বিশাল পরাজয়ে বাস্তবতায় ফিরলো বাংলাদেশ
২৮ মে ২০২১মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদকে শেষদিকে বড্ড অসহায় দেখাচ্ছিল। ফিল্ডিংয়ে ক্যাচ মিসের প্রায়শ্চিত্ত করেছেন দারুণ আরেক ক্যাচ ধরে। তা পূর্ণতা পেতো ব্যাট হাতে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যেতে পারলে। চেষ্টা তিনি করেননি, সে অভিযোগ করা যাবে না। কিন্তু দলের ‘যুদ্ধ' কী আর একা জেতা যায়! যায় না বলেই শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন আউট হন, তখন নিজের নামের পাশে আরেকটি ফিফটি যোগ হয় কেবল। বাংলাদেশের আরেকটি জয় আসেনি তাতে।
টসজয়ী শ্রীলঙ্কার ৬ উইকেটে ২৮৬ রানের পুঁজি। সেটি টপকানো যে সহজ হবে না, প্রথম দুই ম্যাচের স্কোরকার্ডেই ছিল এর ইঙ্গিত। আগে ব্যাটিং করেই তো আড়াইশ'র আশপাশ পর্যন্ত যেতে পারে স্বাগতিকরা! সেখানে মিরপুরের উইকেটে তিনশ ছুঁইছুঁই রান তাড়া করে জেতা চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। তাই বলে ১৮৯ রানে অলআউট হয়ে যাবে বাংলাদেশ!
অত বড় রান তাড়া করাটা চ্যালেঞ্জিং তো বটেই। তবু আশা ছিল তামিম ইকবালের দলের। নিজেদের ব্যাটিং শক্তির গভীরতায়; শ্রীলঙ্কার বোলিং লাইনে তিন অভিষিক্ত বোলারের উপস্থিতিতেও। কিন্তু লঙ্কানদের পুরনো সৈনিক দুষ্মন্ত চামিরার গতির ঝড়ে সব এলোমেলো। ৯ ওভারে মাত্র ১৬ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নিয়ে স্বাগতিকদের একেবারে গুঁড়িয়ে দেন তিনি।
অবশ্য তাতে দায় এড়াতে পারবেন কি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা? অনেক আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে লিটন দাসের জায়গায় একাদশে সুযোগ পেলেন নাঈম শেখ। ১ রান করে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে তার দায়িত্ব শেষ। রানখরায় থাকা সাকিব (৪) শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ফেরেন প্যাভিলিয়নে। তামিম ইকবালকে (১৭) কিছুটা থিতু মনে হচ্ছিল। চামিরার তৃতীয় শিকারে পরিণত হন উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। যদিও রিভিউ নিয়েছিলেন। যদিও ব্যাটের সঙ্গে বলের স্পর্শ হবার পাশাপাশি উইকেটেও ব্যাট লাগে। কিন্তু আউটের সিদ্ধান্ত পাল্টানোর মতো যথেষ্ট প্রমাণ থার্ড আম্পায়ার পাননি।
তামিমের অসন্তোষের সমান্তরালে তখন বাংলাদেশ দলে ভয়ও দানা বেঁধে ওঠে ক্রমশ। ১০ ওভারের মধ্যে ২৯ রান তুলতেই যে তিন উইকেট হাওয়া!
তবুও মুশফিক ছিলেন। আগের দুই ম্যাচে ব্যাট হাতে ত্রাণকর্তা ছিলেন যিনি। এদিনও খেলছিলেন আস্থা নিয়ে। সঙ্গে মোসাদ্দেক হোসেনও যেন ক্যারিয়ার বাঁচানোর ‘লাইফ লাইন' কাজে লাগাতে মরিয়া। দুজনের ৫৬ রানের জুটিতে বিপর্যয় সামলানোর পথ তৈরি হয় কিছুটা। তবে জয়ের পথের দেখা মেলেনি। কারণ, বল খরচে সময় যে বড্ড বেশি নিচ্ছিলেন তারা!
আস্কিং রেটের সঙ্গে পাল্লা দেবার চেষ্টায় সম্ভাবনাময় ইনিংস দুটোর অপমৃত্যু। বেরিয়ে মারতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ মুশফিক (৫৪ বলে ২৮)। আর ফিফটি পেরোনার পর রিভার্স সুইপে মৃত্যুঘন্টা বাজে মোসাদ্দেকের (৭২ বলে ৫১)। আর আফিফ হোসেনও (১৭ বলে ১৬) যখন শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান, ম্যাচের গন্তব্য লেখা হয়ে যায় এক রকম।
মাহমুদউল্লাহর ৬৩ বলে ৫৩ রান হারের ব্যবধানই কমায় কেবল। সেটিও আর কমল কতটা! ৪২.৩ ওভারে ১৮৯ রানে অলআউট হয়ে ৯৭ রানের বিশাল পরাজয় বাংলাদেশ।
যে পরাজয়ের পথটা লঙ্কান অধিনায়ক কুশাল পেরেরা তৈরি করেছেন বলে স্কোরকার্ড সাক্ষ্য দেবে। কিন্তু যারা খেলা দেখেছেন, তারা তো জানেন, তাতে বাংলাদেশের ফিল্ডারদের দায়ও কম নয়। তাদের সৌজন্যেই যে সেঞ্চুরিটা পেয়েছেন পেরেরা!
৬৭ রানে মুস্তাফিজ, ৭৯ রানে আফিফ আর ৯৯ রানে মাহমুদ উল্লাহ তিনবার ছাড়েন লঙ্কান অধিনায়কের ক্যাচ। ৪০তম ওভারে শরিফুল ইসলাম যখন তাকে আউট করেন, পেরেরার নামের পাশে ১২২ বলে ১২০ রানের ঝকঝকে ইনিংস। দলের রান ৪ উইকেটে ২১৬। যেখান থেকে তিনশ পেরিয়ে যাওয়াটা ছিল খুবই সম্ভব।
শেষ দিকে ভালো বোলিং-ফিল্ডিংয়ে তা হতে দেয়নি বাংলাদেশ। কিন্তু সর্বনাশের আগুন তো আগেই জ্বেলে দিয়েছিলেন তারা। তা নেভানোর জন্য যে আগুনে ব্যাটিংয়ের দাবি, সেটিও মেটাতে পারেননি স্বাগতিকরা।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজ জয় এবং ২০২৩ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে রীতিমতো আকাশে উড়ছিল বাংলাদেশ। তৃতীয় ওয়ানডের এই অসহায় আত্মসমর্পন বাংলাদেশকে হয়ত আবার ফেরালো বাস্তবতার জমিনে। আর তা রীতিমতো আছাড় দিয়ে!