1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিশেষ অভিযানের ফল কী?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২০ ডিসেম্বর ২০২২

ঢাকায় বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের আগে-পরে পুলিশের বিশেষ অভিযানের ফল কী? কত জন গ্রেপ্তার হলো? তারা কারা? আর তাতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিরই বা কতটা উন্নতি হল? পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে এই অভিযান শেষ হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/4LEZl
সারাদেশে এই বিশেষ অভিযান শুরু হয় ১ ডিসেম্বর, আর শেষ হয়েছে ১৫ ডিসেম্বর৷
ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের আগে এক ব্যক্তির ব্যাগ পরীক্ষা করছেন একদল পুলিশ সদস্যছবি: Mortuza Rashed/DW

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের অভিযোগ, ‘‘পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের আটক করে ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশ পণ্ড করতেই এই অভিযান পরিচালনা করেছে৷''

আর পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, ‘‘জঙ্গি, সন্ত্রাসী, মাদকসেবী ও কারবারি, অবৈধ অস্ত্রধারী, পরোয়ানাভুক্ত আসামি গ্রেপ্তার, মাদক এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের উদ্দেশ্যে এই অভিযান চলানো হয়৷''

অন্যদিকে পুলিশের সাবেক প্রধান শহীদুল হক বলেন, ‘‘এই ধরনের অভিযানে ৫৪ ধারায় আটকের সুযোগ নেই৷ আর গণভাবে, নাগরিকদের প্রাইভেসি নষ্ট মেবাইল ফোন চেক করা আনএথিক্যাল৷'' 

সারাদেশে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে: প্রিন্স

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য:

সারাদেশে এই বিশেষ অভিযান শুরু হয় ১ ডিসেম্বর, আর শেষ হয়েছে ১৫ ডিসেম্বর৷ এর আগে বিশেষ অভিযান শেষ হলে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সংবাদ সম্মেলন করে সাফল্যের খবর জানানো হতো৷ জানানো হতো উদ্ধারের তথ্য৷ কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি৷ সাংবাদিকেরা ব্যক্তিগত পর্যায়ে যোগাযোগ করে অনানুষ্ঠানিকভাবে তথ্য নিচ্ছেন৷

পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানা গেছে, এবারের বিশেষ অভিযানে মোট ২৩ হাজার ৯৬৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তাদের মধ্যে বিভিন্ন মামলায় পরোয়ানাভুক্ত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৫ হাজার ৯৬৮ জন৷ আর অভিযানের সময় মোট নতুন মামলা হয়েছে পাঁচ হাজার ১৩২টি৷ এইসব নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে আট হাজার জনকে৷ অভিযানের সময় ২৪টি আগ্নেয়াস্ত্র, দুই লাখ ইয়াবা, আট কেজি হেরোইন  এবং  পাঁচ হাজার ৪১৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে পুলিশ৷ পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে তালিকাভুক্ত জঙ্গি ও সন্ত্রাসী ৭২ জন৷

পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বিশেষ অভিযান শুরুর আগে দেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, ঢাকার আদালত এলাকা থেকে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা বিবেচনায় নিয়ে বিজয় দিবস, বড়দিন এবং থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন যাতে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ হয় সেজন্য এই অভিযান পরিচালনা করা হবে৷

অভিযানে কয়েক হাজার লোক গ্রেপ্তার হলেও ঢাকার আদালত এলাকা থেকে গত ২০ নভেম্বর ছিনতাই হওয়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ৷ পুলিশ এই কানেকশনে কয়েকজন জঙ্গিকে গ্রেপ্তারের দাবি করলেও পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিরা এখনো অধরা৷ 

পুলিশের বিশেষ অভিযানের আদেশে আবাসিক হোটেল, মেস, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টারসহ অপরাধীদের সম্ভাব্য লুকিয়ে থাকার সব স্থানে অভিযান চালানো নির্দেশ দেয়া হয়৷ জঙ্গি, সন্ত্রাসী, মাদকসেবী ও কারবারি, অবৈধ অস্ত্রধারী, পরোয়ানাভুক্ত আসামি গ্রেপ্তার, মাদক এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করার নির্দেশ দেওয়া হয়৷

