পদ্মা সেতু প্রকল্প
১৩ জুলাই ২০১২পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাতিলের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য এক বড় ধাক্কা৷ বিষয়টি নিয়ে দেশে-বিদেশে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে৷ কয়েকদিন আগে সরকারের মন্ত্রিসভা বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, অর্থায়ন বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য এই মুহূর্তে বিশ্বব্যাংকের কাছে কোনো অনুরোধ জানাবে না সরকার৷ আবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত আশা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘‘বিশ্বব্যাংক তাদের ‘ভুল' বুঝতে পেরে অর্থায়ন বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে৷'' অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলী খান মনে করেন, ‘‘বাংলাদেশ সরকারের কোন ব্যবস্থা ছাড়াই বিশ্বব্যাংক তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার সম্ভাবনা খুবই কম৷''
বিশ্বব্যাংকের সাবেক এই কর্মকর্তা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা (বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্ত) পুনর্বিবেচনা হবে কিনা সেটা নির্ভর করবে সরকারের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের যেসব বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে সেগুলো নিষ্পন্ন হয় কিনা সেটার ওপর৷''
তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বব্যাংক যে সমস্ত শর্ত দিয়েছিল সেতু করার জন্য সেগুলো যদি সরকার গ্রহণ করে অথবা বিশ্বব্যাংকের কাছে যদি বিকল্প গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব সরকার পেশ করতে পারে তাহলে হয়ত পুনরায় আলোচনা সম্ভব৷ সেটা পুর্নবিবেচনাও হতে পারে, নতুন ঋণ চুক্তিও হতে পারে৷ তবে তার আগে প্রকৃত ইস্যুগুলোতে তাদের একমত হতে হবে৷ যেটা নিয়ে আমার মনে হয় এখনো কোন আলোচনাই হয়নি৷''
বলাবাহুল্য, পদ্মা বহুমুখি সেতু প্রকল্পে বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ‘বিশ্বাসযোগ্য' দুর্নীতির অভিযোগ আনে বিশ্বব্যাংক৷ কিন্তু এই বিষয়ে বাংলাদেশ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ঋণচুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিষ্ঠানটি৷ বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির যে অভিযোগ তুলেছে সে সম্পর্কে ড. খান বলেন, ‘‘এগুলো সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক তিনটি শর্ত দিয়েছিল৷ কিন্তু বাংলাদেশ সরকার সেগুলো গ্রহণ করেনি৷ এখন বিশ্বব্যাংকের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, এমন কতগুলো বিকল্প প্রস্তাব দিতে হবে সরকারকে৷''
বিশ্বব্যাংকের সহায়তা ছাড়াই অবশ্য নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ এই বিষয়ে জনগণের মধ্য উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী৷ তবে ড. আকবর আলী খান এই বিষয়ে জানান, ‘‘বিশ্বব্যাংকের সাহায্য ছাড়াই যদি নিজস্ব অর্থায়নে করতে হয় সেটার জন্য প্রস্তুতি দরকার৷ বাংলাদেশ সরকারের তার জন্য কোন প্রস্তুতি ছিল না৷''
তিনি বলেন, ‘‘সরকারের সংকল্প ঘোষিত হয়েছে৷ কিন্তু সংকল্প বাস্তবায়নের জন্য কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হবে সেটা এখনো চিহ্নিত করা হয়নি৷''
উল্লেখ্য, ৬.১৫ কি.মি. দীর্ঘ পদ্মা সেতু প্রকল্পের মোট খরচ ধরা হয়েছে ২৯০ কোটি মার্কিন ডলার৷ এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক প্রতিশ্রুত ১২০ কোটি ডলার দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বাতিল করেছে৷
সাক্ষাৎকার: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: জাহিদুল হক