল বই পড়া যায়৷ বলা যায় সমস্ত গ্রন্থাগারই ছোট্ট এক পাতে সংগ্রহ করে রাখা যায়৷ তবে মুদ্রিত বই-এর বদলে ই-বুক অনেক বই প্রেমীর কাছে অচিন্ত্যনীয়৷ খুব বেশি হলে মুদ্রিত বই-এর পাশাপাশি শেল্ফে স্থান পেতে পারে ইলেকট্রনিক বুক৷
জার্মানিতে ই-বুকের বিক্রির পরিমাণ মোট বই বিক্রির এক শতাংশ মাত্র৷ অ্যামেরিকায় অল্প কয়েক বছরে ই-বুকের বিক্রি ১৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে৷