বিএনপির অভিযোগ:

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স দাবি করেন, ‘‘সরকারের এই বিশেষ অভিযান ছিলো বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের জনসভা পণ্ড করার জন্য৷ পুলিশ অভিযানের নামে সারাদেশে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে৷ তাদের বাসা বাড়িতে হামলা চালিয়েছে৷''

তার কথা, ‘‘পুলিশ তাদের বিশেষ অভিযান শেষ হওয়ার কথা বললেও বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে৷ বিশেষ করে ২৮ ডিসেম্বর বিএনপির সারাদেশে গণমিছিল এবং ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিলকে টার্গেট করে এই অভিযান চলছে৷''

আজকেও (মঙ্গলবার) টাঙ্গাইলে বিএনপির এক নেতার স্মরণসভা থেকে ফেরার পথে ১৭ জন নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়৷ তিন দিন আগে ঢাকা থেকে ছাত্রদল নেতা আব্দুর রহিমকে সাদা পোশাকে তুলে নেওয়া হয়েছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের অফিসে অভিযান চালিয়ে পুলিশ কম্পিউটার ডিস্কসহ কাগজপত্র নিয়ে যাওয়ায় এই সময়ে ঠিক কত জনকে আটক করা হয়েছে তার সঠিক সংখ্যা বলতে পারছি না৷ তবে অভিযানের সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, আবদুস সালামসহ আরো অনেক সিনিয়র নেতাকে আটক করেছে৷ আমরা দ্রুতই গ্রেপ্তারের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করব৷''

বিএনপির অফিস সেক্রেটারি তাইফুল ইসলাম টিপু জানান, ‘‘ডিসেম্বরের প্রথম ১৩ দিনে আমাদের এক হাজার ৩০০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারের তথ্য পর্যন্ত পেয়েছি৷ গত ছয় মাসে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৩৫৭টি মামলা হয়েছে৷ তাতে আসামি করা হয়েছে ৩৬ হাজার ৫০০ জনকে, এজাহারে নাম রয়েছে ১৩ হাজার ৭৩০ জনের৷''

মন্তব্য পাওয়া যায় না পুলিশের:

পুলিশ সদর দপ্তরের  এআইজি (মিডিয়া) মনজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বিশেষ অভিযান শেষ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে তার দপ্তরে যোগাযোগের পরামর্শ দেন৷ তিনি আর কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়েই ফোন কেটে দেন৷ এরপর তার দপ্তরে যোগাযোগ করা হলে কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করা হয়৷ 

ঢালাওভাবে বললে তো হবে না: মো. শহীদুল হক

গণভাবে মোবাইল ফোন চেক আনএথিক্যাল:

পুলিশের সাবেক প্রধান মো. শহীদুল হক বলেন, ‘‘বিশেষ অভিযানে সাধারণত পেন্ডিং ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়৷ আর মামলার কিছু আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ ওয়ারেন্ট বা মামলার বাইরে তো গ্রেপ্তার করা হয় না৷ আগে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা হলেও এখন আর ওই সুযোগ নেই৷ আমরা তো আগেই এই ধারায় গ্রেপ্তার বন্ধ করে দিয়েছি৷''

তার কথা, ‘‘বিএনপি অভিযোগ করবে৷ অনেক কিছু বলবে৷ কিন্তু ঢালাওভাবে বললে তো হবে না৷ তাদের তথ্য প্রমাণ দিয়ে অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘পুলিশ তদন্তের প্রয়োজনে আসামির মোবাইল ফোন চেক করতে পারে৷ সন্দেহ হলেও তথ্য পেতে চেক  করতে পারে৷ কিন্তু গণভাবে মেবাইল ফোন চেক করবে, নাগরিকদের প্রাইভেসি নষ্ট করবে৷ এটা তারা পারে না, এটা আনএথিক্যাল৷''